আজ দিনের শিফটে কাজ করব, বলল টমি। আমার এক কলিগ অসুস্থ। তার কাজটা চালিয়ে নিতে হবে।
আমি জানি, আপনার ঘরে নেই ছায়াশ্বাপদ, শান্ত কণ্ঠে বলে উঠল কিশোর। এ-বাড়ির কোন ঘরেই নেই।
একটু যেন হতাশ মনে হল টমিকে। কাঁধ ঝাঁকাল। ঘুরে গিয়ে ঢুকে পড়ল নিজের ঘরে।
এত নিশ্চিত হচ্ছ কি করে? জানতে চাইলেন অলিভার।
সহজ, বলল কিশোর। তাহলে মিসেস ডেনভারের শকুনি-চোখে এড়াতো না জিনিসটা। কার ঘরে কোথায় কোন সুতোটা আছে, আমার মনে হয় তা-ও তার জানা। নকল চাবি বানিয়ে মালিকের ঘরে ঢোকার যার সাহস আছে, ভাড়াটেদের ঘরে সুযোগ পেলেই ঢুকবে সে, এতে কোন সন্দেহ নেই। সবারই বাক্স-পেটরা ড্রয়ার ঘাটে সে, আমি শিওর।
হ্যাঁ, ঠিকই বলেছ।
তবে, এর মানে এই নয়, কাছাকাছি নেই মূর্তিটা। নইলে, এখান থেকে লোকজন সরাতে চাইছে কেন চোর? গতকাল মিস ল্যাটনিনাকে বিষ খাওয়াল। আজ বোমা ফাটাল মিসেস ডেনভারের গাড়িতে। মিস্টার জ্যাকবসের ঘরে আগুন লাগিয়ে তাকে খেদাল। ভয়েই পালাল বেড়াল-মানব-মিস্টার অলিভার, জ্যাকবসের সঙ্গে কথা বলতে চাই আমি। ও হয়ত কিছু জানাতে পারবে। কি করে আগুন। লাগল, হয়ত কিছুটা আলোকপাত করতে পারবে।
ভ্রূকুটি করল রবিন। তোমার ধারণা, ওই আগুন লাগা নিছক দুর্ঘটনা নয়?
সম্ভবত।
তাহলে? কে লাগিয়েছে আগুন? টমি? সবার আগে ও-ই হাজির হয়েছে। ওকে। আসতে দেখেনি কেউ। হয়ত, দেয়াল গলে জ্যাকবসের ঘরে ঢুকে পড়েছিল। আগুন। লাগিয়ে আবার দেয়াল গলেই বেরিয়ে এসেছে। তারপর যেন বাঁচাচ্ছে জ্যাকবসকে, এরকম অভিনয় করে গেছে।
দূর! প্রতিবাদ করল মুসা। অতিকল্পনা!
ব্যাপারটা প্রমাণ করে ছাড়ব আমি, দৃঢ় কণ্ঠে বলল রবিন। ডক্টর রোজারের সঙ্গে কথা বলব। ডক্টর লিসা রোজারকে চেনে কিশোর আর মুসাও। রবিনের দূর সম্পর্কের খালা। রুক্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারাসাইকোলজির প্রফেসর, হেড অভ দ্য ডিপার্টমেন্ট। প্রেততত্ত্ব আর ডাকিনী বিদ্যার ওপর প্রচুর পড়াশোনা আছে, ওসবের ওপর গবেষণা করছেন এখন। আগুন লাগাক বা না লাগাক, দেয়াল গলে যে টমিই আসে-যায়, এতে কোন সন্দেহ নেই। কিভাবে কাজটা করে সে, জানতে হবে।
ওসব ভূত-প্রেতের মধ্যে আমি নেই, বলল মুসা। বাস্তব কাজ করব। টমিকে অনুসরণ করব আজ দুপুরে। কোথায় যায়, দেখব। সত্যিই বাজারে কাজে যায়। কিনা, দেখতে হবে। আর, এনড্রুর ব্যাপারেও খোঁজখবর নেব। দেখে আসব, সত্যি উইলশায়ার ইন-এ গিয়েছে কিনা।
আমি যাব হাসপাতালে, ঘোষণা করল কিশোর। কয়েকটা হাসপাতাল ঘুরে আসতে হবে হয়ত কিছু তথ্য দরকার। আশা করছি, ল্যাটনিনা আর জ্যাকবসের কাছ থেকে জানা যাবে কিছু।
হঠাৎ মনে পড়ে গেল যেন অলিভারের, আরে! আমার ব্যাংকে যাওয়া! তোমাদের একজন যাবে বলেছিলে। এত টাকা একা আনার সাহস আমার নেই, এখন!
যাব, তবে আগে কাজগুলো সেরে আসি, বলল কিশোর।
ততক্ষণ একা থাক! একটা লোক নেই এতবড় বাড়িটায়! আমি পারব না! আঁতকে উঠেছেন অলিভার।
আপনার কোন বন্ধু নেই?
