কফি এল। হেমেন্দ্র বললেন, কফি খান। আরও বলছি।
কর্নেল কফিতে চুমুক দিয়ে বললেন, কিন্তু কলকাতায় তোমার সঙ্গে ইন্দ্রজিতের যোগাযোগ ছিল। প্লিজ এক্সপ্লেন ইট।
যোগাযোগের প্রশ্নই ওঠে না। আমার বাড়ির পাশেই রথীন একটা বাড়ি করেছিল। আমি আমার ঘর থেকে দেখতে পেতাম ইন্দ্রজিৎ রথীনের সঙ্গে মদ খাচ্ছে। চন্দ্রিকাও ওদের সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছে। কাজেই রথীনকে আড়ালে সাবধান করে দিতাম ইন্দ্রজিৎ সম্পর্কে। কিন্তু রথীনের আর্থিক অবস্থা ক্রমশ পড়ে এসেছিল। ইন্দ্রজিৎ ওকে মদ যোগাত। আমি চন্দ্রিকাকে সাবধান করে দিয়েছিলাম। চন্দ্রিকাও আমার ওপর খাপ্পা হয়েছিল। চন্দ্রিকা ছিল যাকে বলে স্পয়েল্ড চাইল্ড। এক রাত্রে দেখি, রথীন মাতাল হয়ে লনে পড়ে আছে। আর চন্দ্রিকা ইন্দ্রজিতের সঙ্গে ….. সরি। আমার খারাপ কথাবার্তা বলা অভ্যাস নয়।
তুমি ইন্টারভেন করেছিলে কি?
হ্যাঁ। আফটার অল রথীন আমার মামাতো ভাই।
তুমি মৃদুলাকে ফোন করে বলেছিলে—
হ্যাঁ। মৃদুলাকে বলেছিলাম, ওর স্বামী চন্দ্রিকাকে যেন অ্যাভয়েড করে। আসলে চন্দ্রিকার বদনাম দিয়ে ভয় দেখিয়েছিলাম মৃদুলাকে।
রথীন খুন হয়েছিল কীভাবে?
বাড়িতেই ওর গলাকাটা ডেডবডি পাওয়া যায়। চন্দ্রিকা উধাও। বডি পচে গন্ধ ছুটছে। তখন ব্যাপারটা জানা যায়। কাজেই স্বভাবত চন্দ্রিকাকে পুলিশের সন্দেহ হয়।
তুমি বলছিলে, চন্দ্রিকা তোমার কাছে চাকরির জন্য আসত।
ইদানিং আসত। রথীন খুন হয়েছে ছ-সাত বছর আগে।
কর্নেল চুরুটের একরাশ ধোঁয়ার ভেতর বললনে, রথীনের খুন হওয়া সম্পর্কে তার বক্তব্য জানতে চাওনি?
হেমেন্দ্র উত্তেজিত ভাবে বললেন, কেন চাইব না? হঠাৎ যেদিন প্রথম এল, আমি সেইদিনই চার্জ করেছিলাম ওকে। কেঁদে ফেলল। তারপর বলল, সে-রাতে এর সঙ্গে ওর ঝগড়া হয়েছিল। রথীন ওকে মেরেছিল। চন্দ্রিকা নিজের কিছু জিনিসপত্র গুছিয়ে নিয়ে বাড়ি থেকে চলে যায়। রথীন তখন মাতাল অবস্থায় ছিল। গালাগালি দিয়ে দরজা ভেতর থেকে এঁটে দেয়। তারপর কী হয়েছে, চন্দ্রিকা জানত না।
চন্দ্রিকা কোথায় আশ্রয় নিয়েছিল তারপর?
চন্দ্রিকার কথা আমি বিশ্বাস করিনি। বলেছিল, ও নাকি ওর এক আত্মীয়ের বাড়িতে চলে গিয়েছিল–বিডন স্ট্রিটের ওদিকে কোথায় যেন। ওর জ্যাঠামশাই হরনাথবাবুর অ্যাডভোকেটকে ওর সেই আত্মীয় নাকি অ্যাপ্রোচ করেছিলেন। কারণ চন্দ্রিকার নামে তখন হুলিয়া করেছে পুলিশ। দ্যাটস আ লং স্টোরি। চন্দ্রিকার কথার সত্যি মিথ্যে বোঝা কঠিন ছিল আমার পক্ষে।
চন্দ্রিকা এরপর ইন্দ্রজিতের পাল্লায় পড়েছে তুমি কী ভাবে জেনেছিলে?
