তার মানে?
মানে জানতে হলে সকাল আটটার মধ্যে আমার কাছে চলে এসো। ছাড়ছি। গুড নাইট। হ্যাঁভ আ নাইস স্লিপ, ডার্লিং!
ফোন রেখে কিছুক্ষণ চুপচাপ সিগারেট টানছিলাম। উদ্বিগ্ন হয়ে ভাবছিলাম, ইন্দ্রজিৎবাবুকে ডিস্কো খতম করে ফেলেনি তো? কিন্তু তার চেয়ে ভয়ের কথা, এবার কর্নেলকেই ভুতুড়ে ফোনে চাই চিচিং ফাঁক বলে কেউ উত্ত্যক্ত করছে। ডিস্কো নয় বলেই মনে হচ্ছে। সে হলে সোজাসুজি চার্জ করে বসত কর্নেলকে, আমার এই জিনিসটা চাই। চিচিং ফাঁক এই সাংকেতিক কথা বলার পাত্র নয় সে। তাছাড়া সে কর্নেলকে উত্ত্যক্ত করবেই বা কেন? কী লাভ হবে তাতে? এ নিশ্চয় অরিজিৎ লাহিড়ি যে তৃতীয় লোকের কথা বলছিলেন, তারই কাজ।….
.
সকালে কর্নেলের অ্যাপার্টমেন্টে গিয়ে দেখি, একটা প্রকাণ্ড বই খুলে বসে আছেন। বইয়ের পাতায় চোখ রেখেই বললেন, আজ সব কাগজে কলগার্ল খুন হেডিংয়ে চন্দ্রিকার খবর বেরিয়েছে।
বললাম, চোখ বুলিয়েছি। খুঁটিয়ে পড়িনি। ছাঁচে ফেলা খবর। কিন্তু আপনি এই সক্কালবেলা রহস্য ছেড়ে বইয়ে ডুব দিতে গেলেন দেখে অবাক লাগছে।
কর্নেল বইটা রেখে একটু হেসে বললেন, এটা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কার ব্রিটিশ আর্মিবেসের রেকর্ড। কোথায়-কোথায় সামরিক ঘাঁটি করা হয়েছিল, সেই সব ঘাঁটির সংক্ষিপ্ত ইতিহাস।
বুঝলাম, রাঙাটুলি আর্মিবেসের তথ্য খুঁজছেন। কিন্তু কেন?
নিছক কৌতূহল। বলে কর্নেল নিভে যাওয়া চুরুট ধরালেন। একটু পর ফের বললেন, ইন্দ্রজিৎবাবুর স্ত্রী মৃদুলা একটু আগে ফোন করেছিলেন।
ইন্দ্রজিৎবাবু বাড়ি ফিরেছেন কি?
নাহ্। মৃদুলা কাগজে চন্দ্রিকার খবর পড়ে খুব উত্তেজিত হয়ে উঠেছেন। চন্দ্রিকাকে উনি চিনতেন। কিন্তু চন্দ্রিকা কলগার্ল হয়েছে জানতেন না। বললেন যে, ওঁর স্বামীর সঙ্গে চন্দ্রিকা মাঝেমাঝে ওঁদের বাড়িতে যেত। সেই নিয়ে কোনও সন্দেহ জাগার কথা নয়। কারণ সৌরভ নাট্যগোষ্ঠীর আরও মেয়ে ওঁর স্বামীর সঙ্গে যেত। রিহার্সাল হতো ওঁদের বাড়িতেই।
ষষ্ঠী আমার জন্য কফি আনল। কফি খেতে খেতে বললাম, মৃদুলা তো রাঙাটুলির মেয়ে! চন্দ্রিকা সম্পর্কে নতুন কিছু জানতে পেরেছে ওঁর কাছে?
ফোনে বেশি কথা বলা যায় না। কর্নেল আস্তে বললেন, কফি খেয়ে নাও। বেরুব। মৃদুলা আমার জন্য অপেক্ষা করছেন।
ইন্দ্রজিৎ ব্যানার্জির বাড়ি লেকের কাছাকাছি। ফ্ল্যাটবাড়ি নয়, দোতলা বনেদী বাড়ি। গেটে লেখা আছে সৌরভ। একজন তাগড়াই গড়নের যুবককে সম্ভবত আমাদের জন্যই দাঁড় করিয়ে রেখেছিলেন মৃদুলা। তার পরনে জিনস। ফিল্মহিবোর কেতা আছে হাবভাবে। নমস্কার করে বলল, আসুন স্যার! ভেতরে গাড়ি রাখার জায়গা আছে।
সে গেট খুলে দিল। ছোট্ট লনের পর পোর্টিকো। সেখানে গাড়ি রেখে আমরা নামলাম। কর্নেল বললেন, আপনি কি সৌরভ নাট্যগোষ্ঠীর অভিনেতা?
