করি না। আমার ছেলে করে। আমি অবশ্য কনসাল্ট্যান্টের কাজকর্ম করি আজকাল। কোর্টে ছোটাছুটি আর এ বয়সে সম্ভব নয়। আপনাদের জন্য চা বলি?
থ্যাংকস। কর্নেল হাত তুলে নিষেধ করলেন। বাই এনি চান্স, আজ কেউ চন্দ্রিকা প্রসঙ্গে আপনার কাছে কথা বলতে এসেছিল কি?
অলকবাবু মাথা নাড়ালেন। না তো! কেন?
যদি কেউ আসে, পাত্তা দেবেন না–আমার অনুরোধ। আই মিন, সি বি আইয়ের পক্ষ থেকে এটা রিকোয়েস্ট।
না, না! কী বলছেন? অলকবাবু ব্যস্তভাবে বললেন, পাত্তাই দেব না।
আমাদের কথাও যেন বলবেন না প্লিজ!
কক্ষনো না। নেভার! আই অ্যাম আ ল-অ্যাবাইডিং সিটিজেন অব দিস কান্ট্রি। তাছাড়া আমি লইয়ার। আই অ্যাসিওর ইউ কর্নেলসাহেব!…
.
ফেরার পথে বললাম, বড় অদ্ভুত ব্যাপার। মনে হচ্ছে, এবার আপনি একটা মহাভারত রহস্যে হাবুডুবু খাবেন। অসংখ্য এপিসোড!। অসংখ্য ট্র্যাজেডি। কোনটার সঙ্গে কোনটার সম্পর্ক আছে, খুঁজে বের করাই কঠিন। কিন্তু শুরু সামান্য একটা পরগাছা থেকে।
কর্নেল চুরুটের ধোঁয়ার মধ্যে বললেন, তুমি ঠিক ধরেছ। তোমাকে গতরাত্রে বলেছিলাম অর্কিডের একটা ফুল থেকে ৪৭ লক্ষ বীজকণিকা ছড়িয়ে যাওয়ার কথা।
বিষাক্ত ব্যাকটেরিয়াসহ।
য়ু আর ড্যাম রাইট, ডার্লিং।
সত্যি বস্! আমি কোনও খেই পাচ্ছি না।
কর্নেল চুপ করে গেলেন। চোখ বন্ধ। দাঁতে কামড়ানো চুরুট। সারা পথ আর মুখ খুললেন না। আমি মহাভারতরহস্য থেকে এবার দুরে সরে থাকার চেষ্টা করছিলাম।
ভেবেছিলাম, কর্নেলকে বাড়ি পোঁছে দিয়ে কেটে পড়ব। মাথা ঝিমঝিম করছে। কিন্তু কর্নেল আসতে দিলেন না। তেতলার অ্যাপার্টমেন্টে ডোরবেলের সুইচ টিপলে ষষ্ঠী দরজা খুলে দিল। তারপর চাপাস্বরে বলল, নালবাজারের নাহিড়িসায়েব এসে বসে আছেন বাবামশাই!
বসে আছে! বলিস কী রে?
আজ্ঞে। কোফি করে দিয়েছি। খাচ্ছেন।
কর্নেল ড্রয়িংরুমে ঢুকে বললেন, তোমাকে আশা করছিলাম অরিজিৎ। বিশেষ করে তোমার বন্ধু ইন্দ্রজিৎবাবুর সঙ্গে তোমার অ্যাপয়েন্টমেন্ট আছে জানার পর।
ডিটেকটিভ ডিপার্টমেন্টের ডেপুটি কমিশনার অরিজিৎ লাহিড়ি হাসলেন। হাতে প্রচুর সময় ছিল। তাই অন্তত ষষ্ঠীর সুস্বাদু কফিটা খেয়ে যাই ভেবেছিলাম। এই যে জয়ন্তবাবু! কেমন আছেন মশাই? অনেকদিন দেখাসাক্ষাৎ নেই।
বললাম, কর্নেলের পাল্লায় পড়লেই আমার সঙ্গে রেগুলার দেখা হবে মিঃ লাহিড়ি!
কর্নেল বসে বললেন, বেলেঘাটার ওখানে ক্যানেলে একটা বডি পাওয়া গেছে তো?
হ্যাঁ। আমাদের অফিসাররা বলছেন, ডিস্কোসাহেবের লোক কিন্তু আপনি জেনে গেছেন–
কী নাম?