চন্দ্রিকা একদিন কথায় কথায় বলেছিল, ইন্দ্রজিতের সঙ্গে তার যোগাযোগ হয়েছে আবার। আমি চাকরির ব্যবস্থা না করে দিলে সে ওর নাটকের দলে ঢুকবে। চন্দ্রিকাকে নিয়ে আমার মাথাব্যথা ছিল না। কাজেই আমি বলেছিলাম, চান্স পেলে ছেড়ো না। আসলে আমি ওকে এড়াতে চেয়েছিলাম।
কর্নেল হাসলেন। গত পরশু রবিবার সন্ধ্যায় ইন্দ্রজিতের নাটক দেখতে গিয়েছিলে তুমি। আমি তোমাকে দেখতে পেয়েছিলাম। কিন্তু নাটক শেষ হওয়ার পর ভিড়ে আর দেখিনি।
হেমেন্দ্র চমকে উঠলেন। তারপর শুকনো হেসে বললেন, হ্যাঁ। আপনাকেও দেখেছি। সামনে গেস্টের সিটে ছিলেন। তবে নাটক শেষ হওয়ার পর আমিও ভিড়ে আপনাকে আর খুঁজে পাইনি। বৃষ্টি পড়ছিল বলে বাড়ি চলে গেলাম। গিয়ে শুনি, বাবা আপনার বাড়িতে এসেছেন। গাড়ি পাঠাতে বলেছেন। তখন–
তুমি ডানদিকে দ্বিতীয় সারিতে ছিলে।
হেমেন্দ্র ব্যস্তভাবে বললেন, চন্দ্রিকা শনিবার অফিসে ফোন করেছিল। ও সত্যিই ইন্দ্রজিতের নাটকে চান্স পেয়েছে। আমি নাটকটা দেখলেও খুশি হবে। কিছুক্ষণ পরে একটা লোক এসে গেস্টকার্ড দিয়ে গেল। কাজেই নিছক কৌতূহলে আমি নাটক দেখতে গিয়েছিলাম।
একা গিয়েছিলে!
হেমেন্দ্র আবার শুকনো হাসলেন। চন্দ্রিকা আমার স্ত্রীর পরিচিত। কাজেই দুটো কার্ড পাঠালেও আমি একা যাওয়া উচিত মনে করেছিলাম। বলে উনি ভীষণ গম্ভীর হয়ে গেলেন। ঘড়ি দেখে বললেন, আপনি ডিটেকটিভ কথাটা শুনলে চটে যান। কাজেই কথাটা বলছি না। কে চন্দ্রিকার মার্ডার-মিস্ট্রি সলভ করার জন্য আপনাকে অ্যাপ্রোচ করেছে? ইন্দ্রজিৎ?
নাহ্। চন্দ্রিকা।
হেমেন্দ্র টেবিলের ওপর ঝুঁকে এলেন। চন্দ্রিকা বুঝতে পেরেছিল তাকে মার্ডার করা হবে?
চন্দ্রিকার কাছে একটা মূল্যবান কাগজ ছিল। সে বুঝতে পেরেছিল, ওটা কেড়ে নেওয়ার জন্য তাকে ফাঁদে ফেলা হয়েছে। কর্নেল একটু হেসে ফের বললেন, বাই এনি চান্স, তুমি রবিবার রাতে নাটক শেষ হওয়ার পর ওর সঙ্গে দেখা করার চেষ্টা করেছিলে?
হেমেন্দ্র আস্তে বললেন, হ্যাঁ। ওকে গ্রিনরুমে না পেয়ে চলে এসেছিলাম। গেটের কাছে দেখি, চন্দ্রিকা একটা ট্যাক্সিতে চাপছে। ইন্দ্রজিৎ দৌড়ে গেল ওর কাছে। তারপর দেখলাম, ট্যাক্সি চলে গেল। ইন্দ্রজিতের মুখোমুখি হওয়ার ইচ্ছে আমার ছিল না। তাই আমি আমার গাড়ির কাছে চলে গেলাম। দ্যাটস অল। কিন্তু চন্দ্রিকার মূল্যবান কাগজটা কী?
জানি না।
চন্দ্রিকাকে কেউ মার্ডার করে সেটা হাতিয়েছে?
তা-ও জানি না। আর তোমার সময় নষ্ট করব না। এবার তোমার বাবার কথায় আসা যাক। শুধু একটা প্রশ্ন। তোমার বাবার ঘরের সামনে কে একটা কাগজ ফেলে গেছে। তাতে লেখা আছে চাই চিচিং ফাঁক।