আবার বলছি, আপনি বুদ্ধিমান ইন্দ্রজিৎবাবু।
আমি বললাম, কিন্তু স্টেজে অভিনয়ের সময় চন্দ্রিকা পার্স কারুর কাছে রেখেছিল নিশ্চয়?
কর্নেল তুম্বো মুখে বললেন, ছোট্ট একটা পার্স সে পোশাকের মধ্যে লুকিয়ে রেখেও অভিনয় করতে পারে স্টেজে। তা-ই না ইন্দ্রজিৎবাবু?
ইন্দ্রজিৎবাবুসায় দিলেন। তারপর লম্বা শ্বাস ছেড়ে বললেন, আমার দ্বিতীয় ভুল, ডিস্কো ফোনে আমাকে চন্দ্রিকার সঙ্গে সম্পর্ক ত্যাগ করতেই হুমকি দিত, সেই কথাটা খুলে আপনাকে বলিনি। শুধু বলেছিলাম, ওলসন হাউসে যেতে কেউ মকি দিচ্ছে। আমার জানানো উচিত ছিল, চন্দ্রিকার সঙ্গে আমার কী সম্পর্ক। জনাইনি।
আপনার গ্রুপে অভিনয় করে একজন কলগার্ল। আপনি এটুকু অবশ্য বলেছিলেন।
ইন্দ্রজিৎবাবু আস্তে বললেন, হ্যাঁ। কিন্তু বলিনি–আসলে লজ্জাবশতই বলতে পারিনি, চন্দ্রিকা অভিজাত ঘরের মেয়ে। নিজের স্বামীকে খুন করে প্রাণ বাঁচানোর জন্যই শয়তান ডিস্কোর আশ্রয় নিয়েছিল। কর্নেল সরকার! চন্দ্রিকা লাংঘাতিক মেয়ে ছিল, এটা যেমন সত্য, তেমনি এ-ও সত্য, তার স্বামী রথীন চৌধুরীও ছিল একজন নরপিশাচ। হৃদয়হীন, স্বার্থপর, বর্বর। চন্দ্রিকাকে রথীনই প্রথম পাপের পথে ঠেলে দেয়। তার জীবনের এই শোচনীয় পরিণতির জন্য সে-ই দায়ী।
ডিস্কো কে?
ইন্দ্রজিৎবাবু তাকালেন। দৃষ্টিটা ক্রুর মনে হলো। বললেন, জানি না। আপনি এবার তাকে খুঁজে বের করুন। আমি নিজের হাতে তাকে শাস্তি দেব।
চন্দ্রিকা তার কোনও পরিচয় দেয়নি?
না। কারণ চন্দ্রিকা কখনও তাকে দেখেনি। ডিস্কো আড়ালে থেকে সব চালায়।
আপনি হরনাথ সিংহকে চেনেন?
হ-র-না-থ সিংহ? ইন্দ্রজিৎবাবু আস্তে উচ্চারণ করলেন কথাটা।
হ্যাঁ। রাঙাটুলির হরনাথ সিংহ।
মাই গুডনেস! নড়ে বসলেন ইন্দ্রজিৎবাবু। চন্দ্রিকার স্বামী ছিল রাঙাটুলির লোক। চন্দ্রিকাঁদের বাড়িও তো সেখানে। চন্দ্রিকা আমাকে বলেছিল।
চন্দ্রিকার সঙ্গে কোথায় কী করে আপনার পরিচয় হয়েছিল?
পার্ক স্ট্রিটের একটা বারে। মুনলাইট বার। বারের একজন অ্যাংলো ওয়েটার চ্যাংকো আমার সঙ্গে তার পরিচয় করিয়ে দেয়। ওই বারে কলগার্লরা যায়। তো প্রথম আলাপেই চন্দ্রিকা থিয়েটারে অভিনয়ের সুযোগ দিতে অনুরোধ করেছিল।
কর্নেল ষষ্ঠীচরণকে ডেকে কফি আনতে বললেন। তারপর বললেন, হরনাথ সিংহের কথা চন্দ্রিকা আপনাকে বলেনি কখনও। মনে করে দেখুন।
নাহ। মনে পড়ছে না।
একটু পরে কর্নেল বললেন, চন্দ্রিকার পার্সে অ্যাডভোকেটের কার্ড পাওয়ার অর্থ বোঝা গেল সম্ভবত। মার্ডার চার্জ ছিল চন্দ্রিকার নামে।
হ্যাঁ। সে প্রায় বছর সাত-আট আগের কেস। তবে ডিস্কো প্রভাবশালী লোক। কেস থেকে তাকে বাঁচায়।
ডিস্কোর সঙ্গে চন্দ্রিকার কীভাবে পরিচয় হয় আপনি জানেন?