যুবকটি হাসল। হ্যাঁ, স্যার! পরগাছা নাটকে আপনি গাবুর রোলে ছিলেন?
যুবকটি একটু অবাক হয়ে বলল, আপনি ঠিকই চিনেছেন স্যার। আমার নাম, সুশান্ত সেন। আপনার সব কথা স্যার, মৃদুলাদি বলেছেন আমাকে।
কর্নেল ঘরে ঢুকে বললেন, কী সব কথা? এই মানে–আপনি ডিটেকটিভ অফিসার …
কর্নেল জিভ কেটে বললেন, ছি, ছি! আমি ডিটেকটিভ নই। কথাটা একটা গালাগাল। কারণ টিকটিকি কথাটা ডিটেকটিভ থেকে এসেছে। যাই হোক, মিসেস
ব্যানার্জিকে খবর দিন।
সুশান্ত আরও অবাক হয়ে ভেতরে গেল। ঘরটা আধুনিক ছাঁদে সাজানো। রুচির ছাপ আছে। একটু পরে সুশান্ত ফিরে এসে বলল, মৃদুলাদি আসছেন। ফোনে কথা বলছেন কার সঙ্গে।
সুশান্তবাবু, আপনি কিন্তু অসাধারণ অভিনয় করেন। আপনার অভিনয় দেখে
আমি মুগ্ধ। তো আপনি থাকেন কোথায়?
সুশান্ত একটু ইতস্তত করে বলল, আমি এ বাড়িতেই থাকি স্যার। ইন্দ্রদা আমাকে অনেক কাজের দায়িত্ব দিয়েছেন। ধরুন, রিহার্সালের ব্যবস্থা করা হলো, বুকিং, নানা জায়গায় কন্ট্যাক্ট করা। ম্যানেজার বলতে পারেন।
চন্দ্রিকা রায় তো আপনাদের দলেই অভিনয় করত?
সুশান্ত চমকে উঠল। হ্যাঁ কাগজে দেখলাম মার্ডার হয়েছে। কিন্তু–
চন্দ্রিকা কলগার্ল ছিল, জানতেন না?
আজ্ঞে। তবে স্যার, আমার বরাবর কেমন একটা সন্দেহ হতো। চন্দ্রিকার হাবভাব দেখেই কেমন লাগত। তবে ফেবোসাস টাইপের মেয়ে ছিল।
সে থেমে গেল। মৃদুলা এসে নমস্কার করে বসলেন। চেহারায় উদ্বেগের ছাপ প্রকট। ঠোঁট কামড়ে ধরে আত্মসম্বরণ করে আস্তে বললেন, মিঃ লাহিড়ির সঙ্গে কথা বলছিলাম। সুশান্ত আপনার আসার খবর দিল। মিঃ লাহিড়িকে জানালাম আপনি এসেছেন। উনি বললেন, ফ্র্যাংকলি সব কথা যেন আপনাকে বলি। উনি সুশান্তর দিকে ঘুরে বললেন, চা করতে বলে এসেছি। গিয়ে দেখ তুমি।
সুশান্ত চলে গেলে মৃদুলা চাপা স্বরে বললেন, আমার হাজব্যান্ডকে কিডন্যাপ করেছে। এই দেখুন, কিছুক্ষণ আগে লেটার বক্সে সুশান্ত চিঠিটা পেয়েছে।
খামে ভরা চিঠিটা ওঁর মুঠোয় দুমড়ে গিয়েছিল। কর্নেল বের করে ভাঁজ সোজা করলেন। ঝুঁকে গেলাম ওঁর দিকে। দেখলাম, লেখা আছে :
ইন্দ্রজিৎ ব্যানার্জি আমাদের হাতে বন্দি। ৭২ ঘণ্টার মধ্যে রাঙাটুলির ভবানীমন্দিরে এক লক্ষ নগদ টাকা পৌঁছে দিলে তাকে ছেড়ে দেব। পুলিশকে জানালে আমরা জেনে যাব এবং সঙ্গে সঙ্গে আপনার স্বামীকে গুলি করে মারব। রাঙাটুলির ভবানী মন্দির কোথায় আপনি জানেন।