ফোনে ডাকুন ডিস্কোকে। বলুন সশরীরে হাজির হতে।
সে আসবে না। পাঠাবে তার ডামিকে।
আপনি নিশ্চিত হচ্ছেন কীভাবে?
আমি নিশ্চিত। ভুলে যেও না, স্বয়ং অরিজিও স্বীকার করে গেল, ডিস্কো তার কাছে একটা নাম মাত্র।
তাহলে এবার তৃতীয় লোকটিকে খুঁজে বের করাই আপনার প্ল্যান নিশ্চয়?
হ্যাঁ। কর্নেল চোখ বুজে বললেন। তাকে চিনতে পারলেই কে প্রকৃত ডিস্কো জানা যাবে সম্ভবত।
আমি উঠি কর্নেল।
যাবে? আচ্ছা। কর্নেল অন্যমনস্কভাবে কথাটা বললেন।….
.
কোথায় যেন পড়েছিলাম, Beware of those thoughts come in night! রাতের চিন্তা সম্পর্কে সাবধান! বিছানায় শোয়ার পর চিন্তা এসে আমাকে উত্ত্যক্ত করছিল। কোনও রহস্য নিয়ে চিন্তা আমার কাছে নতুন কিছু নয়–অন্তত কর্নেল নীলাদ্রি সরকারের সান্নিধ্যে আসার পর থেকে। কিন্তু সেই সব চিন্তা আলতো ছুঁয়ে গেছে মাত্র। আজ রাতের চিন্তা মাছির ঝাঁকের মতো মগজে ভনভন করছিল। অবশেষে মরিয়া হয়ে একটা বোঝাঁপড়ার জন্য আমার জানা তথ্যগুলো কাগজে লিখে ফেললাম।
পটভূমি ১: রাঙাটুলির জনৈক অজয় রায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় সামরিক ঘাঁটিতে কন্ট্রাক্টর ছিলেন। কোনও অপরাধে তাঁর জেল হয়। জেলেই তিনি মারা যান। তাঁ স্ত্রী শিশুকন্যা চন্দ্রিকাকে নিয়ে স্বামীর মাসতুতো দাদা হরনাথ সিংহের কাছে আশ্রয় নেন। হরনাথ চন্দ্রিকার বিয়ে দিয়েছিলেন এম এল এ বটুক চৌধুরীর ছেলে রথীনের সঙ্গে। রথীন কলকাতায় থাকার সময় খুন হয়ে যায়। স্বামীর হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে চন্দ্রিকা জড়িয়ে পড়ে। আইনজীবী অলকবাবুর দ্বারস্থ হয়। তারপর সে কোনও ঘটনাচক্রে ডিস্কোর পাল্লায় পড়ে। মামলা থেকে বেঁচে গেলেও কলগার্লের ভূমিকায় তাকে নামতে হয়েছিল। তারপর তার নাট্য পরিচালক ইন্দ্রজিতের সঙ্গে চেনাজানা হয় এবং নাটকে নামার সুযোগ পায়। কিন্তু ডিস্কো নাকি এটা চায়নি। ইন্দ্রজিৎকে হুমকি দেয়। ইন্দ্রজিৎ কর্নেল নীলাদ্রি সরকারের দ্বারস্থ হন তাঁর বন্ধু ডি সি ডি ডি অরিজিৎ লাহিড়ির পরামর্শে। বোঝা যায়, বহ্মপী ডিস্কোর পরিচয় জানতেই ইন্দ্রজিৎ কর্নেলের দ্বারস্থ হন। ইন্দ্রজিৎ বলছিলেন, নিজের হাতে ডিস্কোকে শাস্তি দেবেন।
পটভূমি ২ : চন্দ্রিকাকে সম্প্রতি কেউ অদ্ভুত ভাষায় উত্ত্যক্ত করছিল। চাই চিচিং ফাঁক বলত কি সে? যাইহোক, ইন্দ্রজিতের মুখে কর্নেলের পরিচয় পেয়ে চন্দ্রিকা গতরাতে কর্নেলকে অনুসরণ করে আসে এবং ইচ্ছে করেই (?) পার্সটা আমাদের গাড়িতে ফেলে যায়। পার্সের ভেতর অদ্ভুত কোড লেখা একটা চিরকুট পাওয়া গেছে। এর পর চন্দ্রিকা তার ফ্ল্যাটে খুন হয়েছে। ডিস্কো যার হাতে ডুপ্লিকেট চাবি পাঠিয়েছিল, তার নাম স্বপন। সে-ও খুন হয়েছে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, চন্দ্রিকা প্রাইভেট ডিটেকটিভ কে, কে হালদারের দ্বারস্থ হয়েছিল। তাঁকে বলেছিল, তার কোনো বিপদ (খুন) হলে রাঙাটুলির হরনাথকে খবরটা জানাতে হবে।
