আপনি অমরেন্দ্র সিংহরায়ের কথা শুনেছেন বলছিলেন। হরনাথবাবুর সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক কেমন বুঝলেন?
ভাল। হরনাথবাবু কইলেন ওনার বেস্ট ফ্রেন্ড। আলাপ করতে চাইছিলাম। কিন্তু চান্স পাইলাম না।
হরনাথবাবুকে আপনি চন্দ্রিকা এবং ইন্দ্রজিৎ ব্যানার্জির সম্পর্কের কথা বলেছিলেন?
হঃ। ডিটেলস সবকিছু কইছি ওনারে। কী বুঝলেন? মানে ইন্দ্রজিৎবাবুকে উনি চেনেন?
চেনেন। রাঙাটুলি ইন্দ্রজিৎবাবুর শ্বশুরবাড়ি। আর কী কইছিলেন য্যান? হালদারমশাই স্মরণ করার চেষ্টা করলেন। একটিপ নস্যি নিয়েই মনে পড়ল। বললেন, হঃ! ধানবাদের লোক ইন্দ্রজিৎবাবু। পলিটিকস করতেন। নাটকও করতেন। লোকাল এম এল এর রাইটহ্যান্ড ছিলেন। হরনাথবাবু চন্দ্রিকার সঙ্গে ম্যারেজের চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু চন্দ্রিকা এম এল এর পোলার লগে পলাইয়া গেছিল।
কিন্তু ইন্দ্রজিৎবাবুর সঙ্গে চন্দ্রিকার মেলামেশা সম্পর্কে হরনাথবাবুর কী রিঅ্যাকশন?
হালদারমশাই মাথা নেড়ে বললেন, ভাল না। কইলেন, হতভাগিনী বুদ্ধির দোষে মারা পড়েছে। এক্সপ্লেন করলেন না। শুধু বুঝলাম, একসময় ইন্দ্রজিৎবাবুরে লাইক করতেন। এখন আর করেন না। আপনি রাঙাটুলি যান কর্নেলস্যার! হেভি মিস্ট্রি। তাছাড়া কোন ভদ্রমহিলার হাজব্যান্ডরে কিডন্যাপ করল কেডা, বুঝি না। মন্দিরে টাকার ব্যাগ রাখল। তারপর তারে ছাড়ল কি না– শ্বাস ছেড়ে চুপ করে গেলেন হালদারমশাই।
কর্নেল বললেন, ডিস্কো ইন্দ্রজিৎবাবুকে কিডন্যাপ করেছিল। এক লাখ টাকা নিয়ে ছেড়ে দিয়েছে।
অ্যাঁ? কন কী?
ভবানীমন্দিরে যে ভদ্রমহিলাকে দেখেছেন, তিনি ইন্দ্রজিত্যাবুর স্ত্রী মৃদুলা দেবী।
খাইছে। হালদারমশাই গুলি গুলি চোখে তাকিয়ে রইলেন। গোঁফের ডগা তিরতির করে কাঁপতে লাগল।
কর্নেল হাসলেন। আপনি রাঙাটুলি যাওয়ার পর অনেক ঘটনা ঘটেছে। সময়মতো বলব।
টেলিফোন বাজল। কর্নেল ফোন তুলে সাড়া দিলেন। বলছি। …হা মিঃ ডিস্কো! বুঝতে পারছি আপনার প্রবলেম।…..শুনুন। চিচিং ফাঁক আমার কাছে আছে তা তো জানেন। আমি আপনার কথায় রাজী।… হ্যাঁ। রাঙাটুলির ভবানীমন্দিরেই ফেরত দেব। শুধু একটা শর্ত।…না। আপনার প্রকৃত পরিচয় জেনে আমার কোনো লাভ আছে বলে এখন মনে করছি না। তবে শর্তটা হলো, আপনাকে আমি নিজের হাতে চিচিং ফাঁক তুলে দেব। … নাহ্। আমি একা যাব এবং আপনিও একা আসবেন। ভদ্রলোকের চুক্তি।– ঠিক আছে। আগামী শুক্রবার রাত দশটা?…. তা-ই হবে। রাখছি।
হালদারমশাই শুনছিলেন। বললেন, ডিস্কো?
কর্নেল বললেন, হ্যাঁ।
অরে চিচিং ফাঁক দেবেন কইলেন। হোয়াট ইজ দ্যাট থিং?
