আমারও তাই ধারণা। ও নিশ্চয় টমি গিলবার্ট।
সামনে ঝুঁকলেন লিসা রোজার। বলছিস, দুবার ছায়াটা দেখেছে কিশোর। এবং দুবারই টমি তার ঘরে সেই সময় ঘুমিয়েছিল?
হ্যাঁ, ছিল।
মৃদু হাসলেন ডক্টর রোজার। চমৎকার! নীরবে ঘুরে বেড়াতে ভালবাসে ছেলেটা!
মিস্টার অলিভারের কাছে ব্যাপারটা মোটেই চমৎকার নয়, গম্ভীর হয়ে গেছে। রবিন। কিভাবে করে টমি?
উঠে গিয়ে ফাইল ক্যাবিনেট খুললেন লিসা রোজার। ফিতে বাধা কয়েকটা ফাইল বের করে এনে রাখলেন ডেস্কে। আমার মনে হয়, ঘুমের ঘোরে ছায়া শরীরে বেরিয়ে আসে সে। ঘুরে বেড়ায়।
হাঁ হয়ে গেল রবিন।
আবার চেয়ারে বসলেন প্রফেসর রোজার। একটা ফাইল খুললেন। ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা চালিয়েছি আমরা এ-ব্যাপারে, তবে খুব কমই সে-সুযোগ পাওয়া যায়। এসব যারা করে, লোককে জানিয়ে করে না। ল্যাবরেটরিতে আসা তো দূরের কথা। অনেক খোঁজখবর নিয়ে, এমন এক-আধজনকে বের করে, অনেক বলে কয়ে নিয়ে আসতে হয়। কারও কারও ধারণা, অন্য কাউকে জানালে তার এ ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যাবে। গত বছর এসেছিল এক মহিলা, সাধারণ এক গৃহবধূ। মনট্রোজে থাকে। ওর নাম বলতে চাই না।
মাথা ঝোকাল রবিন।
মহিলার ব্যাপারটা একটু অন্যরকম, বললেন আবার লিসা রোজার। ঘুমের ঘোরে স্বপ্ন দেখে এবং সেটা সত্যি।
তারমানে, আগ্রহে সামনে ঝুঁকল প্রফেসর রস। তুমি বলতে চাইছ, মহিলা যা দেখে, সেটা পরে সত্যি হয়?
ঠিক তা নয়। কয়েকটা উদাহরণ দিচ্ছি, ফাইলের কাগজে চোখ বোলালেন লিসা রোজার। ঘুমের ঘোরেই আকনে তার মায়ের জন্মদিনের উৎসবে হাজির হয়েছিল ওই মহিলা। সে সবাইকে দেখেছিল, তাকে কেউ দেখেনি। পরিষ্কার বলেছে সে, কি কি দেখেছে। তার দুই বোন সেদিন সেই উৎসবে হাজির ছিল। মাঝারি সাইজের একটা কেক, সাদা মাখনের একটা প্রলেপ, তার ওপর লাল চিনি। দিয়ে লেখা ছিল মহিলার মায়ের নাম। কটা মোম কোন কোন রঙের ছিল, ঠিক ঠিক বলে দিয়েছে সে। রাতে স্বপ্ন দেখেছে। সকালে উঠে তার স্বামীকে বলল ব্যাপারটা। হেসে উড়িয়ে দিল স্বামী। দিন কয়েক পরেই একটা চিঠি আর কয়েকটা ছবি এল। মহিলার মায়ের কাছ থেকে। জন্মদিনের উৎসবে তোলা, রঙিন-ফটোগ্রাফ। যা যা স্বপ্নে দেখেছিল মহিলা, ঠিক মিলে গেল ছবির সঙ্গে। অস্বস্তিতে পড়ে গেল স্বামী বেচারা। এরপর আরও কয়েকটা ঘটনা ঘটল ওরকম। কোথাও গিয়েছে, হয়ত স্বপ্নে দেখে মহিলা। পরে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, তার বর্ণনার সঙ্গে ঠিক মিলে যায় সব, অথচ ওই জায়গায় সশরীরে কখনও যায়নি মহিলা। রীতিমত চিন্তিত হয়ে পড়ল। স্বামী। খোঁজখবর নিয়ে শেষে একদিন আমার কাছে নিয়ে এল স্ত্রীকে।
ল্যাবরেটরিতে মহিলার ওপর পরীক্ষা চালিয়েছ? জিজ্ঞেস করল রবিন।
