গাছটার মাথা অন্ধকার আকাশে ঢুকে আছে। তার তলায় খুদে প্যাগোডা গড়ন এবং নিচে চারদিক ভোলা কাঠের ছত্র। তিনটে সরু কারুকার্যকরা কাঠের থাম। মেঝে মাটি থেকে ফুট তিনেক উঁচুতে এবং সেটা একটা গোলাকার বেদি বলা চলে। আবছা আলো গিয়ে ওখানে পড়েছে বলে তিনটি লোককে দেখা যাচ্ছিল।
কর্নেল গিয়ে বললেন, এক্সকিউজ মি–
হ্যাল্লো কর্নেল! শ্যামলকান্তি হাত তুলে খুশ মেজাজে বললেন। জয়েন আস।
সুভদ্রের চোখ জ্বলে উঠেছে। সে মুখ নামিয়ে গেলাসে চুমুক দিল। তারপর কাঠের সরু থামে হেলান দিল। কর্নৈল শ্যামলকান্তির কাছে পা ঝুলিয়ে বসলেন।
শ্যামলকান্তি বললেন, আলাপ করিয়ে দিই–সৌম্য চৌধুরি। সৌম্য, আই টোল্ড য়ু অ্যাবাউট দিস ওয়াইজম্যান–আ ন্যাচারালিস্ট অ্যান্ড ভেরি পিকিউলারলি আ প্রাইভেট ডিটেকটিভ।
সৌম্য চৌধুরির বয়স পঁয়ত্রিশের কম নয়। শক্তসমর্থ গড়ন। আবছা আলোয় কর্নেল আঁচ করলেন, মুখে বিরক্তি ফুটে উঠেছে। শ্যামলকান্তি বললেন, একচুমুক হোক, স্যার!
কর্নেল বললেন, ধন্যবাদ।
আমরা হতভাগা বিমলের আত্মার শান্তিকামনায় একটু খাচ্ছিটাচ্ছি! শ্যামলকান্তি এই হাল্কা চালের বাক্যটি গাম্ভীর্যে উচ্চারণ করলেন। আফটার অল, উই ওয়্যার হিজ ফ্রেন্ডস। উই ক্যান্ট এনজয় হিজ স্যাড ডেথ। কী সৌম্য?
সৌম্য বললেন, কিন্তু এখানে ডিটেকটিভ কেন? হোয়াই?
আঃ সৌম্য! বলে না। শ্যামলকান্তি ভর্ৎসনার সুরে বললেন। হি ইজ নাও আওয়ার গেস্ট।
কর্নেল একটু হাসলেন।…ডিটেকটিভ আসার বদলে পুলিশ এলে কি সৌম্যবাবু খুশি হতেন?
শ্যামলকান্তি গেলাসে চুমুক দিয়ে খিকখিক করে হেসে উঠলেন। সৌম্য বললেন, হোয়াট?
সুভদ্র বলল, হি হ্যাঁজ কাম টু থ্রেট আস।
সৌম্য বাঁকা হাসলেন। …দেখুন মশাই, আর যাই দেখান, পুলিশ দেখাবেন না। আর একটা কথা, আমরা এখন অন্য মুডে আছি। উই হ্যাঁভ লস্ট আ
শ্যামলকান্তি স্বাভাবিক ভঙ্গিতে বললেন, সৌম্য! ওঁর কিছু জিজ্ঞাস্য থাকলে জেনে নাও এবং জবাব দাও। ব্যস্! নো প্রব্লেম।
সৌম্য ঘুরে বসল কর্নেলের মুখোমুখি। …কী জানতে চান? কোন বিষয়ে জানতে চান?
কর্নেল শ্যামলকান্তির উদ্দেশে বললেন, মিঃ মজুমদার! আজ সকালে আমাকে টেলিফোনে কেউ শাসিয়েছে। সুশোভন এবং বাসুদেবের ব্যাপারে নাক গলালে আমাকে খতম করবে।
শ্যামলকান্তি হাসতে লাগলেন। …আপনি কি ভাবলেন আমরা কেউ?
কর্নেল সে-প্রশ্নের জবাব না দিয়ে বললেন, তার মানে আমি ঠিক পথে এগোচ্ছি।
শ্যামলকান্তি একই হাল্কা চালে বললেন, আপনি জ্ঞানী মানুষ। কেন? এমনও তো হতে পারে, আপনি ভুলপথে এগোচ্ছেন এবং ভুলপথে আরও যাতে এগিয়ে যান, সেজন্য আপনাকে কেউ এভাবে প্ররোচিত করছে।
ভুল পথে এগোনোর প্রমাণ এখনও অন্তত পাইনি, মিঃ মজুমদার।
প্লিজ এক্সপ্লেন!