ওই মিকো ইলিয়ট, সে-ই কাছাকাছি থাকে।
তাকেই ডাকুন। বসে বসে গল্প করুন দুজনে। আমরা বেশি দেরি করব না।
আবার বসার ঘরে ঢুকল চারজনে। ফোন করতে গেলেন অলিভার। কয়েক মিনিটের মধ্যেই চলে আসবে, কথা দিল মিকো।
দ্রুত তৈরি হয়ে নিল রবিন। বেরিয়ে এল ঘর থেকে। রুক্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ে চলল।
মিনিট বিশেক পরেই বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে পৌঁছুল রবিন। প্রফেসর লিসা রোজারকে তার অফিসেই পাওয়া গেল। সুন্দর চেহারা। বয়েস চল্লিশ মত হবে।
টাকমাথা, গোলগাল চেহারার এক প্রৌঢ়ের সঙ্গে কথা বলছেন লিসা রোজার, রবিনের সাড়া পেয়ে চোখ তুলে তাকালেন। আরে, রবিন! তুই হঠাৎ!…আয়, আয়!
ডেস্কের সামনে একটা চেয়ার টেনে নিয়ে বসে পড়ল রবিন। কেমন আছ, খালা?
ভাল। তোরা সব কেমন? তোর মা কেমন আছে?
ভাল। তারপর? কি মনে করে? খালাকে দেখতে আসার সময় হল তোর?
খালা, একটা কাজ। মানে, ইয়ে… দ্বিধা করছে রবিন। টাকমাথা ভদ্রলোকের দিকে তাকাল। একটা কথা…
ইনি প্রফেসর ডোনাল্ড রস, পরিচয় করিয়ে দিলেন মহিলা। অ্যাপলজির প্রফেসর। ডোনাল্ড, ও শেলি, মানে আমার বোনের ছেলে। ওর কথা বলেছি তোমাকে। গোয়েন্দাগিরির শখ।
তাই নাকি? খুব ভাল শখ, হাত বাড়িয়ে দিলেন প্রফেসর রস।
প্রফেসরের সঙ্গে হাত মেলাল রবিন।
হ্যাঁ, কি বলছিলি, বল, বললেন ডক্টর রোজার।
খালা, একটা উদ্ভট ঘটনা, দ্বিধা যাচ্ছে না রবিনের। মানে ভূতুড়ে…
এত দ্বিধা করছিস কেন? ভূতুড়ে ব্যাপার-স্যাপার নিয়েই আমার কারবার, জানিসই তো, ডেস্কে পেপারওয়েট চাপা দেয়া একটা চিঠি দেখালেন মহিলা। এই যে চিঠিটা, ডুবুক থেকে এক লোক পাঠিয়েছে। তার বোনের ভূত নাকি তাড়া করে। তাকে আজকাল। মজার ব্যাপার হল, তার কোন বোনই নেই, ছিলও না কখনও।
যতসব বদ্ধ পাগল নিয়ে তোমার কারবার, লিসা, চেয়ারে হেলান দিলেন রস। ইয়াংম্যান, ভূতের কথা কি যেন বলছিলে?
অলিভারের বাড়িতে ভূতুড়ে যা যা ঘটেছে, সব খুলে বলল রবিন। গির্জায় পাদ্রীর প্রেতাত্মা দেখেছে কিশোর, সে কথাও বাদ দিল না।
হুমম! গম্ভীর হয়ে মাথা ঝোঁকালেন লিসা রোজার। আমি গিয়েছিলাম ওই গির্জায়।
তুমি শুনেছ প্রেতাত্মার কথা? জিজ্ঞেস করল রবিন।
শুনেছি, বললেন লিসা রোজার। যেখানেই এই ধরনের গুজব শুনি, যাই। সরেজমিনে তদন্ত করি। তোর বন্ধু কিশোর যাকে দেখেছে, তার সঙ্গে বছর তিনেক আগে মারা যাওয়া পাদ্রীর নাকি মিল আছে। লম্বা সাদা চুল, বৃদ্ধ-। খোঁজ নিয়ে জেনেছি, শুধু হাউসকীপার তামারা ব্রাইসই দেখেছে ভূতটাকে। তামারার ব্যাপারে খোঁজখবর করেছি। আয়ারল্যাণ্ডের এক ছোট্ট শহর ডুঙ্গালওয়ে থেকে এসেছে সে। ওখানকার গির্জায় ভূত আছে, অনেকেই বলে। ভূতের ব্যাপারে রীতিমত বিখ্যাত জায়গাটা। বহুদিন আগে নাকি কোথায় যাবার জন্যে জাহাজে চেপেছিল এক পাদ্রী। সাগরে রহস্যজনকভাবে হারিয়ে যান তিনি। লোকে বলে, তারই প্রেতাত্মা এসে ঠাই নিয়েছে ডুঙ্গালওয়ে গির্জায়। গিয়েছিলাম। কয়েক রাত কাটিয়েছি ওখানে। কোন ভূত-টুত আমার নজরে পড়েনি। ওখান থেকে এসেছে তো, গির্জায় পাদ্রীর ভূত থাকবেই, বদ্ধমূল ধারণা জন্মে গেছে হয়ত তামারা ব্রাইসের। যাই হোক, অলিভারের। ঘরে ঢোকে যে ছায়াটা, ওটা পাদ্রীর প্রেতাত্মা নয়।