কাজের ঘরটা দেখতে পারি? বলল কিশোর।
নিশ্চয়। এস।
মিস্টার অলিভারের পেছন পেছন ছোট একটা হলঘরে এসে ঢুকল কিশোর। ওটা পেরিয়ে এসে ঢুকল বড় আরেকটা ঘরে। স্লান আলো জ্বলছে। অসংখ্য বুকশেলফ বইয়ে ঠাসা। বড় একটা পুরানো আমলের টেবিল। কয়েকটা চামড়া মোড়া পুরু গদিটাকা চেয়ার। ঘরের এক প্রান্তের দেয়ালে কয়েকটা জানালা, ওটা বাড়ির পেছন দিক। পর্দা ফাঁক করে তাকাল কিলোর। কাছেই গির্জাটা। অর্গান থেমে গেছে, ছেলেমেয়েদের গলাও কানে আসছে না আর। বিশেষ ধর্মীয় অনুষ্ঠান শেষ হয়ে গেছে নিশ্চয়।
হলঘরের ভেতর দিয়ে ছাড়া এ ঘর থেকে বেরোনর আর কোন দরজা নেই, বললেন অলিভার। কোনরকম গোপন প্রবেশ পথ নেই। বহু বছর ধরে আছি এ বাড়িতে, তেমন কোন পথ থাকলে আমার অন্তত অজানা থাকত না।
কতদিন ধরে ঘটছে এটা? প্রশ্ন করল কিশোর। এই যে ছায়ার উপস্থিতি?
কয়েক মাস। প্রথমে বিশ্বাস করতে চাইনি। ভেবেছি, ওসব আমার কল্পনা। কিন্তু আজকাল এত বেশি ঘটছে, আর ওটাকে কল্পনা বলে মেনে নিতে পারছি না।
অলিভারের দিকে চেয়ে আছে কিশোর, চিমটি কাটছে নিচের ঠোঁটে। ছায়ার উপস্থিতি সত্যিই বিশ্বাস করছেন বৃদ্ধ। অনেক অদ্ভুত ঘটনাই ঘটে এ-পৃথিবীতে! আপনমনেই বিড়বিড় করল গোয়েন্দাপ্রধান।
তাহলে কেসটা নিচ্ছ? হঠাৎ জিজ্ঞেস করলেন অলিভার। তদন্ত করছ এ ব্যাপারে?
অ্যাঁ! চমকে যেন বাস্তবে ফিরে এল কিশোর। ও হ্যাঁ–আগে আমার বন্ধুদের সঙ্গে আলাপ করতে হবে। এখুনি কোন কথা দিতে পারছি না। আগামীকাল সকালে। জানাব আপনাকে।
বিষণ্ণ ভঙ্গিতে মাথা ঝোঁকালেন বৃদ্ধ। এগিয়ে গেলেন দরজার দিকে। বেরিয়ে গেলেন।
এগোতে গিয়েও দ্বিধা করল কিশোর। পা বাড়িয়ে থেমে গেল হঠাৎ। ঘরের ছায়াঢাকা কোণে একটা বুকশেলফের পাশে নড়ে উঠেছে কিছু!
হাঁ করে চেয়ে আছে কিশোর। মুসা!
আমাকে ডাকছ? হলঘর থেকে মুসার কথা শোনা গেল।
মুসা! চেঁচিয়ে উঠল কিশোর। লাফ দিয়ে এগোল সুইচবোর্ডের দিকে।
এক সেকেণ্ড পরেই মাথার ওপরে জ্বলে উঠল উজ্জ্বল আলো। অন্ধকার দূর হয়ে। গেল ঘর থেকে। দরজার কাছ থেকে শোনা গেল মুসার কথা, কি হল?
তুমি-তুমি ওঘরে ছিলে, যখন আমি ডেকেছিলাম! প্রায় ফিসফিস করে বলল কিশোর।
হ্যাঁ। কেন? ভূত দেখেছ বলে মনে হচ্ছে?
মনে হল তোমাকে দেখলাম! আঙুল তুলে ঘরের কোণ দেখাল কিশোর। ওখানে। তুমিই যেন দাঁড়িয়েছিলে! জোরে জোরে মাথা নাড়ল। হয়ত চোখের ভুল! বুকশেলফের ছায়াই দেখেছি! বিমূঢ় মুসার পাশ কাটিয়ে অন্য ঘরে চলে এল
বসার ঘরে এসে ঢুকল কিশোর। আগামীকাল অবশ্যই যোগাযোগ করব আপনার সঙ্গে।
ঠিক আছে, কিশোরের দিকে না চেয়েই বললেন মিস্টার অলিভার। দরজার তালা খুললেন। পাশে সরে ছেলেদেরকে বেরোনর জায়গা করে দিলেন।
হঠাই কানে এল তীক্ষ্ণ শব্দটা। গাড়ির ইঞ্জিনের মিসফায়ারের মত। গুলির শব্দ?
