হালদারমশাই চমকানো গলায় বললেন, অ্যাঁ? আপনি জানেন?
সৌরভ নাট্যগোষ্ঠীর ইন্দ্রজিৎ ব্যানার্জি। গতকাল সন্ধ্যায় তাঁরই নাটক পরগাছা দেখতে গিয়েছিলাম। সঙ্গে জয়ন্তকে নিয়ে গিয়েছিলাম? চন্দ্রিকা গ্রাম্য যুবতীদের দলে অভিনয় করছিল।
আমি কর্নেলের মুখের দিকে তাকিয়ে ছিলাম। আমিও হালদারমশাইয়ের মতো বলে উঠলাম, অ্যাঁ!
কর্নেল একটু হেসে বললেন, হ্যাঁ। যাই হোক, তারপর কী হলো বলুন হালদারমশাই?
ঝটপট বললাম, কিন্তু থিয়েটার শেষ হওয়ার পর আমরা আসছিলাম গাড়িতে। অতদুরে থিয়েটার রোডের ওই মোড়ে মেয়েটি কী করে অত শীগগির এসে পড়ল?
কর্নেল একই ভঙ্গিতে বললেন, তোমাকে বরাবর বলেছি জয়ন্ত! তোমার পেশার লোকেদের জন্য একটা জিনিস খুব জরুরি। তীক্ষ্ণ পর্যবেক্ষণ–সবসময়, সবকিছুর প্রতি। তুমি লক্ষ্য করোনি, নাটকে নাচতে নাচতে একটি মেয়ের চুলে গাছের একটা পাতা পড়ল আর সে যন্ত্রণায় আর্তনাদ করে বেরিয়ে গেল। নাটকের মাঝামাঝি সময়ে প্রথম একটি মেয়ের মৃত্যু। তার মুখটা মনে ছিল। কাজেই তার আগেই চলে আসায় অস্বাভাবিক কিছু নেই।
তা হলে আপনি ওকে চিনতে পেরেছিলেন। কিন্তু গাড়িতে আসার সময় চুপচাপ রইলেন। পরে আমাকে বললেন না কিছু। কেন?
বলেছিলাম।
কলগার্ল মনে হচ্ছে বলেছিলেন শুধু।
পুলিশের গোয়েন্দা বললেন, হাতে সময় কম কর্নেলসায়েব! আমাকে উঠতে হবে। ডি সি ডি ডি সায়েব আমাকে বলেছে–
তাঁকে থামিয়ে কর্নেল বললেন, জাস্ট আ মিনিট! হালদারমশাইয়ের কথা আগে শুনে নিই।
হালদারমশাই দুঃখিত মুখে বললেন, অহন আর কী কমু কর্নেলস্যার? ইন্দ্রজিৎ ব্যানার্জি কইলেন, কী চাই? যেই ওনারে কইছি, কাইল আপনি কলগার্লেরে গাড়িতে উঠাইয়া লইয়া কই গেলেন জানতে চাই–আই অ্যাম এ প্রাইভেট ডিটেকটিভ, অমনি উনি দরজা আটকাইয়া পুলিশে ফোন করলেন। পুলিশ আইয়া আমারে ধমক দিয়া–ওঃ! ক্কী কারবার! কিছুতেই বুঝবে না। যত কই, কেসটা শোনেন–তত ধমক দেয়, শাট আপ! আর কক্ষনো ঝামেলা করবেন না।
অশোকবাবু একটু হেসে বললেন, আসলে মিঃ হালদারের অ্যাপ্রোচে গণ্ডগোল ছিল। তাই থেকে একটু ভুল বোঝাবুঝি আর কী! চন্দ্রিকা মার্ডারের পর ওর ফ্ল্যাটে ড্রেসিং টেবিলের ড্রয়ারে মিঃ হালদারের কার্ড পেয়ে আমরা অবাক হয়েছিলাম। তারপর ওঁর সঙ্গে যোগাযোগ করলাম।
হালদারমশাই বললেন, হঃ! একখান কার্ড দিছিলাম অরে। ভেরি স্যাড!
কর্নেল বললেন, ইন্দ্রজিৎবাবুকে কি জানানো হয়েছে খবরটা?
