কেয়া চুপচাপ বসে আঙুল খুঁটছিল। মুখ তুলে আস্তে বলল, রঞ্জনের ব্যাংক ডিপজিটের টাকা আমি কি পাব না কর্নেল?
কর্নেল হাসলেন।…আর বাধা দেবার কেউ নেই। প্রণবের বাবা এবং প্রণব সাক্ষী দেবে, তাদের ভাড়াটের নাম ছিল তপেশ বসাক। একই নামে দুজন লোক থাকতে পারে বৈকি। তোমার বিয়ের ডকুমেন্ট তো রয়েইছে।
সৌম্য বললেন, ব্যাংক ডিপজিটের কাগজপত্রে আমানতকারীর বাবার নাম লিখতে হয় না। কিন্তু সিগনেচার? পারিজাত ট্রান্সপোর্টের ক্লার্ক তপেশের সিগনেচার ওঁদের কাগজপত্র থেকে উদ্ধার করে দেব। ডোন্ট ওরি! টাকা তুমিই পাবে।
দরজায় টোকার শব্দ। কর্নেল প্যন্টের পকেটের ভেতর রিভলবারে হাত রেখে দরজা খুললেন। হোটেলের পরিচারক কফি-পকৌড়া এনেছে। নিজের সতর্কতায় নিজেই হেসে ফেললেন। বেলুন চুপসে গেছে! ব্রতীন দাশ এখন হয়তো কলকাতার পথে। কাগজের খবর দেখেই ছুটে গেছেন। করুণ অবস্থা!
কফি খেতে খেতে সৌম্য একটু সংকোচের সঙ্গে বললেন, সুভদ্রকে ব্রিফকেসটা ফেরত দিতে হবে। নৈলে আমি রেসপন্সি থেকে যাবো।
কর্নেল চোখ বুজে অভ্যাসমতো দুলতে দুলতে বললেন, আপনারা কলকাতা ফিরছেন কবে?
কালই ফিরতে চাই। কিন্তু সুভদ্রের জিনিসটা—
জিনিসটা বেআইনি। কাজেই গঙ্গায় ফেলে দিয়েছি।
সর্বনাশ! সৌম্য চৌধুরি নড়ে বসলেন। সুভদ্র ফেরত চাইলে কী বললো?
সত্যি যা ঘটেছে, বলবেন। বলবেন, কর্নেল নীলাদ্রি সরকার কেড়ে নিয়েছেন।
সুভদ্র যদি বিশ্বাস না করে?
ঠিক আছে। আমিই ওকে ট্রাংককল করে জানিয়ে দেবো। আশা করি, সুভদ্র আমাকে চিনেছে। যদি না চিনে থাকে, চিনিয়ে দিতেও পিছপা নই। কর্নেল নীলাদ্রি সরকারের জীবনে অনেক সুভদ্র এসেছে মিঃ চৌধুরি!
কেয়া পাংশু মুখে বলল, শোনো। আমরা রাতের ট্রেনেই ফিরে যাই। রাত দশটায় একা ট্রেন আছে। সকালে পৌঁছে যাবো। এখানে আর থাকতে ইচ্ছে করছে না।
সৌম্য গম্ভীরমুখে উঠে দাঁড়ালেন। বললেন, চলি কর্নেল! দরজার কাছে। গিয়ে হঠাৎ ঘুরলেন। আস্তে বললেন ফের, আমি আর যাই হই, খুনী নই। জীবনে কখনও মানুষের গায়ে হাত তুলিনি। হাবিপ্লবী দলের অ্যাকশান স্কোয়াডে ছিলুম। কিন্তু নিজের হাতে কিছু করিনি। এতকাল পরে মানুষ খুন করতে হাত তুলেছিলুম। আপনি আমাকে বাঁচিয়ে দিয়েছেন সেই পাপ থেকে। আমি আপনার প্রতি কৃতজ্ঞ। নমস্কার!
ওরা বেরিয়ে গেলে কর্নেল দরজা বন্ধ করে দিলেন। ইজিচেয়ারে বসে দৈনিক সত্যসেবক পত্রিকার পাতায় চোখ রাখলেন। আবার খুঁটিয়ে খবরটা পড়লেন। তারপর হেলান দিয়ে চুরুট টানতে থাকলেন। চোখ বন্ধ। গোপন সত্যে পৌঁছুতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সত্য জিনিসটাই এমন, কিছুতেই তাকে (পন রাখা যায় না। সত্য নিজের জোরেই বেরিয়ে আসে। ইতিহাসের এই এক নিয়ম। হয়তো সময় লাগে, তবু সে শেষ পর্যন্ত আত্মপ্রকাশ করে। তাকে কিছুতেই চাপা দিয়ে রাখা যায় না।…