তরুণ, সে ব্যবসাদারী ভঙ্গিতে বলল, আমি তো আপনাকে চিনি না। মেম্বার হতে হবে। দুশো টাকা ডিপোজিট। স্বপনদাকে যে ক্যাসেট চেয়েছিলেন, পেয়ে যাবেন।
পারবেন দিতে?
চেষ্টা করব। কী ক্যাসেট বলুন?
চিচিং ফাঁক।
মুহূর্তে তরুণের মুখের ভাব বদলে গেল। ভুরু কুঁচকে বিকৃত মুখে বলল, কী ফালতু কথা বলছেন স্যার। ওই নামে কোনও ক্যাসেট নেই।
কর্নেল অবাক হওয়ার ভঙ্গিতে বললেন, সে কী! স্বপন বলেছিল–
স্বপনদার চালাকি। আপনাকে ভুল বলেছে।
ভুল নয়। আসলে ওটা একটা থিয়েটারের নাটকের ক্যাসেট। স্বপন ওতে অভিনয় করেছিল। আপনি নিশ্চয় জানেন স্বপন থিয়েটারে অভিনয় করত?
তরুণ একটু দ্বিধায় পড়ে গেল যেন। স্বপনদা বলেছিল চিচিং ফাঁক নামে নাটক করেছে?
হ্যাঁ। দারুণ নাটক নাকি।
বোগাস। স্বপনদা স্টেজের কাজকর্ম করত।
তা-ই বুঝি? কিন্তু স্বপন বলেছিল, কী যেন নাটকের দলটার নাম—হুঁ, সৌরভ, নাট্যগোষ্ঠী।
হবে। আমি জানি না। স্বপনদার মুখে শুনেছি, নাটকে নামার ইচ্ছে ছিল। একটা দলের সঙ্গে ভিড়েছে। স্টেজ ম্যানেজ করে-টরে।
আপনি ইন্দ্রজিৎ ব্যানার্জিকে চেনেন?
নাহ্।
ডিস্কোকে?
তরুণের মুখের ভঙ্গি আবার পলকে বদলে গেল। গলার ভেতর বলল, নাহ্। তারপর সে নার্ভাস মুখে একটু হাসবার চেষ্টা করল। তাই বলুন! আপনি সি আই ডি অফিসার। দেখুন স্যার, দফায় দফায় এসে আমাকে আপনারা জ্বালাতন করছেন। এতে আমার বিজনেসের লস হচ্ছে। স্বপনদা আমার পার্টনার ছিল। সে কী কাজ করে ফেঁসে গেছে-মার্ডার পর্যন্ত হয়ে গেছে, আমি তার কিছুই জানি না। মিছিমিছি আমাকে হ্যাঁরাস করছেন।
কাউন্টারে ইতিমধ্যে কয়েকজন খদ্দের এসেছিল, তারা হাঁ করে তাকিয়ে ছিল। তরুণ তাদের দিকে ঘুরল। কর্নেল মুখে সেই অবাক ভঙ্গিটি রেখেই শ্বাস ছেড়ে বললেন, ভুল করছে তরুণবাবু!
তরুণ হাত নেড়ে বলল, থানায় গিয়ে দেখা করব। বড়বাবু আমার চেনা। আপনি এখন আসুন স্যার।
কর্নেল ভিড় ঠেলে হাঁটতে থাকলেন। রাস্তায় গিয়ে মুচকি হেসে বললেন, অনেক সময় অন্ধকারে ঢিল ছুঁড়ে দেখেছি, ঠিক জায়গায় লেগেছে। কী বুঝলে বলো এবার?
বললাম, স্বপন দাশ ইন্দ্রজিৎবাবুর দলে ছিল। আর এই তরুণচন্দ্র ডিস্কোর এক চেলা।
কর্নেল গাড়িতে ঢুকে বললেন, আর কিছু বুঝলে?
গাড়ি স্টার্ট দিয়ে বললাম, ইন্দ্রজিৎবাবুর সঙ্গে ডিস্কোর তো শত্রুতা আছে। ইন্দ্রজিৎবাবুর নাটকের দলে স্বপন দাশ সম্ভবত ডিস্কোর চর হয়ে ঢুকেছিল। ইন্দ্রজিৎবাবুই তো বলছিলেন, তাঁর দলে ডিস্কোর চর আছে।
স্বপনকে কে খুন করল বলে মনে হয় তাহলে?