স্বপন দাশ। ইয়ং ম্যান। নিউমার্কেটে একটা ভিডিও ক্যাসেটের দোকান আছে। বাড়ি তালতলা এরিয়ায়। ক্রিমিন্যাল তো বটেই। অরিজিৎ কফিতে চুমুক দিয়ে ফের বললেন, আশ্চর্য ব্যাপার! পকেটে একটা দিশি পিস্তল পাওয়া গেছে। তার মানে, নিরস্ত্র ছিল না। অথচ নিজেই মাথার পিছনে গুলি খেয়ে মারা পড়েছে। পয়েন্ট টোয়েন্টি টু রিভলভারের গুলি। রাত্রে বৃষ্টি পড়েছিল খুব। তাই খালের ধারে গাড়ির টায়ারের দাগ পাওয়া গেছে। দরজা খুলে গড়িয়ে বডি খালে ফেলেছে।
তাহলে বলা যায়, ওলসন হাউসের কাছেই কেউ ওত পেতে ছিল!
তাই মনে হচ্ছে।
আমি বললাম, ঠিক এই কথাটাই কর্নেলকে বলছিলাম। কর্নেল বললেন, এটা নাকি আমার নিছক ধারণা?
অরিজিৎ গম্ভীর মুখে বললেন, আমাদেরও নিছক ধারণাই। উই আর নট শিওর।
ইন্দ্রজিৎবাবু ডিস্কোর সঙ্গে ডুয়েল লড়তে চান। কর্নেল টুপি খুলে টাকে হাত মুলোতে বুলোতে বললেন। ডিস্কোর পরিচয় তুমিও সম্ভবত জানো না অরিজৎ!
নাহ্। দ্যাটস্ ওনলি নেম টু মি।
কোনও হিন্ট পাওনি তার সম্পর্কে?
শুধু এটুকু জানি, তার নাকি অনেক ডামি আছে। কোনটা রিয়্যাল ডিস্কো, তা নাকি কেউ-ই জানে না। অরিজিৎ হাসলেন। মাঝেমাঝে আমার মনে হয়, নামটাই একটা গুজব। ভূতের মতো। হয়তো অত্যন্ত সাধারণ কিংবা চেনা কেউ এই নাম নিয়ে অদ্ভুত খেলা খেলছে। যাই হক, ডিস্কো ইজ আ মিস্ট্রি। কিন্তু আপনি কীভাবে জানলেন বডি পাওয়ার খবর?
ডিস্কো জানিয়েছে।
অ্যাঁ?
হ্যাঁ ডার্লিং! ডিস্কোর সঙ্গে আমার যোগাযোগ হয়েছে। তবে জানি না সেটা
অমি কি না।
অরিজিৎ মুচকি হেসে বললেন, জয়ন্তবাবুদের কাগজে এক ভদ্রলোক আপনার ডার্লিং বলা নিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করেছেন।
আমি বললাম, পড়েছেন? কর্নেলের ইংরেজি বলাতেও ওঁর আপত্তি!
ভিন্নরুচির্হি জনাঃ! অরিজিৎ সিগারেট ধরিয়ে বললেন, আমার মতে, ডার্লিং বলাটা কর্নেলের একটা টিপিক্যাল ফিচার। এটাই ওঁর বৈশিষ্ট্য। ডার্লিং বলছেন না কর্নেল নীলাদ্রি সরকার, এটা অকল্পনীয়। তাছাড়া ঐতিহাসিক কারণে তো বটেই, আরও নানা কারণে ইংরেজি বলাটা আমাদের চরিত্রগত বৈশিষ্ট্য। ভারতের মতো একটা বহুভাষী দেশে ইংরেজি ছাড়া চলে না। তাছাড়া-ফর এক্সজাম্পল, এমকিউজ মি কথাটা বাংলা করলে কী অদ্ভুত শোনাবে ভাবুন।
অরিজিৎ ইংরেজি নিয়ে কিছুক্ষণ বক্তৃতা চালিয়ে গেলেন। ষষ্ঠী আমাদের জন্য কফি আনল। অরিজিৎ বললেন, এই যে ষষ্ঠীর কফি!। এছাড়া কর্নেলকে কল্পনা করাই তো অসম্ভব। সেই সমালোচকের অবস্থা সত্যি অনাথের মতো। আই ফিল– পিটি ফর হিম।
কর্নেল বললেন, অনাথ? অনাথ কেন?
প্রেসিডেন্সিতে আমার এক বন্ধু ছিল অনাথ নামে। ইন্দ্রজিৎও তাকে চিনত। ইংরেজি শুনলে চটে যেত। কিন্তু উত্তেজনার সময় সে কী সাংঘাতিক ইংরেজি বলত ভাবা যায় না।