অশোকবাবু বললেন, ফোনে আমরা জানিয়েছি। মিঃ হালদারের কাছে ব্যাপারটা শোনার পর জানাতে হলো। তারপর লাহিড়িসায়েব আমাদের থানায় রিং করে খোঁজ নিলেন। তখন বুঝলাম, ইন্দ্রজিৎবাবুর সঙ্গে ওঁর জানাশোনা আছে। আমাদের ফোন পেয়েই ভদ্রলোক ডি সি ডি ড-কে অ্যাপোচ করেছেন সম্ভবত। যাই হোক, ডি সি ডি ডি আপনার কাছে আসতে বললেন। এখন মনে হচ্ছে, আপনি ব্যাকগ্রাউন্ডটা মোটামুটি জানেন।
শুধু এটুকু জানি, ইন্দ্রজিৎবাবুকে কিছুদিন আগে কেউ ফোনে হুমকি দিয়েছিল, ঐ স্কুল স্ট্রিটের ওলসন হাউসের ছায়া মাড়ালে তাঁর বিপদ ঘটবে। স্বভাবত উনি অরিজিৎ লাহিড়িকে ব্যাপারটা জানিয়েছিলেন। তখন অরিজিৎ ওঁকে আমার নাম ঠিকানা দেন।
শুনলাম আপনি গিয়েছিলেন ওবাড়িতে। ডেডবডি দেখে এসেছেন।
হ্যাঁ। আপনাদের অফিসারদের ধারণা স্রেফ ডাকাতি এবং খুন।
ঠিক তা-ই মনে হয়েছিল আপাতদৃষ্টে। অশোকবাবু হাসলেন। কিন্তু এবার আর তা মনে হচ্ছে না। ডি সি ডি ডি সায়েব বললেন, আপনার সঙ্গে যেন যোগাযোগ রেখে চলি।
কর্নেল একটু চুপ করে থেকে বললেন, কতকগুলো ঘটনা এ মুহূর্তে আমাদের নানা আছে, যেগুলোর মধ্যে কোনও স্পষ্ট যোগসূত্র নেই। ঠিক আছে মিঃ গুপ্ত! আপনি প্রয়োজন হলে পরে যোগাযোগ করবেন। আমার ফোন নাম্বার আপনার নিশ্চয় জানা?
হ্যাঁ। লাহিড়িসায়েব দিয়েছেন।
একটা কথা। ডিস্কো কে আপনি জানেন?
অশোকবাবু গুম হয়ে রইলেন কয়েক মুহূর্ত। তারপর বললেন, লোকটি কে আমি অন্তত জানি না। তবে কানাঘুষো শুনেছি, হি ইজ আ বিগ গাই। ওপরতলায় প্রচণ্ড প্রভাব আছে, এটুকু বুঝতে পারি।
কিন্তু সম্প্রতি ওলসন হাউসে আপনারা হানা দিয়েছিলেন?
পুলিশের গোয়েন্দা মুচকি হেসে বললেন, জাস্ট আ শো বিজনেস বলতে পারেন। এগুলো আমাদের মতো চুনোপুঁটিদের মাঝে মাঝে করতে হয়। আচ্ছা, আমি চলি।….
অশোক গুপ্ত চলে যাওয়ার পর হালদারমশাই চাপাস্বরে বললেন, সব ফ্যাক্ট আমি পুলিশেরে দেই নাই কর্নেলস্যার। আপনারে দিমু। আগে দিলেই ভাল করতাম। মাইয়াডা তা হলে হয়তো মারা পড়ত না। ব্যাড লাক।
কর্নেল বললেন, আপনি এখনও খুব উত্তেজিত হালদারমশাই! আমার মনে, আগে উত্তেজনাটা কাটিয়ে ওঠা দরকার।
ক্যান? প্রাইভেট ডিটেকটিভ ভুরু কুঁচকে তাকালেন।
কর্নেল হাসলেন। আপনার ভাষা। লক্ষ্য করেছি, উত্তেজনার সময় আপনি স্টান্ডার্ড বাংলায় কথা বলেন না।
হালদারমশাই বিব্রতভাবে একটু হাসলেন। তারপর বললেন, হঃ। ঠিক কইছেন—সরি। ইউ আর রাইট কর্নেলস্যার। আমার ভীষণ খারাপ লাগছে। মেয়েটিকে বাঁচাতে পারলাম না। অশোকবাবুকে অত করে বললাম, ফ্রি স্কুল স্ট্রিটের ওই বাড়িটা হয়েই কর্নেল স্যারের কাছে যাওয়া যাক। উনি বললেন, ও-বাড়িতে গিয়ে আর লাভ নেই। বডি চালান গেছে। তবে বর্ণনা শুনলাম, হরিবল! গলা কাটছে। ওঃ!