শাবলটা কার খোঁজ নিয়েছেন?
পাণ্ডের হাসি শোনা গেল। প্রব্লেম আছে। খড়ের গাদায় সুচ খোঁজার ব্যাপার। কেউ কি স্বীকার করতে চাইবে শাবলটা তার?
মিঃ পাণ্ডে। কেল্লাবাড়ি থেকে পুলিশ ক্যাম্প তুলে নিন।
ঠিক আছে। কিন্তু আমাদের বিশেষ করে আমার কাছে এই খুনোখুনির মোটিভ এখনও অস্পষ্ট। আপনি কি অনুগ্রহ করে আপনার হাতের তাস দেখাবেন? দেখালে পুলিশের পক্ষে এগোনো সহজ হবে।
দেখাব মিঃ পাণ্ডে। মিসেস দয়াময়ী সাঁতরা এসে পৌঁছালেই দেখতে পাবেন।
উনি রাত দশটার আগে পৌঁছতে পারবেন না।
হ্যাঁ, ওঁকে ট্রাঙ্ককলে কি অচিন্ত্যের মৃত্যু সংবাদ জানিয়েছেন?
অবশ্যই। আমিই কথা বলেছি।
ওঁর রি-অ্যাকশান কেমন বুঝলেন?
খুব একটা বিচলিত মনে হয়নি। সম্ভবত স্ট্রং নার্ভের মহিলা। শোনা মাত্র। বললেন, তাই নাকি? ঠিক আছে আমি যাচ্ছি। তারপর ফোন ছেড়ে দিলেন।
এখনই গিয়ে কেল্লাবাড়ি থেকে পুলিশক্যাম্প সরিয়ে নিন মিঃ পাণ্ডে।
মিঃ পাণ্ডে কর্নেলকে নমস্তে বলে চলে গেলেন। ওঁর জিপের শব্দ মিলিয়ে। যাওয়ার পর আমি বারান্দায় গেলাম। বললাম, ভাতঘুম বরবাদ। তাতে দুঃখ নেই। কিন্তু আপনাদের কথাবার্তা শুনে একটা ব্যাপার মাথায় এল। বটকৃষ্ণবাবু অচিত্যের সাড়া না পেয়ে তাকে ডেকে আনতেই কলকাতা গিয়েছিলেন।
কর্নেল ঘড়ি দেখে বললে, রহমতের আসার সময় হয়ে এল। কফি খেয়ে নিই। কৃপানাথ।
কৃপানাথ তার ঘর থেকে সাড়া দিল। আসছি স্যার।
কফি নিয়ে এস। একটু পরে কফি দিয়ে গেল কৃপানাথ। কফি খেতে খেতে বললাম, আপনি আমার কথাটাকে পাত্তা দিলেন না।
কর্নেল আস্তে বললেন, দয়াময়ীকে আসতে দাও।
রহমতের জিপ এসে গেল ঠিক চারটেয়। কর্নেল তাকে সাঁতরাবাবুদের বাড়ি নিয়ে যেতে বললেন। বিরক্ত হলাম। বললাম, আবার সেই সাঁতরাবাড়ি। খুনি তো ধরা পড়ে গেছে। মোটিভও স্পষ্ট। অচিন্ত্য সোনার স্বস্তিকার খোঁজ পেয়েছিল, যেভাবেই হোক। তাই নিয়ে–
কর্নেল আমাকে থামিয়ে দিয়ে বললেন, বান্ধব পাঠাগারে যাব, ডার্লিং। বাংলার বাইরে বাঙালির বাংলা চর্চার এই চেষ্টাটা অত্যন্ত প্রশংসনীয়।
বান্ধব পাঠাগারের সামনে জিপ দাঁড় করাতে বললেন কর্নেল। একতলা এই বাড়িটা আগেই দেখেছিলাম। এখন দরজা খোলা। আমাদের দেখে এক প্রৌঢ় ভদ্রলোক চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ালেন। আপনিই কি কর্নেলসায়েব? আসুন, আসুন। কিছুক্ষণ আগে অনিল আপনার কথা বলে গেল। হ্যাঁ–আমার পরিচয় দিই। ইন্দুমাধব গাঙ্গুলি। সেক্রেটারি। উনি বিষণ্ণ হাসলেন। এই দেখুন না, একা বসে মাছি তাড়াচ্ছি। আজকাল লোকে বই পড়তে চায় না। খবরের কাগজ আর টিভির