এসেছিল! মিরাকিউলাসলি হঠাৎ উল্টো প্রেসার এল। আই মিন, চাকাটা উল্টোদিকে ঘুরতে শুরু করল। বিমলবাবুর পাশের ফ্ল্যাটের মিঃ অ্যান্ড মিসেস। প্রধান এবং আরও ফ্ল্যাটের কিছু লোককে জেরা করে জানা গেছে, খুনের দিন বিকেলে শ্যামল মজুমদারের সঙ্গে বিমলবাবু চড়া গলায় ঝগড়া করছিলেন।
শ্যামলবাবুর আত্মীয় তো মিনিস্টার বলেছিলে! তিনি নীরব?
অরিজিৎ হাসলেন।…আমার ধারণা খবরটা বোগাস। শ্যামলবাবুর নিজের রটনা। নৈলে সেই মিনিস্টার–যিনিই হোন, ওঁকে বাঁচাতে পাল্টা চাপ দিতেন। জামিন নিতেও কেউ চেষ্টা করছে না পর্যন্ত। এদিকে আরও একজনের নাম এই কেসে জড়িত। তাকে সনাক্ত করেছেন প্রধান দম্পতি। শ্যামলকান্তি এবং বিমলবাবুর এক বন্ধু সৌম্য চৌধুরী। তিনি গা ঢাকা দিয়েছেন। খোঁজা হচ্ছে।
আবার সব জট পাকিয়ে গেল, ডার্লিং! গেরো প্রায় খুলে এনেছিলুম!
সে কী!
পরে বলব। আপাতত শুধু বলছি, আবার অন্ধকারে পড়ে গেলুম। আচ্ছা, রাখছি।…
প্রণব একটা সায়েন্স ম্যাগাজিনের পাতা ওল্টাচ্ছিল। বলল, তাহলে আসি, কর্নেল সরকার।
ঠিক আছে। দরকার হলে পরে যোগাযোগ করব।
কর্নেল দরজা পর্যন্ত এগিয়ে দিতে গেলেন। প্রণব বেরুলে হঠাৎ বললেন, এক মিনিট। তুমি সৌম্য চৌধুরি নামে কাউকে চেনো?
প্রণব হাসল…আমি একটু কম চিনি। তবে কেয়া বেশি চেনে।
কর্নেল জিজ্ঞাসু দৃষ্টে তাকালেন।
প্রণব বলল, কেয়াকে আপনি তো চেনেন বুঝলুম। কথাটা তার কাছেই জেনে নেবেন।
একটু আভাস দাও, প্রণব!
সৌম্য কেয়াকে বিয়ে করতে চেয়েছিল। বাট হি বিট্রেইড হার। তখন রঞ্জন কেয়াকে বিয়ে করে।
প্রণব সিঁড়ি দিয়ে নেমে গেল! কর্নেল একটু দাঁড়িয়ে থাকার পর দরজা বন্ধ করলেন। ড্রইং রুমে ফিরে আরামকেদারায় বসে চোখ বুজে অভ্যাসমতো দুলতে শুরু করলেন। আরও জটিল হয়ে গেল সব। শ্যামলকান্তিকে গ্রেপ্তারের বাধা হঠাৎ সরে গেল কেন? নেপথ্যে অন্ধকারে বসে কে খেলা করছে। এভাবে? সৌম্য চৌধুরী ফেরার হয়ে গেছেন। ঝানু লোক, বোঝা যায়। কিন্তু সুভদ্র সম্পর্কে অরিজিৎ নীরব। তার মানে, সে অভিযুক্ত নয়। সব গুলিয়ে যাচ্ছে।…
১৫. কেয়ার আবির্ভাব
দুপুরে বৃষ্টি কমে গেছে। মেঘ ভেঙে রোদ্র ফুটেছে। কিন্তু কী হিম! এত হিম কলকাতায় কখনও পড়েনি। কর্নেল টেবিলে রঞ্জন মিত্রের ক্যালেন্ডারটা নিয়ে আবার বসেছেন। ১৭ এবং ২২ জুন ৫ আগস্ট, ১২ এবং ১৯ অক্টোবর, ১৫ ডিসেম্বর চিহ্নিত। ১৫ ডিসেম্বরে ঢ্যারাচিহ্ন। আতস কাঁচে খুঁটিয়ে অন্যান্য মাসগুলোর তারিখ দেখছিলেন কর্নেল।
১৫ ডিসেম্বর ঢ্যারাচিহ্ন কেন? বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ দিন, অথবা কিছুর সমাপ্তি? হঠাৎ লক্ষ্য করলেন, ডটপেনের কালি ফুরিয়ে গিয়েছিল কারণ ঢ্যারার নিচে বাঁদিকের অংশ পরিষ্কার ফোটেনি।
টেবিল ল্যাম্প জ্বেলে আতস কাচ রাখলেন। কালিহীন রেখায় একটা হরফের দাগ ফুটে উঠল। ইংরেজি হরফে জে। কী হতে পারে এটা? কোনো নামের আদ্যাক্ষর?