ইন্দ্রজিৎবাবুকে সন্দেহ করা চলে।
কর্নেল হাসলেন। তা হলে তোমার ধারণা অনুসারে চন্দ্রিকার খুনী ইন্দ্রজিৎবাবু?
হকচকিয়ে গিয়ে বললাম, চন্দ্রিকাকে উনি খুন করবেন কেন? মোটিভ কী? চন্দ্রিকার লুকিয়ে রাখা ওই কাগজটা তো আপনাকে ডিস্কোই চাইছে। ডিস্কোই ইন্দ্রজিৎবাবুকে কিডন্যাপ করে এক লক্ষ টাকা আদায় করল। কাজেই অরিজিৎবাবুর থিওরি অনুসারে একজন তৃতীয় ব্যক্তি এই রহস্যের পিছনে আছে। সে ডিস্কোকে টেক্কা মেরে ওই কাগজটা অর্থাৎ চিচিং ফাঁকের কোড নাম্বার হাতাতে স্বপনকে দিয়ে চন্দ্রিকাকে মেরেছে। চন্দ্রিকা টের পেয়েছিল থিয়েটার থেকে সে তার পিছু নিয়েছে। এবং আপনার থিওরি অনুসারে চন্দ্রিকা তাই তার পার্স আপনার জিম্মায় পৌঁছে। দিয়েছিল। তাই না?
কর্নেল অন্যমনস্কভাবে শুধু বললেন, হুঃ!
হেমেন্দ্র সে রাতে ওলসন হাউসের কাছে ছিলেন। কাজেই তৃতীয় ব্যক্তি হেমেন্দ্র।
তুমি বলেছিলে হেমেন্দ্রের ডিস্কো হওয়ার চান্স আছে।
নাহ্। ডিস্কো অন্য কেউ। হি ইজ আ বিগ গাই। পুলিশের কথা এটা।
কর্নেল ফ্রি স্কুল স্ট্রিটে পৌঁছে মুখ খুললেন। ওলসন হাউসে ঢুকব। একটু দরকার আছে।
বাড়িটার কাছে একটা পুলিশ ভ্যান দেখে বুঝলাম, কড়া পুলিশ পাহারা বহাল আছে। সাদা পোশাকের পুলিশ দেখলে আমি চিনতে পারি। তারা দুদিকের ফুটপাতেই দাঁড়িয়ে আছে ছড়িয়ে ছিটিয়ে। কেউ খৈনিওয়ালার কাছে বসে গল্প করছে আর খৈনি ডলছে।
গাড়ি থেকে বেরিয়ে গলির মুখে একজন সাদা পোশাকের অফিসার কর্নেলকে দেখে হাসলেন। কর্নেল তাঁর পাশ কাটিয়ে বাড়িতে ঢুকলেন। দেখলাম, ছোট্ট লনের ওপাশে বেঞ্চে কজন সশস্ত্র কনস্টেবল বসে আছে।
বারান্দায় হ্যারি ওলসন বেতের চেয়ারে বিমর্ষমুখে বসেছিলেন। কর্নেলকে দেখে হাত তুলে অভিনন্দন জানালেন। আমরা বসলাম। কর্নেল বললেন, আশা করি কোনও অসুবিধে হচ্ছে না মিঃ ওলসন?
ওলসন বললেন, হচ্ছে। তাছাড়া পুলিশ আমার বাকি জীবনকাল পর্যন্ত আমাকে পাহারা দেবে না। তখন ডিস্কো আমাকে খতম করবে। কাজেই ঠিক করেছি, বাড়ি বেচে দেব। বোম্বে চলে যাব, আমার এক আত্মীয়ের কাছে।
আপনার ভাড়াটেদের খবর কী?
ওরা আছে। বাইরে শিকার ধরতে যাচ্ছে আগের মতো। তবে কাউকে সঙ্গে আনতে পারছে না। ওলসন ফিসফিস করে বললেন ফের, একজন পুলিশ অফিসার আমাকে বলেছেন, ডিস্কো ওপরতলায় খুব চাপ দিচ্ছে পুলিশ তুলে নিতে। কাজেই আপনি যতই চেষ্টা করুন, পুলিশ চলে যাবে।
কর্নেল একটু হেসে বললেন, বাড়ি যে বেচবেন বলছেন, কিনবে কে ভেবেছেন?
মেয়েগুলোকে বলেছি, ডিস্কোকে বলো, সে কিনে নিক। কিন্তু ওরা বলছে, ডিস্কোর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছে না। আমিও ফোন করেছিলাম। রিং হচ্ছে। কেউ ধরছে না।