পটভূমি ৩ : রাজনীতি করা লোক রাঙাটুলির বটুক চৌধুরীর ভগ্নিপতি অমরেন্দ্র সিংহরায়কে সম্প্রতি কে বা কারা অদ্ভুতভাবে উত্ত্যক্ত করছে। চাই চিচিং ফাঁক (?) লেখা চিরকুট ফেলেছে অমরেন্দ্রর ঘরের দরজায়। অমরেন্দ্র এবং বটুক চৌধুরীর মধ্যে রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিল। বটুকবাবুও সম্ভবত (?) খুন হয়েছিলেন। এদিকে বটুকবাবুর ছেলে রথীন থাকত কলকাতায়। অমরেন্দ্রর ছেলে হেমেন্দ্রর বাড়ির পাশেই সে থাকত। হেমেন্দ্রর সঙ্গে তার বাবা অমরেন্দ্রর নাকি ভাল সম্পর্ক নেই (কর্নেলের বক্তব্য)। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, বটুকবাবুর নাম করে উড়োচিঠি লিখে অমরেন্দ্রর এক কর্মচারী যোগেন অমরেন্দ্রকে ভয় দেখাত। গত বছর কর্নেল তাকে ধরিয়ে দেন অর্থাৎ উড়োচিঠির রহস্য ফাঁস হয়। কেন যোগেন এ কাজ করত? কর্নেল জানাননি আমাকে।
এই সময় ফোন বেজে উঠল। বিরক্ত হয়ে ফোন তুলে অভ্যাসমতো বললাম, রং নাম্বার।
রাইট নাম্বার ডার্লিং!
কর্নেল! কী ব্যাপার? রাত বারোটা বাজে।
তুমি চলে যাওয়ার কিছুক্ষণ পর থেকে চারবার কেউ ফোন করে আমাকে বলেছে, চাই চিচিং ফাঁক। দারুণ ইন্টারেস্টিং নয়?
আমিই কিন্তু বলেছিলাম কথাটা চাই চিচিং ফাঁক।
তোমার বুদ্ধির প্রশংসা করছি।
কিন্তু শুধু এই কথাটা জানাবার জন্য এত রাতে নিশ্চয় ফোন করছেন না?
তুমি বুদ্ধিমান জয়ন্ত! ইন্দ্রজিৎ ব্যানার্জি সকালে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন। বিকেলে আমার অ্যাপার্টমেন্টে এসেছিলেন। তখন তুমি ছিলে। কিন্তু উনি এখনও বাড়ি ফেরেননি।
বলেন কী? কে জানাল আপনাকে?
ওর স্ত্রী অরিজিৎকে ফোন করেছিলেন। অরিজিৎ ওঁর খোঁজে পুলিশ লড়িয়ে দিয়েছে। একটু আগে আমাকে অরিজিৎ ফোনে জানাল, এত রাতে ডিসটার্ব করার জন্য দুঃখিত। যা-ই হোক, ইন্দ্রজিৎবাবুর নিখোঁজ হওয়ার চেয়ে অদ্ভুত ঘটনা, অরিজিৎই বলল যে, ইন্দ্রজিৎবাবুর স্ত্রী মৃদুলা রাঙাটুলির মেয়ে। কথায় কথায় অরিজিৎকে সেটা জানিয়েছেন মৃদুলা। অরিজিৎ যেহেতু আমার কাছে তখন রাঙাটুলির ইকোলজিস্ট অনাথবন্ধু রায়ের কথা শুনেছিল, তাই রাঙাটুলি কথাটা ওর মনে ছিল। তবে কথাটা অরিজিৎ নেহাত ক্যাজুয়ালি আমাকে জানাল। অরিজিৎকে আমি অমরেন্দ্র সিংহরায়ের কথা জানালাম না।
ব্যস্! এ যে তাহলে রাঙাটুলি রহস্য হয়ে উঠল।