আশ্চর্য! বিড়বিড় করে বলল রবিন।
হ্যাঁ, মাথা ঝোকালেন লিসা রোজার। আশ্চর্যই, এবং ভয় পাওয়ার মত। স্বপ্নে যে ঘুরে বেড়ায়, ঘুম থেকে উঠে সে-ও ভয় পায়, তাকে যারা ঘুরতে দেখে, তারাও।
টমির ছায়া দেখে ভয় পান মিস্টার অলিভার, সন্দেহ নেই, বলল রবিন। কিন্তু ঘুম থেকে উঠে টমি ভয় পায় বলে তো মনে হয় না!
তার কেসটা একটু আলাদা। যা শুনলাম, এই ঘুরে বেড়ানো রীতিমত চর্চাই করে সে।
তার মানে, ঘাবড়ে গেছে রবিন। তাকে ঠেকানর কোন উপায়ই নেই মিস্টার অলিভারের?
না। তবে অলিভারের ভয় পাওয়ার কিছু নেই। এসব ঘুরে বেড়ানো লোকেরা ক্ষতিকর নয়। ছায়া শরীর নিয়ে কারও কোন ক্ষতি করতে পারে না এরা। শুধু দেখা বা শোনার ক্ষমতা থাকে তখন।
তুমি বলছ, কোন জিনিস ছুঁতে পারে না ওরা?
হয়ত ছুতে পারে, বললেন লিসা রোজার। তবে নড়াতে পারে না। মনট্রোজের মহিলার কথাই ধরা যাক, সাধারণ একটা খাম খুলতে পারেনি সে।
সুতরাং, ছায়া শরীরে ঘুরে বেড়ানর সময় কোন কিছু ধরতে, বা চুরি করতে পারবে না টমি গিলবার্ট?–
আমার তো মনে হয়, না।
টমি গিলবার্ট ভারতে যেতে চাইছে, খবরটা জানাল রবিন। ওখানে গিয়ে ধ্যানতত্ত্ব নিয়ে প্রচুর গবেষণা আর চর্চা করার ইচ্ছে।
মাথা ঝোঁকালেন প্রফেসর। শুনেছি, ভারতীয় ঋষিরা নাকি এসব বিদ্যায় ওস্তাদ। আমাদের দেশে অবশ্য.ওসব গালগল্প বিশ্বাস করে না লোকে। তবে, পুরো ব্যাপারটা একেবারে ভিত্তিহীন হয়ত নয়। সম্মোহন কিংবা ভেন্ট্রিলোকুইজম-এ তো বিশ্বাস করে লোকে। আজকাল ছায়া শরীর নিয়েও গবেষণা হচ্ছে, বিশ্বাস করতে
আরম্ভ করেছেন কিছু কিছু বিজ্ঞানী।
বুঝলাম, তুমিও বিশ্বাস কর, বলল রবিন। কিন্তু পাদ্রীর ভূতের ব্যাপারটা কি? ওটা বিশ্বাস কর?
কাঁধ ঝাঁকালেন লিসা রোজার। বিশ্বাস করার মত কোন প্রমাণ পাইনি এখনও। যেখানেই ভূত আছে শুনেছি, ছুটে গিয়েছি। রাত কাটিয়েছি। কিন্তু আজ অবধি কোন ভূতের ছায়াও নজরে পড়েনি। এই বিশ্বাস কেন জন্মাল লোকের মনে, সেটা নিয়ে অনেক পড়াশোনা করেছি, অনেক ভেবেছি। কোন কূল-কিনারা পাইনি। শেষে দুত্তোর বলে হাল ছেড়ে দিয়েছি। সেই সৃষ্টির শুরু থেকেই সম্ভবত, ভূত বিশ্বাস করে আসছে লোকে। কেন? কে জানে!
.
১৫.
রবিন বেরিয়ে যাবার পর পরই সেন্ট্রাল হাসপাতালে ফোন করল কিশোর। জানল, জ্যাকবসকে হ্যামলিন ক্লিনিকে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। দিন দুয়েক তাকে পর্যবেক্ষণে রাখতে চান ডাক্তাররা। লারিসা ল্যাটনিনা এখনও সেন্ট্রাল হাসপাতালে রয়েছে। প্রথমে তার সঙ্গে কথা বলা স্থির করল কিশোর। বেরিয়ে পড়ল।
সহজেই কেবিনটা খুঁজে বের করল কিশোর। খাটের ওপর আধশোয়া হয়ে আছে লারিসা। বালিশে হেলান দিয়ে জানালা দিয়ে বাইরে চেয়ে আছে। বিষণ্ণ।
আরে! দরজায় সাড়া পেয়েই ফিরে তাকিয়েছে লারিসা। তুমি মিস্টার অলিভারের মেহমান না?
