ফায়ার ব্রিগেডের আরও একটি ট্রাক আর দুটো পুলিশের গাড়ি এসে হাজির হয়েছে। সাদা পোশাক পরা পুলিশের গোয়েন্দাও এসেছে একজন। তার সঙ্গে কথা বলছে পুলিশ অফিসার।
দুই গোয়েন্দাকে দেখেই এগিয়ে এল অফিসার।
যা যা দেখেছে, শুনেছে, পুলিশকে জানাল কিশোর আর রবিন।
কেউ মহিলাকে গুলি করে থাকলে, মিস করেছে, বলল সাদা-পোশাক পরা। গোয়েন্দা।
ঠিক গুলির শব্দ না, বলল কিশোর। বোমা বিস্ফোরণের আওয়াজ।
গাড়িটা পরীক্ষা করছিল দুজন পুলিশ এগিয়ে এল ওরা। গুলির ছিদ্র নেই।
পানির পাইপের ওপর থেকে গাড়ি সরানর কাজে লাগল দমকল বাহিনী। সিডানের বাম্পারে শিকল বেঁধে, শিকলের অন্য মাথা আটকাল ট্রাকের পেছনের হুকে। টান দিল। সরে এল সিডান।
অন্য ট্রাকের হেডলাইটের আলো পড়েছে সিডানটা এতক্ষণ যেখানে দাঁড়িয়েছিল, সেখানে। মাটিতে পড়ে থাকা লালচেমত এক টুকরো কাগজ দৃষ্টি আকর্ষণ করল কিশোরের। এগিয়ে গিয়ে নিচু হয়ে তুলে নিল ওটা। দেখল। ধোয়ার। কালি মনে হচ্ছে!
কি? ফিরে তাকাল গোয়েন্দা।
ধোয়ার কালি, আবার বলল কিশোর। শব্দটা হবার পর গাড়ির হুডের তলা থেকে কালো ধোঁয়া বেরোচ্ছিল।
দ্রুতপায়ে সিডানের কাছে এগিয়ে গেল গোয়েন্দা বনেট তুলে ফেলল। তার। পাশে দাঁড়িয়ে ভেতরে টর্চের আলো ফেলল পুলিশ অফিসার। কিশোরও এসে দাঁড়াল পাশে।
ইঞ্জিন-ব্লকের ওপর পড়ে আছে কয়েক টুকরো লালচে কাগজ, আর পোড়া আধপোড়া কিছু তুলো। পুড়ে গেছে রেডিয়েটর হোস, ফ্যানের বেল্ট ছেঁড়া।
না, গুলি করেনি, মাথা নাড়াল সাদা-পোশাক পরা গোয়েন্দা। বিস্ফোরণ। বোমা ফাটানো হয়েছে।
ঘটাং করে বনেটটা আবার নামিয়ে রাখল গোয়েন্দা। নিয়ে যাও! ট্রাকের ড্রাইভারের দিকে চেয়ে বলল। পুলিশ গ্যারেজে নিয়ে রাখবে।
জ্যাকবস এসে হাজির হয়েছে আবার। কিশোরের প্রায় ঘাড়ের ওপর হুমড়ি খেয়ে আছে টমি গিলবার্ট। বেড়াল-মানব এনড্রুও এসে হাজির হয়েছে, পরনে পাজামা, গায়ে একটা কম্বল জড়ানো।
ওকে কেউ খুন করতে চেয়েছিল! বলে উঠল এনড্রু।
ঘুরে চাইল গোয়েন্দা। কোন শত্রু ছিল মহিলার?
ছিল মানে? জবাবটা দিল জ্যাকবস। পুরো এক বাড়ি ভর্তি শত্রু। তবে ওদের কেউ বোমা মেরে মারতে চায় ওকে, মনে হয় না? এত শত্রুতা নেই।
আপনি? জিজ্ঞেস করল গোয়েন্দা। আমার নাম ফ্র্যাঙ্কলিন জ্যাকবস, হাই তুলল স্টকব্রোকার। মিস্টার অলিভারের বাড়িতে ভাড়া থাকি।
আপনি কিছু দেখেছেন?