হ্যাঁ। কয়েকদিন ল্যাবরেটরির একটা ঘরে রেখে দিয়েছিলাম মহিলাকে। একটা মাত্র দরজা ঘরটার। রাতে বন্ধ করে দিতাম। চোখ রাখতাম বিশেষভাবে তৈরি। একটা ফোকর দিয়ে। ওখান দিয়ে পুরো ঘরটাই ভালমত দেখা যায়। প্রথম রাতে। মহিলা ঘুমিয়ে পড়লে পা টিপে টিপে তার ঘরে ঢুকলাম। দেয়াল-তাক আছে ওঘরে কয়েকটা। সবচেয়ে ওপরের তাকে রাখলাম মুখবন্ধ একটা খাম! ভেতরে এক টুকরো কাগজে দশ অঙ্কের একটা সংখ্যা লিখেছি। সংখ্যাটা আমি ছাড়া আর কেউ জানে না। খামটা রেখে দরজা বন্ধ করে বেরিয়ে এলাম। চোখ রাখলাম ফোকরে। যতক্ষণ ঘুমিয়েছিল মহিলা, নড়িনি ওখান থেকে। একবারও ঘুম ভাঙেনি তার। সারারাতে। সকালে উঠে তাকে জিজ্ঞেস করলাম, ঘরে কি কি আছে। প্রথমেই খামটার কথা বলল মহিলা। রঙ, আকার সব ঠিক ঠিক। তবে ভেতরে কি আছে, বলতে পারল না। পরের রাতে মহিলা ঘুমিয়ে পড়লে তার অজান্তে আবার রেখে এলাম খামটা, আরেকটা তাকে। খামের ভেতরের কাগজটা সেদিন বের করে নিয়েছি, ওটা রাখলাম খামের ওপরে, নাম্বার লেখা পিঠটা ওপরের দিকে। ভোরে উঠে জিজ্ঞেস করতেই কাগজটার কথা বলল মহিলা। ঠিক বলে দিল নাম্বারটা।
সেদিনও সারারাত চোখ রেখেছিলে ওর ওপর? বিশ্বাস করতে পারছে না যেন। রবিন। রাতে একবারও ঘুম ভাঙেনি মহিলার? কোন ফাঁকে উঠে দেখে নেয়নি তো নাম্বারটা?
আমি নিজে চোখ রেখেছি ফোকরে, বললেন প্রফেসর। মুহূর্তের জন্যে চোখ সরাইনি। একবারও ঘুম ভাঙেনি মহিলার, বিছানা ছেড়ে ওঠার তো প্রশ্নই ওঠে না। তবে, নিশ্চয় তার শরীরের খোলস ছেড়ে বেরিয়ে পড়েছিল ছায়া শরীর। ঘুরে বেড়িয়েছিল সারা ঘরে।
কি যেন ভাবছে রবিন। বলল, কিন্তু এতে কিছুই প্রমাণ হয় না!
নিশ্চয় প্রমাণ হয়, ছায়া শরীরে মিস্টার অলিভারের ঘরে ঢুকেছিল টমি, জবাবটা দিলেন ডক্টর রস। মান্দালার কথা জেনেছে সে ওভাবেই।
কিন্তু তার ছায়া দেখা গেছে, প্রতিবাদ করল রবিন। মহিলার দেখা যায়নি।
বেশ, বললেন লিসা রোজার। আরেকটা ঘটনার কথা বলছি। অরেঞ্জে বাস করে এক লোক, আমার এক রোগী। সারাজীবন স্বপ্নে যা যা দেখেছে, সব সত্যি ঘটেছে। মনট্রোজের ওই গৃহবধূর মত। তবে, মহিলার সঙ্গে একটা পার্থক্য আছে, তার ছায়া শরীর দেখা গেছে, আবার ফাইল দেখলেন প্রফেসর। হলিউডে লোকটার এক বন্ধু আছে। আসল নাম বলব না, ধরে নিই, তার নাম জোনস। একরাতে, জোনস তার ঘরে বসে বই পড়ছে। হঠাৎ জোরে ঘেউ ঘেউ করে উঠল। তার কুকুরটা। জোনস ভাবল, নিশ্চয় আঙিনায় চোর ঢুকেছে। দেখতে চলল সে। হলঘরেই দেখা হয়ে গেল অরেঞ্জে বাস করে যে, সে বন্ধুর সঙ্গে। এতরাতে বন্ধুকে দেখে অবাক হল জোনস। কেন এসেছে, জানতে চাইল। কোন কথা বলল না বন্ধু। নিঃশব্দে দোতলার সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠে গেল। বোকা হয়ে গেল যেন জোনস। শেষে দোতলার সিঁড়ি বেয়ে সে-ও উঠে এল। কোথাও নেই তার বন্ধু। একেবারে হাওয়া। তখুনি অরেঞ্জে ফোন করল জোনস। বাড়িতেই পাওয়া গেল বন্ধুকে। কয়েকবার রিঙ হবার পর ফোন ধরেছে। ঘুমজড়িত গলা, স্পষ্ট। কেন ফোন করেছে, জানতে চাইল বন্ধু। জানাল জোনস। বন্ধু, আশ্চর্য হল। সে-ও নাকি স্বপ্ন দেখছিল জেনসকে দেখেছে, শোবার ঘরে বসে বই পড়ছে। কুকুর ডেকে উঠল। জোনস এসে ঢুকল হলঘরে। বন্ধু এত রাতে কেন এসেছে জিজ্ঞেস করল। সিঁড়ি দিয়ে ওপরে উঠে গেল সে। আর কিছু মনে নেই তার। এর পর পরই টেলিফোন ঘুম ভাঙিয়ে দিয়েছে।