কর্নেল বললেন, অরিজিৎ সিংহ আমার পরিচিত। বারুইপুর এরিয়ার ওঁর নার্সারি আছে। একটা বিদেশি ক্যাকটাস সাপ্লাই করেছিলেন আমাকে। তবে। বরমডিহিতে ওঁর বাড়ি আছে জানতাম না।
শচীনবাবু রুমালে মুখ মুছে বললেন, অরিজিৎ আপনাকে দেখে বেরুতে যাচ্ছিল। ওকে বাধা দিলাম। সব ঘটনা খুলে বললাম। শুনে ও পরামর্শ দিল, আপনি আজই কলকাতা ফিরে যান। তো কলকাতা ফেরার কদিন পরে আপনি আমার কাছে এলেন।
হ্যাঁ। আমাকে দেখে আপনার অস্বস্তি আঁচ করেছিলাম। তবে আমার দেখার ইচ্ছে ছিল আপনার নাকের পাশে জডুল আছে কি না। দেখলাম, নেই। তখন বুঝলাম, একটা সাজানো নাটক দেখেছি।
ঠিক। হরির বড্ড প্যাঁচালো বুদ্ধি। আপনি ও বাড়িতে আসার পর আপনার পরিচয় দিয়ে ওকে সাবধান হতে বললাম।
কর্নেল হাসলেন। হরিচরণের বুদ্ধি প্যাঁচালো। তবে অতিবুদ্ধি এবং লোভ মানুষকে ঝামেলায় ফেলে। জডুল অপারেশন করে সে আমার কাছে একটা গল্প ফঁদতে গিয়েছিল। তার উদ্দেশ্য ছিল দুটো। মুখ্য উদ্দেশ্য, আমি তাকে চিনতে পেরেছি কি না জানা এবং গৌণ উদ্দেশ্য শ্যামসুন্দরের নোটবইয়ে লেখা একটা সাংকেতিক সূত্রের অর্থ বোঝ। তার নাকের পাশে ক্ষতচিহ্ন দেখেই আমার সন্দেহ হয়েছিল। তাই তার কেস আমি নিয়েছিলাম। কর্নেল চুরুট ধরালেন। তারপর ধোঁয়া ছেড়ে বললেন, যাই হোক, আশা করি বুঝতে পেরেছেন শ্যামসুন্দরের খুনের মামলায় আপনি জড়িয়ে পড়েছেন। হরির জবানবন্দীর সূত্রে পুলিশ যে কোনও সময় আপনার কাছে আসবে। তা আমি বলি কী, আপনি মামলা মিটিয়ে নিন।
মামলা তো তরুণ করেছে। প্রায় আর্তনাদ করলেন শচীনবাবু।
তাতে কী? আপনি তার মাকে আপনার বাবার বিবাহিত স্ত্রী বলে স্বীকার করে নিন। আমি আপনাদের দুই ভাইকে আমার অ্যাপার্টমেন্টে ডেকে মিটমাট করে দেব। তরুণবাবু রাজি। আর আপনাদের গৃহদেবতা আমিই উদ্ধার করেছি! তা-ও ফেরত পাবেন। এরপর আসছে পুলিশের ঝামেলা। আপনি পুলিশকে সব কথা খুলে বলবেন। আপনি আইনজীবী। আপনি রাজসাক্ষী হবেন। আমিও আপনাকে সমর্থন করে সাক্ষ্য দেব। পুলিশের কিন্তু এ মামলায় আমাকে খুব দরকার। আশা করি তা বুঝতে পারছেন। বিশেষ করে আমার হাতে ভাইটাল সাক্ষ্য প্রমাণ আছে।
কিছুক্ষণ চুপচাপ থাকার পর শচীনবাবু বললেন, আপনি যখন বলছেন, তখন তা-ই হবে। কিন্তু আমাদের গৃহদেবতা কী ভাবে আপনি উদ্ধার করলেন?
কর্নেল থামলেন। শ্যামসুন্দরের নোটবইয়ে লেখা শব্দছক থেকে। তবে আমার এই তরুণ সাংবাদিক বন্ধুই সূত্রটা ধরিয়ে দিয়েছিল। কর্নেল ঘটনাটা সবিস্তারে বর্ণনা করলেন। শোনার পর শচীনবাবু বললেন, গৃহদেবতা কার কাছে আছে?
আমার অ্যাপার্টমেন্টে আজ সন্ধ্যা ৬টায় আসুন। তরুণবাবু আসবেন। দুই ভাইয়ের সামনে গৃহদেবতা রাখব। হ্যাঁ–গৃহদেবতা আপনার এই বাড়ির মন্দিরেই ফিরে আসবেন। কারণ মন্দিরটা আপনার পূর্বপুরুষের তৈরি। বলে কর্নেল উঠে দাঁড়ালেন। চলি। নাহ। চা-ফা খাব না। আজ সন্ধ্যা ৬টায় আমার ঘরে বরং উৎকৃষ্ট কফি খাওয়াব আপনাকে।
রাস্তায় গিয়ে কর্নেল বললেন, চলো জয়ন্ত। আলিপুর কোর্ট চত্বর হয়ে যাই। ছেলেটি–তপন দাশ তার নাম, এই কেসে ভাইটাল সাক্ষী। তার সঙ্গে দেখা করে যাওয়া উচিত।…