না। বিস্ফোরণের শব্দে ঘুম ভেঙে গেল। বেরিয়ে এসে দেখি, গাড়িটা দাঁড়িয়ে আছে দেয়াল ঘেঁষে। পাইপ ছেঁড়া, ফোয়ারার মত পানি ছিটকে বেরোচ্ছে। এই ছেলেগুলোর সাহায্যে মহিলাকে গাড়ির ভেতর থেকে টেনে বের করলাম, আবার হাই তুলল জ্যাকবস। রাতে ভাল ঘুম হয়নি।…াই, ঘুমোইগে।…যদি আপনার। কিছু জিজ্ঞেস করার থাকে, দুপুরে আসবেন। তার আগে আর ঘুম থেকে উঠছি না আমি। হাই তুলতে তুলতে চলে গেল সে।
চিন্তিত ভঙ্গিতে জ্যাকবসের গমন পথের দিকে তাকাল পুলিশ অফিসার। তারপর তাকাল অলিভারের বাড়িটার দিকে। বিড়বিড় করল, আশ্চর্য? গত দুদিনে। জায়গাটাতে কয়েকটা অঘটন ঘটল পর পর! মাথামুণ্ড কিছুই বোঝা যাচ্ছে না!
পুবের আকাশে ধূসর আলো। সূর্য ওঠার দেরি নেই।
চল, আমরাও যাই, রবিনের দিকে চেয়ে বলল কিশোর। ঘুম পেয়েছে।
চল, বড় করে হাই তুলল রবিন।
.
১৩.
রাতে ঘুম হয়নি, তাছাড়া প্রচণ্ড উত্তেজনা গেছে। হাত-পা অবশ হয়ে আসতে চাইছে অলিভারের। বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লেন তিনি। তিন গোয়েন্দাও ঘুমোতে গেল।
অনেক বেলায় উঠলেন অলিভার। নাশতা তৈরি করে ডাকলেন ছেলেদের।
নাশতা শেষ হল। বসার ঘরে চলে এল সবাই। টেলিভিশন অন করে দিল। কিশোর। খালি চত্বর। পুরো বাড়িটা নীরব।
ব্যাংকে যেতে হবে আমাকে, বললেন অলিভার। দশ হাজার ডলার তুলব। ছোট ছোট নোটে। তোমরা কেউ যাবে আমার সঙ্গে? এস না? খুশি হব।
নিশ্চয় যাব, বলল কিশোর। তবে, কি করতে যাচ্ছেন, পুলিশকে জানিয়ে রাখলে ভাল হত না?
না। ঝুঁকি কিছুতেই নেব না আমি। বিপদ দেখলে হাউণ্ডটা ধ্বংসই করে ফেলতে পারে চোর। ওর নির্দেশ মানতেই হচ্ছে আমাকে।
জানালার কাছে গিয়ে দাঁড়াল কিশোর, গাড়ির ইঞ্জিনের শব্দ শুনেছে। রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে ট্যাক্সি। বড় একটা সুটকেস এনে গাড়িতে তুলল ড্রাইভার। পেছনেই এল মিসেস ডেনভার।
আপনার ম্যানেজার চলে যাচ্ছে, চোখ না ফিরিয়েই বলল কিশোর।
সান্তা মনিকায় বুড়িটার এক বোন থাকে, বলল অলিভার। অসুস্থ হলে, কিংবা কোনরকম বিপদে পড়লে, ওখানেই গিয়ে ওঠে।
চলতে শুরু করল ট্যাক্সি। দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে মোড়ের দিকে।
ভাল বিপদে পড়েছে এবার, টিপ্পনী কাটল মুসা। খালি ছোঁক ছোঁক করে লোকের পেছনে। এইবার দিয়েছে টাইট…
কাঁচ ভাঙার প্রচণ্ড শব্দে থেমে গেল মুসা।
আগুন! আগুন! চেঁচিয়ে উঠল কেউ। আগুন লেগেছে!
চোখের পলকে দরজার কাছে ছুটে গেল চারজনে। দরজা খুলে বেরিয়ে এল। ব্যালকনিতে।
চতুরের একপাশে ধোঁয়া। জ্যাকবসের ঘরের জানালা দিয়ে বেরোচ্ছে। একটা লোহার চেয়ার তুলে নিয়ে দমাদম পিটিয়ে শার্সির কাঁচ ভাঙছে টমি। পরনে ঘুমানর পোশাক। খালি পা। ঘাড়ের কাছের চুল খাড়া হয়ে গেছে।
মাই গড! চেঁচিয়ে উঠলেন অলিভার। ছুটে আবার ঘরে গিয়ে ঢুকলেন, ফায়ার ব্রিগেডকে ফোন করবেন।