জানি না। চন্দ্রিকা খুলে কিছু বলেনি।
আপনি কি জানেন, চন্দ্রিকা ইদানিং ডিস্কোকে ব্ল্যাকমেল করত কি না?
বলেনি আমাকে। ওই যে বললাম, ওর হাত থেকে বেরিয়ে আসতে চেয়েছিল।
এই সময় ফোন বাজল। কর্নেলের ইশারায় ফোন তুলে সাড়া দিলাম। কোনও মেয়ে জানতে চাইছে, ফোনের নাম্বার এই কি না। বললাম, হ্যাঁ। বলুন, কাকে চাই?
জবাব এল, এখানে কথা বলুন। তারপর পুরুষকণ্ঠে কেউ বলল, হ্যালো!
কাকে চাই বলুন?
কর্নেল নীলাদ্রি সরকারকে।
কে বলছেন আপনি?
ডিস্কো।
ঝটপট ফোনের মাউথপিসে হাত চাপা দিয়ে কর্নেলকে বললাম, ডিস্কো।
কর্নেল ফোন নিয়ে বললেন, বলুন মিঃ ডিস্কো! …আমাকে চেনেন তাহলে? কিন্তু দুপুরে তখন তো…ও। পরে খোঁজ নিয়ে পরিচয় পেলেন? ধন্যবাদ।.বলেন কী! ওলসনসায়েব…ঠিক আছে। প্রাণের ভয়ে বুড়োমানুষ আমার নাম করেছেন। পার্স পেয়েছেন তো?..না, না। ধন্যবাদ দেওয়ার কী আছে?…..হ্যাঁ মিঃ ডিস্কো! চন্দ্রিকার খুনী আপনি নন।… নিশ্চয়! আই মাস্ট ফাইন্ড আউট…..জাস্ট আ মিনিট! কালরাত্রে আপনি কার হাত দিয়ে ফ্ল্যাটের ডুপ্লিকেট চাবি……ও মাই গড! সে কী! কোথায়?…ঠিক আছে। …হ্যাঁ, বুঝতে পারছি। হ্যালো! হ্যালো! হ্যালো!
বুঝলাম, লাইন কেটে গেল। কর্নেল ফোন রেখে গম্ভীর মুখে বললেন, যাই হোক, ডিস্কোর সঙ্গে এতক্ষণে যোগাযোগ হলো। তখন ফোনে ওর ডামি নাকি কথা বলেছিল। বুঝলে জয়ন্ত? অবশ্য এ-ও ডিস্কোর ডামি কি না বলা কঠিন। তবে অদ্ভুত ঘটনা, যে লোকটিকে দিয়ে ডিস্কো ডুপ্লিকেট চাবি পাঠিয়েছিল, তার ডেডবডি পাওয়া গেছে বেলেঘাটার কাছে ক্যানেলে। শট ডেড।
চমকে উঠে বললাম, তা হলে ওলসনসায়েবের ধারণাই পরোক্ষে সত্যি। যে চাবি এনেছিল, সেই…
ইন্দ্রজিৎবাবু ক্রুদ্ধ স্বরে বলে উঠলেন, ফোনটা আমাকে দেওয়া উচিত ছিল কর্নেল সরকার।
ষষ্ঠী কফি নিয়ে এল। কর্নেল বললেন, কফি খান ইন্দ্রজিৎবাবু! উত্তেজিত হয়ে লাভ নেই।
কফি খেতে খেতে ইন্দ্রজিৎবাবু বললেন, চন্দ্রিকার পার্সটা শয়তান ডিস্কোকে ফেরত দেওয়া ঠিক হয়নি। তারপর ভীষণ গম্ভীর হয়ে গেলেন। কিছুক্ষণ ঘরে স্তব্ধতা ঘনিয়ে এল। কর্নেল চোখ বুজে ইজিচেয়ারে হেলান দিয়েছিলেন। ওই অবস্থায় কফিতে দিব্যি চুমুক দিচ্ছিলেন। ইন্দ্রজিৎবাবু কফি শেষ করে ঘড়ি দেখে বললেন, উঠি। আবার যোগাযোগ করব। ডি সি ডি ডি অরিজিৎ লাহিড়ির সঙ্গে অ্যাপয়েন্টমেন্ট আছে। কর্নেল সরকার! আপনি ডিস্কোকে আমার মুখোমুখি দাঁড় লাতে পারলে আমি খুশি হব।