বিমলবাবুর কাছে আমি না গেলে তার একটা ছবি চুরি যেত না।
ছবি চুরি? শ্যামলকান্তি গেলাস ঢকঢক করে শেষ করে সিগারেট ধরালেন। ছবি চুরির কথা বিমল আমাদের বলেনি। আপনাকে বলেছিল বুঝি?
হাঁ। বলেছিলেন।
সৌম্য গলার ভেতর বললেন, হি ওয়াজ আ জিনিয়াস, বাট অ্যাবসোলিউটলি আ ম্যাড ফেলা। উন্মাদ।
শ্যামলকান্তি বললেন, কী ছবি, কর্নেল?
অতর্কিতে পিঠে ছুরিবিদ্ধ একটা মানুষের ছবি।
ছবিটা কি আপনি দেখেছিলেন?
দেখেছিলুম।
আপনি অ্যাবস্ট্রাক্ট পেইন্টিং দেখে বুঝতে পারেন? কী জানি মশাই! আমার মাথায় ওসব হাবিজাবি ঢোকে না। সৌম্য! সুভদ্র! তোমরা বিমলের ছবি দেখে কিছু বুঝতে পারতে?
সৌম্য বললেন, ম্যাডনেস!
সুভদ্র বলল, ম্যাডনেস অফ কালার অ্যান্ড কম্পোজিশান, হুইচ মিস নাথিং!
শ্যামলকান্তি গেলাসে হুইস্কি ঢেলে সোডা ওয়াটার মিশিয়ে বললেন, যাই হোক–ছবি চুরি গেল এবং ছবিটার শোকে হতভাগা আত্মহত্যা করল।
না মিঃ মজুমদার! কর্নেল দ্রুত বললেন। বিমলবাবুকে খুন করা হয়েছে।
তিনজনের হাতের গেলাস থেমে গেল। একটু পরে শ্যামলকান্তি বললেন, ঠিক আছে। তারপর?
মর্গের রিপোর্ট–তাছাড়া ফরেন্সিক এক্সপার্টদের মতে, বিমলবাবুর ডানহাতে এবং চোয়ালের দুধারে চাপের চিহ্ন আছে। কেউ বা কারা জোর করে ওঁর হাতে রিভলবার খুঁজে মুখ ফাঁক করে ওঁরই আঙুলের চাপে ট্রিগার টেনেছিল। খুব সাবধানী খুনী বা খুনীরা। রুমালে রিভলবার হ্যাঁন্ডেল ধরেছে। কাজেই ট্রিগারে বিমলবাবুর আঙুলের ছাপ পাওয়া গেছে। তাছাড়া তখন বিমলবাবু প্রচণ্ড মাতাল অবস্থায় ছিলেন।
শ্যামলকান্তি গেলাসে চুমুক দিয়ে হাতের চেটোয় ঠোঁট মুছে বললেন, ওকে। পুলিশ আমাদের অ্যারেস্ট করুক।
কর্নেল চুরুট ধরিয়ে বললেন, আমার মনে হয়, পুলিশ আপনাদের বিরুদ্ধে কিছুই প্রমাণ করতে পারবে না।
সরি, কর্নেল! তাহলে এসব কথা আলোচনার উদ্দেশ্য কী?
আমি বিমলবাবু সম্পর্কে আগ্রহী নই, মিঃ মজুমদার! কর্নেল আস্তে বললেন। পুলিশ তার কেস নিয়ে মাথা ঘামাক। আমি সুশোভন এবং বাসুদেব সম্পর্কে আগ্রহী।
কে তারা? শ্যামলকান্তি বললেন। আমি ওদের নাম শুনিনি। সৌম্য! সুভদ্র! তোমরা চেন?
দুজনে মাথা নাড়ল। কর্নেল বললেন, বাসুদেব ওরফে তপেশ বসাক মোতিগঞ্জে কাকে ব্ল্যাকমেইল করতে গিয়েছিল, মিঃ মজুমদার?
শ্যামলকান্তি শক্ত গলায় বললেন, বিমলের বাড়িতেও আপনার এ ধরনের প্রশ্ন শুনেছি। তখন যা জবাব দিয়েছি, এখনও তাই দেব, কর্নেল! প্লিজ, মুড নষ্ট করবেন না। আপনি দয়া করে এবার আসুন।