দিকে ঝোঁক। কয়েকটা কাগজ রাখি। একটা টিভি কেনার চেষ্টা চলেছে। তাকিয়ে দেখুন, কত বই। মূল্যবান সব কালেকশন। সব পোকায় কাটছে। জমিদার রায়বাবুদের দান করা জমি এবং তাদেরই তৈরি এই লাইব্রেরি। ওঁরা। চলে যাওয়ার পর আমরা কজন বান্ধুবান্ধব মিলে অনেক চেষ্টায় নবজীবন দিয়েছিলাম। আপনারা বসুন স্যার। মেম্বাররা সন্ধ্যার আগেই এসে পড়বে।
কর্নেল বসলেন না। বললেন, বৃহৎ বঙ্গীয় অভিধান দেখছি আপনার টেবিলে।
হ্যাঁ। অনিল দিয়ে গেল। লাস্ট মিটিং-এ আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম—
অনিলবাবু বলছিলেন। তো, আমাকেও একটা লিফট দিতে পারেন। কলকাতা থেকে কিনে পাঠিয়ে দেব। বাংলার বাইরে বাঙালির নিজস্ব ভাষা সংস্কৃতি চর্চা আমার ভাল লাগে। একসময় অনেক বিখ্যাত বাঙালি সাহিত্যিককে বাংলার বাইরে থেকেই আমরা পেয়েছি। এমনকি কত উঁচুদরের বাংলা পত্রিকা বেরুত।
ইন্দুবাবু আবেগে চঞ্চল হয়ে বললেন, আপনার আমার জেনারেশনের লোকেরা এর খবর রাখি। আজকালকার ছেলেরা শুধু হুল্লোড়বাজি বোঝে। খেলা বলতে ফুটবল, ক্রিকেট, টেনিস। একসময় এই লাইব্রেরির পৃষ্ঠপোষকতায় পুজোপার্বণ, খেলাধুলা, আবার ধরুন শরীরচর্চা সব কিছুই হত। এখন কথা তুললে বলে জুডো ক্যারাটে যৌগিক ব্যায়ামের কথা। তো তা-ও গজিয়ে উঠেছে। চলুন স্যার, আপনাদের এরিয়াটা দেখাই। প্রায় পনের কাঠা জমি। পেছনে জঙ্গল হয়ে পড়ে আছে।
পেছনে অনেকটা জায়গা পাঁচিল ঘেরা। সত্যিই জঙ্গল হয়ে আছে। পেছনকার বারান্দার কোনায় থিয়েটারের স্টেজের সরঞ্জাম দেখলাম। অবহেলায় পড়ে আছে। আবর্জনার মতো। কর্নেল বললেন, মুগুর ডাম্বেলও আছে দেখছি।
হ্যাঁ স্যার। ব্যায়ামাগারও ছিল। ওই দেখুন আয়রন বারের অবস্থা। রায়মশাইদের আমলে কুস্তিচর্চাও হত।
বাঁশ আর কাঠের খুঁটি দেখছি।
থিয়েটারের স্টেজ কিংবা ফাংশান-টাংশানের জন্য রাখা হয়েছে। প্যান্ডেলের সব সরঞ্জাম আছে।
আজ নাকি ভীমগড়ে খুনোখুনি হয়েছে শুনলাম।
কর্নেলের আকস্মিক প্রশ্নে ইন্দুবাবুর উত্তেজনা বেড়ে গেল। হ্যাঁ। এখনকাস কালচার করতে পারেন–এই খুনোখুনি আর দাঙ্গা হাঙ্গামা। রাজনীতি দেশটাকে উচ্ছন্নে পাঠাচ্ছে।
শুনলাম দুজন বাঙালি খুন হয়েছে?
ইন্দুবাবু গম্ভীর মুখে বললেন, বাজে চরিত্রের লোক। একজন গুণ্ডামি করে বেড়াত। আর একজন ছিল নাম্বার ওয়ান চিট। জেলখাটা দাগী আসামি।
কি নাম যেন?
বটোকেষ্ট। ওর কথা আর বলবেন না স্যার।
অন্যজন–
বাচ্চু। ওর বাবা নরেনবাবু কিন্তু সজ্জন মানুষ ছিল। এই লাইব্রেরির পৃষ্ঠপোষক ছিল।
বাচ্চুবাবু নাকি অনিলবাবুর বন্ধু ছিলেন?