কলিং বেল বাজল। দ্রুত ক্যালেন্ডারটা গুটিয়ে ড্রয়ারে ঢোকালেন। ষষ্ঠী বোধকরি ঘুমোচ্ছিল। দেরি করে দরজা খুলল। কেউ এলে তাকে বসিয়ে রেখে ষষ্ঠী খবর দেয় আগে। কিন্তু সে সে সুযোগ পেল না। কেয়া এসে ঢুকল ড্রইং রুমে। বিপর্যস্ত চেহারা। কর্নেল বললেন, বসো! কেয়া ধপাস করে বসে পড়ল সোফায়।
কর্নেল গিয়ে মুখোমুখি বসে বললেন, বলো, ডার্লিং!
কেয়া ভাঙা গলায় বলল, পুলিশ আমাদের বাড়ি সার্চ করেছে কিছুক্ষণ আগে সৌম্যদা সম্পর্কে জিগ্যেস করছিল। সৌম্যদা–
সৌম্য চৌধুরি! কর্নেল আস্তে বললেন। ওঁকে চিনি।
কেয়া বলল, সৌম্যদার সঙ্গে এখন আমার কিসের সম্পর্ক? পুলিশ আমাকে খুব থ্রেট করল। এ কী অদ্ভুত ব্যাপার দেখুন তো? এ নিশ্চয় ওই মেয়েটার চক্রান্ত। আমার নামে আজেবাজে কথা বলে পুলিশ লেলিয়ে দিয়েছে।
কর্নেল নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে বললেন, সৌম্যের সঙ্গে তোমার একসময় সম্পর্ক ছিল, কেয়া!
ছিল। কেয়া স্বীকার করল। কিন্তু সে তো অনেক আগের ব্যাপার। ওর পরিচয় পাওয়ার পর আর ওর সঙ্গে মিশতুম না। ও একটা লম্পট, মাতাল। বাবা পয়সা রেখে গেছে। দুহাতে ওড়ায়।
কেয়া, তুমি রঞ্জন মিত্র নামে কাউকে চেনো?
কেয়া চমকে উঠল। মাথাটা একটু নাড়ল।
কর্নেল শক্ত গলায় বললেন, কেয়া, তুমি রঞ্জনকে ভালই চেনো। সে তপেশ বসাক নামে ব্যাংকে টাকা জমা রাখত। কারণ পুলিশের রেকর্ডে ও ছিল ফেরারী পলিটিক্যাল আসামী। ওর নামে হুলিয়া ছিল।
কেয়া মুখ নামাল। ঠোঁট কামড়ে ধরল।
কর্নেল এবার একটু নরম হয়ে বললেন, তোমার দাদার খুনী কে সে জানত। তাকে নিয়মিত ব্ল্যাকমেল করে টাকা আদায় করত। ব্যাংকে সেই টাকা তপেশ বসাক নামে জমা রেখে গেছে।
কেয়া মুখ তুলে ভাঙা গলায় বলল, একটা মানুষের জীবনের দাম টাকা নিয়ে যদি কেউ আদায় করে, সেটা খুব অন্যায় বলে আমি মনে করি না।
তোমার দাদা বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল।
যে খুন করেছিল, সে বিশ্বাসঘাতক নয়? কেয়া শ্বাসপ্রশ্বাসের সঙ্গে বলল, সেও যে পার্টির সঙ্গে শেষে বিশ্বাসঘাতকতা করে সবাইকে ধরিয়ে দিয়ে নিজে গুছিয়ে মহাপুরুষ সেজে বসে আছে, তার বেলা? সেও যে এখন জনদরদী নেতা বনে গেছে, ভোট কুড়িয়ে ঝুলি ভরছে–বিশ্বাসঘাতক নয় সে?
কর্নেল তাকালেন। তুমি চেন তাকে?