প্রায় লাফিয়ে দরজার কাছে চলে এল মুসা। ব্যালকনির রেলিঙে পেট ঠেকিয়ে। দাঁড়াল। নিচে শূন্য চত্বর। বাড়িটার পেছনে শোনা যাচ্ছে লোকের চিৎকার। জোরে গেট বন্ধ হওয়ার আওয়াজ হল, পাথরের কোন সিঁড়িতে পায়ের শব্দ। দেখা যাচ্ছে না লোকটাকে এখান থেকে। বাড়ির পাশের সরু একটা গলিপথ দিয়ে ছুটে চত্বরে বেরিয়ে এল একটা মূর্তি। গায়ে কালো উইণ্ডব্রেকার, কালো স্কি-হুঁডে ঢাকা মাথা। সুইমিং পুলের পাশ দিয়ে ছুটে গিয়ে সামনের গেট পেরিয়ে রাস্তায় নামল।
সিঁড়িগুলো যেন উড়ে টপকালো মুসা। গেট পেরিয়ে সিঁড়ি বেয়ে সবে পথে নেমেছে, সামনে এসে দাঁড়াল একজন পুলিশ। চত্বরের একপাশ ঘুরে বেরিয়ে এসেছে।
ব্যস, ব্যস, যথেষ্ট হয়েছে! বলল পুলিশ। থাম এবার, দোস্ত। নইলে গুলি খাবে।
চতুরের একই পাশ দিয়ে আরেকজন পুলিশ বেরিয়ে এল। ওর হাতেও রিভলভার। মুসা দেখল, দুটো নলই চেয়ে আছে ওর দিকে। পাথরের মত স্থির হয়ে গেল সে। ধীরে, অতি ধীরে মাথার ওপর তুলে আনছে দুই হাত।
.
০২.
ডিক, বলল প্রথম পুলিশটা, দুজনের মাঝে তার বয়েস কম। আমার মনে হয় ও না!
কালো উইণ্ডব্রেকার, হালকা রঙের ট্রাউজার! মুসার আপাদমস্তক দেখছে দ্বিতীয় পুলিশ। হয়ত স্কি-হুঁডটা খুলে ফেলে দিয়েছে!
ওই লোকটার কথা বলছেন? বলল মুসা। এদিক দিয়েই গেছে সে। গেট পেরিয়ে রাস্তায় নেমেছিল, আমি দেখেছি।
কিশোর আর রবিন পৌঁছে গেল। তাদের পেছনে দাঁড়ালেন মিস্টার অলিভার।
কাকে আটকেছেন আপনারা? হাঁপাতে হাঁপাতে বললেন বৃদ্ধ। গত আধঘণ্টা ধরে আমার ঘরে ছিল ছেলেটা।
সাইরেনের তীক্ষ্ণ শব্দ শোনা গেল। ছুটে আসছে পুলিশ পেট্রলকার।
এস, ডিক, বলল তরুণ পুলিশ অফিসার। খামোকা সময় নষ্ট করছি এখানে। দুঃখিত, মিস্টার অলিভার।
ছুট লাগাল আবার পুলিশ দুজন। ঠিক এই সময় খুলে গেল মিসেস ডেনভারের দরজা।
মিস্টার অলিভার, নাকী গলা শোনা গেল, কি অঘটন ঘটিয়েছে ছেলেগুলো?
চত্বরের ডানে আরেকটা ঘরের দরজা খুলে গেল। ছুটে বেরিয়ে এল এক তরুণ। চোখ ডলছে, সদ্য ঘুম থেকে উঠে এসেছে মনে হয়। ওর দিকে চেয়ে একটু যেন চমকে উঠল কিশোর।
ব্যাপারটা লক্ষ্য করল রবিন। ফিসফিস করে বলল, কি ব্যাপার?
কিছু না, চাপা গলায় বলল কিশোর। পরে বলব।
মিস্টার অলিভার, ঝাঁঝ প্রকাশ পেল মিসেস ডেনভারের গলায়, আমার। কথার জবাব দেননি! কি করেছে?