একটা কোড নাম্বার।
কিসের কোড নাম্বার।
জানি না। তবে ওটা ডিস্কোর দরকার। ওটার জন্যই চন্দ্রিকাকে খুন হতে হয়েছে।
হেভি রহস্য। বলে গুম হয়ে গেলেন প্রাইভেট ডিটেকটিভ কে. কে হালদার।
কর্নেল টেলিফোন তুলে ডায়াল করতে থাকলেন। সাড়া পেয়ে বললেন, অরিজিৎ! …. হ্যাঁ অশোকবাবুকে …… জাস্ট আ মিনিট! স্বপন দাশের ব্যাকগ্রাউন্ড…ঠিক আছে। ওর দোকানের ঠিকানাটা চাই। …হ্যাঁ, বলো। … কর্নেল প্যাড টেনে ঠিকানা লিখে নিলেন। তারপর বললেন, হালদারমশাই বহাল তবিয়তে ফিরেছেন। বলছেন, হেভি মিস্ট্রি। … সন্ধ্যার পর এস বরং। ডিটেলস আলোচনা হবে। ছাড়ছি।
হালদারমশাই বেজার মুখে বললেন, ডি সি ডি ডি সায়েব আমারে পাত্তা দিতে চান না। ওনারে আমার সাংঘাতিক এক্সপিরিয়েন্সের কথা বললে জোক করবেন।
নাহ্। তবে আপনি এবার বাড়ি ফিরে বিশ্রাম নিন। সকাল সকাল শুয়ে পড়বেন। আপনার লম্বা একটা ঘুম দরকার।
প্রাইভেট ডিটেকটিভ উঠে দাঁড়ালেন। তারপর যথারীতি যাই গিয়া বলে বেরিয়ে গেলেন।
বললাম, আপনি ডিস্কোকে চন্দ্রিকার রাখা কাগজটা সত্যি দেবেন?
কর্নেল চোখ বুজে বললেন, দেব। ভদ্রলোকের চুক্তি, ডার্লিং।
কিন্তু তার আগে ওটা কিসের কোড জানা দরকার নয় কি? ফোনে একটি মেয়ে বলছিল, চন্দ্রিকা নার্কোটিকসের একটা পেটি আত্মসাৎ করেছিল। সেটার সঙ্গে এই কোডের সম্পর্ক থাকতে পারে।
তা পারে।
তাহলে আগে–
আমাকে বাধা দিয়ে কর্নেল বললেন, কিছুক্ষণ জিরিয়ে নাও। আবার বেরুতে হবে।
কোথায়?
স্বপন দাশের নিউমার্কেটের দোকানে।
নিউমার্কেটের ভেতর ভিড় ঠেলে অনেক গলিঘুঁজি ঘুরে একটা ছোট্ট দোকানের সামনে দাঁড়ালেন। টেপরেকর্ডার বিক্রি হয় দোকানটাতে। ভিডিও ক্যাসেট ভাড়ায় পাওয়ার কথা খুদে ফলকে লেখা আছে। সাইনবোর্ডে দোকানের নাম জয় মা কালী ইলেকট্রনিকস। কাউন্টারে ব্যাগি প্যান্ট আর আই লাভ ইউ লেখা ফতুয়াগোছের গেঞ্জি পরা তাগড়াই এক যুবক ক্যাসেট গোছাচ্ছিল। কর্নেলকে বলল, বলুন স্যার।
কর্নেল বললেন, স্বপনবাবুকে দেখছি না? বেরিয়েছেন কোথাও?
যুবকটি ক্যাসেটগুলো র্যাকে রেখে এসে বলল, স্বপনদা নেই।
কর্নেল হাসলেন। নেই তা তো দেখতেই পাচ্ছি। আসেননি, নাকি—
স্বপনদা মারা গেছে।
সে কী! এই তো কদিন আগে দেখলাম। হঠাৎ কী অসুখ হয়েছিল?
ফুড পয়েজন।
ভেরি স্যাড। কর্নেল মুখে প্রচণ্ড দুঃখের ছাপ ফুটিয়ে বললেন, আহা! অত ভাল ছেলেটা অকালে ঝরে গেল। আমার সঙ্গে কতদিনের চেনাজানা ছিল। আপনি কি স্বপনের আত্মীয়?
হ্যাঁ।
স্বপন আমাকে একটা ভিডিও ক্যাসেট যোগাড় করে দেবে বলেছিল।
আপনি মেম্বার?
না। স্বপনের সঙ্গে আমার অন্য সম্পর্ক ছিল। আপনার নাম কী ভাই?