ঘুমের ঘোরে হয়ত অ্যাশট্রের ভেতরে রাখতে চেয়েছিল। ভেতরে না রেখে, বাইরেই ফেলেছে। ব্যস, ধরে গেছে আগুন। এটা স্বাভাবিক।
হ্যাঁ, মাথা ঝোকাল রবিন। খুব নাকি ঘুম পেয়েছিল তার। সারারাত ঘুমাতে পারেননি। দুপুর পর্যন্ত টানা ঘুম দেবেন, বলেছেন সকালে। হয়ত এসে সোফাতেই শুয়ে পড়েছিলেন, সিগারেট ধরিয়েছিলেন। তারপর আর চোখ খুলে রাখতে পারেননি।
কিন্তু ওকে মাঝের দরজায় পেয়েছি, বেডরুমের দিকে মুখ। সোফায় ঘুমোলে, ঘুম থেকে উঠে বারান্দার দরজার দিকে না গিয়ে বেডরুমের দরজায় গেল কেন? বেরোনর চেষ্টা না করে ঘরের আরও ভেতরে গেল কেন? ক্যাপ্টেনের দিকে তাকাল। কিশোর। আপনার কি মনে হয়?
হঠাৎ ঘুম ভেঙে গিয়েছিল। ঘর ভর্তি ধোয়া, দ্বিধায় পড়ে গিয়েছিল বেচারা! জবাব দিল ক্যাপ্টেন। রওনা দিয়েছিল বেডরুমের দরজার দিকে। এগোতে পারেনি বেশি দূর। ধোয়া কাহিল করে ফেলেছিল।
পোড়া সোফার অবশিষ্ট বয়ে এনে ধুপ করে বাইরে ফেলল দুজন ফায়ারম্যান।
যা নোংরা হয়েছে, পরিষ্কার করতে গেলে বোঝা যাবে, বলে উঠল বেড়াল মানব।
মিসেস ডেনভার এ-অবস্থা দেখলে, তাকেও আবার হাসপাতালে পাঠানর দরকার হবে, হাসল টমি। গেল কোথায় মহিলা? এত হৈ চৈয়েও দেখা নেই!
খানিক আগে ট্যাক্সিতে করে চলে গেছে, বললেন অলিভার। যাবে আর কোথায়? বোনের ওখানে গেছে হয়ত।
ক্যাপ্টেনের দিকে তাকাল কিশোর। মিস্টার জ্যাকবসকে কোথায় নেবে?
সেন্ট্রাল হাসপাতালে। প্রাথমিক চিকিৎসা করলেই চলবে বুঝলে, তাই করে ছেড়ে দেবে ডাক্তাররা। অবস্থা খারাপ দেখলে ভর্তি করে নেবে।
সেন্ট্রাল হাসপাতাল! চিন্তিত দেখাচ্ছে কিশোরকে। মিস ল্যাটনিনাকেও ওখানেই নিয়ে যাওয়া হয়েছে। কিন্তু মিস্টার জ্যাকবস-জ্যাকবসও ওখানে…
ওখানেই তো নেবে, প্রথমে বাধা দিয়ে বলল ক্যাপ্টেন। ওটা ইমার্জেন্সী হাসপাতাল, সরকারী। রোগী পয়সা খরচ করতে রাজি থাকলে দেবে কোন প্রাইভেট ক্লিনিকে পাঠিয়ে।
আমি সে কথা বলছি না, মাথা নাড়ল কিশোর। সিগারেটের ব্যাপারে, আগুনের ব্যাপারে এত সতর্ক লোকটা! সিগারেট খাবার সময় অ্যাশট্রে সঙ্গে রাখে! অথচ অসাবধানে সে-ই আগুন ধরিয়ে দিল ঘরে! নাহ, বোঝা যাচ্ছে না!
.
১৪.
জিনের আসর হয়েছে বাড়িটাতে! দমকল বাহিনী চলে যেতেই ঘোষণা করল এনড্রু। প্রথমে লারিসা, তারপর মিসেস ডেনভার, এখন আবার জ্যাকবস!