হ্যাঁ, বলল কিশোর। কিশোর পাশা। কেমন লাগছে এখন?
ভাল না খারাপও না, মুখ বাঁকাল লারিসা। তবে বিষ খাওয়াতে চেয়েছিল আমাকে কেউ, ভাবলেই মনটা খারাপ হয়ে যায়। তাছাড়া খিদে। জাউ আর দুধ ছাড়া কিছু খেতে দেয় না ডাক্তাররা, বিরক্ত ভঙ্গিতে পায়ের ওপর ফেলে রাখা কম্বলটায় লাথি লাগল সে।একটা উপদেশ দিচ্ছি, কক্ষণো বিষ খেও না!
চেষ্টা করব না খেতে! হাসল কিশোর। ভাল করে তাকাল লারিসার দিকে। স্বাস্থ্য খারাপ হয়ে গেছে। ঠোঁটের কোণে কেমন এক ধরনের ঘা, সাদা সাদা। কি বিষ ছিল, জেনেছেন?
জিজ্ঞেস করেছিলাম, লারিসার কণ্ঠে বিরক্তি। সাধারণ কি একটা কেমিক্যালের কথা বলল ওরা, নামটা মনে করতে পারছি না এখন। তবে আর্সেনিক কিংবা স্ট্রিকনিন নয়, এটা শিওর।
বেঁচে গেছেন সেজন্যেই, মাথা দোলাল কিশোর। স্ট্রিকনিন খেলে আর এখন এখানে থাকতেন না।
জানি! এরপর থেকে চকলেট খাওয়াই বাদ দেব কিনা, ভাবছি, বিষণ্ণ হাসি হাসল লারিসা।
কোথা থেকে এসেছে ওগুলো, জানতে পেরেছে পুলিশ?
না। সাধারণ কেমিক্যাল, যে-কোন কেমিস্টের দোকান থেকে কেনা যায়। আর চকলেট তো একটা বাচ্চা ছেলেও কিনতে পারে।
সারা ঘরে নজর বোলাল কিশোর। ছোট একটা আলমারির ওপর রাখা ফুলদানীতে একগোছা ফুলের ওপর এসে থামল দৃষ্টি। কারও উপহার?
মাথা ঝোকাল লারিসা। এক বান্ধবী দিয়েছে। একই জায়গায় কাজ করি আমরা। রোজই এক গোছা করে দিয়ে যায়। কথা বলে যায় খানিকক্ষণ।
লোকের সঙ্গে মেশামেশি ভালই আছে আপনার, না?
হেসে ফেলল লারিসা। পুলিশের মত জেরা শুরু করে দিয়েছ। পুরো সকালটা আজ জ্বালিয়ে খেয়েছে। প্রশ্নের পর প্রশ্ন করে গেছে। জানার চেষ্টা করেছে, আমার কোন শত্রু আছে কিনা। যত্তোসব! লোকের সাথেও নেই আমি, পাঁচেও নেই, আমার শত্রু থাকতে যাবে কেন?
আমারও তাই ধারণা, মাথা ঝোকাল কিশোর। হ্যাঁ, মিস্টার অলিভার আপনাকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। আবার তার বাড়িতে ফিরে গেলে তিনি খুশি হবেন।
খুব ভাল লোক, বলল লারিসা। আমি খুব পছন্দ করি। ভাল লোকের ওপরই যতরকম অত্যাচার। চোর-ছ্যাচোড়-বদমাশ—হ্যাঁ, ভাল কথা, কুকুরটা কি এসেছে তার?
স্থির হয়ে গেল হঠাৎ কিশোর। কুকুর!
হ্যাঁ। ওটা এলে চোরের উপদ্রব কমবে।
মিস্টার অলিভার বলেছেন?
না, মাথা নাড়ল লারিসা। মিসেস ডেনভার।–কবে যেন বলল, কবে যেন—হ্যাঁ হ্যাঁ, গত শনিবারে। পুলে সাঁতার কাটছিলাম, কিনারে বসে ডাকপিয়নের অপেক্ষা করছিল মহিলা, আর বকর বকর করছিল। মিস্টার অলিভার কুকুর আনাচ্ছেন জেনে ম্যানেজারের খুব দুশ্চিন্তা। বলেছে আমাকে। আমি বললাম, রাজ্যের যত বেড়ালকে যখন সইতে পারছেন, একটা কুকুর সইতে পারবেন না কেন?