সব কিছুর মূলে ওই চুরি, বললেন অলিভার। আড়চোখে টমির দিকে তাকালেন। লাউঞ্জে একটা চেয়ার বের করে তাতে আধশোয়া হয়ে আছে। চোখ আধবোজা, বোধহয় রোদের দিকে সরাসরি চেয়ে আছে বলেই। তিন রাত আগেও এসব কিছুই ঘটেনি। চোরটা গেল চত্বর দিয়ে, শুরু হয়ে গেল যত গণ্ডগোল।
মাখা ঝোঁকাল কিশোর। এর একটাই মানে। ছায়াশ্বাপদটা রয়েছে
ছায়া—কি বললে? ভুরু কোঁচকালেন অলিভার।
ছায়াশ্বাপদ, হাউটার নাম রেখেছি আমি। বাংলা শব্দ। ইংরেজিতে ইনভিজিবল ডগ বলতে পারেন। হ্যাঁ, যা বলছিলাম। এ-বাড়ির সীমানার মধ্যেই কোথাও রয়েছে ছায়াশ্বাপদ। আর চোরও নিশ্চয় এ-বাড়িরই কেউ।
কি বলছ, খোকা? চোখ কপালে উঠেছে বেড়াল-মানবের। এ-বাড়িতে কুকুর। নেই, খালি বেড়াল।
জ্যান্ত কুকুর না ওটা, বললেন অলিভার। ক্রিস্টালে তৈরি একটা মূর্তি। আটিস্ট জ্যাক ইলিয়ট বানিয়েছিল। সোমবার রাতে ওটার জন্যই এসেছিল চোর, জ্যাকের বাড়ি থেকে নিয়ে গেছে।
খুকখুক করে হেসে উঠল এনড্রু। তাই বলুন! মিসেস ডেনভার কবেই এসে বলেছে আমাকে, আপনি একটা কুকুর আনবেন। আমার বেড়াল যেন সাবধানে। রাখি। হাহ হাহ! এখন শুনছি একটা কাঁচের কুকুর! হাহ!
কাঁধ ঝাঁকালেন অলিভার। ওই বুড়িটার জন্যে আর গোপন রইল না কিছু! কুকুরটার কথা লিখেছি ডায়েরীতে। আমার কাগজপত্র ঘেঁটেছে। নিশ্চয় ওটা পড়েছে বুড়ি। আপনাকে যখন বলেছে, আরও অনেককেই হয়ত বলেছে। জানাজানি হয়ে গেছে। চোরের কানেও গেছে কথাটা।
হু! আমাকে সন্দেহ-টন্দেহ করছেন না তো? হাসি উধাও হয়ে গেছে বেড়াল মানবের মুখ থেকে। যা-ই হোক, আর আমি এখানে থাকছি না। যা শুরু হয়েছে, প্রাণের নিরাপত্তাই নেই। কখন দেবে বিষ খাইয়ে, কিংবা বোমা মেরে গাড়ি উড়িয়ে, কে জানে! তার চেয়ে কোন মোটেলে চলে যাব।
নিজের ঘরে গিয়ে ঢুকল এনড্রু। বেরিয়ে এল শিগগিরই। এক হাতে সুটকেস, আরেক হাতে পোষা কালো বেড়ালটা। বিকেল পাঁচটায় একবার আসতেই হচ্ছে। বেড়ালগুলো আসবে, আমি না থাকলে না খেয়ে ফিরে যাবে। ওদেরকে মোটেলটা চিনিয়ে দেব নিয়ে গিয়ে। যদি কোন কারণে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করার দরকার পড়ে, উইলশায়ার ইন-এ খোঁজ করবেন। ফ্ল্যাটটা ছাড়ছি না। এখানকার পরিস্থিতি শান্ত হলেই ফিরে আসব আবার।
চলতে গিয়েও কি ভেবে দাঁড়িয়ে পড়ল বেড়াল-মানব। অলিভারের দিকে তাকাল। আমি নেই, চট করে আবার আমার ঘরে ঢুকে পড়বেন না। তল্লাশি চালাতে চাইলে, পুলিশ এবং সার্চ ওয়ারেন্ট নিয়ে আসবেন।
গটগট করে হেঁটে চলে গেল এনড্রু। খানিক পরেই গাড়ির ইঞ্জিনের শব্দ হল।
চাইলে আমার ঘরে খুঁজে দেখতে পারেন, মিস্টার অলিভার, বলল টমি। গিলবার্ট। দুপুরে বাইরে যাব, কাজ আছে। তখন ঢুকতে পারেন ইচ্ছে করলে। সার্চ ওয়ারেন্ট লাগবে না।
দুপুরে? ভুরু কোঁচকাল রবিন। আপনার ডিউটি রাতে না?