কর্নেল বললেন, মোতিগঞ্জে কেন গিয়েছিলেন শ্যামলবাবু?
বিজনেসের জন্য।
তপেশের সঙ্গে আপনার পরিচয় ছিল কি?
হু ইজ হি?
হাথিয়াগড়ের প্রিয়দর্শী হোটেলে যে সুইসাইড করেছে।
শ্যামলকান্তি হাসলেন।…চেইজিং আফটার আ রেড হেরিং!
সুভদ্র ক্রুদ্ধ স্বরে বলল, ইউ ওল্ডম্যান! ডোন্ট স্পয়েল দা প্লেজার!
কিসের প্লেজার, সুভদ্রবাবু?
সুভদ্রকে থামিয়ে শ্যামলকান্তি বললেন, এসব ব্যাপারে নাক নাই বা গলালেন, কর্নেল? এনাফ অফ ইট। আমার মনে হয়, আপনার আর এখানে না থাকাই উচিত। তবে অফ কোর্স, কিসের প্লেজার জেনে যান। অনেকদিন পরে বন্ধুরা একত্র হলে যা হয়, ঠিক তাই। সুভদ্রের অনারে–স্পেশ্যালি। ডু ইয়ু আন্ডারস্ট্যান্ড?
বিমলকুমার পর্দা তুলে উঁকি দিয়ে বলল, সৌম্য তোর সঙ্গে কথা বলবে শ্যামলদা! ও আসতে পারছে না। বড় আটকেছে মনে হলো! শালা! মানুষ কেন যে বউ পোষে! পয়সা দিয়ে যা কেনা যায়, তার জন্য সরি কান্তা ক্লজদা! শ্-শ্-শ্!
শ্যামলকান্তি গেলাস রেখে উঠে গেলেন। সুভদ্র আস্তে কর্নেলের উদ্দেশে বলল, নাও ইউ গো!
কর্নেল উঠে দাঁড়ালেন। বিমলকুমার জড়ানো গলায় বললেন, হ্যাঁগো করুন সান্তা ক্লজদা। দিনে আসুন। তখন আমি চিত্রকর থাকি। এখন আমি সত্যিই ড্রাংক। রাত যতই বাড়ব, আরও ড্রাংক হব।…
০৮. আবার এক সেকেন্ডের জন্য
মিটমিটে হয়ে গেছে রাস্তার বাতিগুলো, কুয়াশা না ধোঁয়াশা এত গাঢ়। লাল ল্যান্ডরোভার আস্তে এগোচ্ছিল শরৎ বোস রোড ধরে। সত্যিই কি আলেয়ার পেছনে দৌড়চ্ছেন? কর্নেল ভাবছিলেন। কিন্তু বারবার মনে ভেসে উঠছিল বিমলকুমারের ঘরে দেখা প্রকাণ্ড চৌকো ক্যানভাসে আঁকা বিমূর্ত ছবিটা। ছোরাবিদ্ধ মানুষের হুমড়ি খেয়ে পড়া, দু চোখে বিস্ময়।
নাকি ছবিটাতে ভুল দেখা দেখেছেন? বিমূর্ত চিত্রকলা বড় গোলমেলে। সাপ দেখতে ব্যাং দেখা যায়। দ্রষ্টার নিজের মনের চিন্তাভাবনা, অবচেতন কোনো ধারণা সবসময় কোনো বিমূর্ত চিত্রকলায় প্রতিফলিত হতে পারে, এও সত্য। দেখছি একটা মানুষ অথচ চিত্রকর মানুষই আঁকেননি আদতে। এঁকেছেন হয়তো নিজেরই টুকরো-টুকরো ভাবনা দিয়ে অন্য কিছু। কিংবা নিছক রঙের ছোপে অর্থহীন উদ্ভট যা-খুশি এঁকেছেন। একবার ইউরোপে কোন বিমূর্ত চিত্র প্রদর্শনীতে শিম্পাঞ্জির আঁকা ছবি নাকি প্রথম পুরস্কার পেয়েছিল!
কর্নেল হাসলেন। বিমূর্ত চিত্রকলার মধ্যে চালাকিও থাকে বৈকি! যে সঠিকভাবে একটা দেশলাই আঁকতে পারে না, সেও সহজে বিমূর্ত চিত্র এঁকে আজকাল তাক লাগিয়ে দেয়। কট্টর কলা-সমালোচকও মনের মাধুরী মিশিয়ে সেটি দেখে প্রশংসায় উচ্ছ্বসিত হন।
হুঁ, টেকনিকাল বিচার বলে একটা কথা আছে। কিন্তু সমস্যা হলো, কোনো রীতির কাঠামো তৈরি হয়ে গেলে সেই কাঠামোর অনুকরণ সহজ হয়ে যায়। কবিতায় যেমনটি হয়েছে। একটা স্ট্রাকচার তৈরি হয়ে গেছে। এখন তার নকল করে অসম্বন্ধ শব্দের আঁক সাজিয়ে তোলা স্কুলের বালকের পক্ষেও সহজ।
সত্যিই কি ছোরাবিদ্ধ মানুষের ছবি দেখেছেন বিমলকুমারের ঘরে? আবার একবার যাওয়া দরকার ওখানে। দিনের বেলায় গিয়ে ভাল করে দেখতে হবে এবং চিত্রকরের কাছে প্রশ্ন করে জেনে নিতে হবে ওটা কিসের ছবি।
সার্কুলার রোডে ঢুকলে ব্যাকভিউ মিররে চোখ রেখে একটু নড়ে বসলেন কর্নেল। তাঁর এক মন চিন্তা করে, অন্য মন চারদিকে লক্ষ্য রাখে। এটা অভ্যাসের ব্যাপার। দেশপ্রিয় পার্কের ওখান থেকে একটা জিপ তার পেছনে আসছে। সার্কুলার রোডেও সেটা তাঁর অনুগামী। বাঁদিকে না ঘুরে সোজা সার্কাস এভিনিউতে ঢুকলেন। দুধারে ঘন গাছ। ল্যাম্পপোস্টের আলোগুলো ঢাকা পড়েছে। রাস্তাটা অন্ধকার হয়ে আছে প্রায়।
এবার দেখলেন পেছনের গাড়িটা গতি বাড়িয়েছে। কামানের একজোড়া গোলার মত হেডলাইট দেখতে দেখতে মুহূর্তে কাছে এসে পড়ল। ইনটুইশন! দ্রুত গিয়ার চেঞ্জ করে অ্যাকসিলেটরে চাপ দিয়ে ল্যান্ডরোভার বাঁদিকের গলিতে ঢুকিয়ে দিলেন। জিপ গাড়িটা পিছলে সোজা চলে গেল। মাত্র এক সেকেন্ডের জন্য প্রচণ্ড দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে গেল লাল ল্যান্ডরোভার।
০৯. তুরুপের তাসের খেলা
ডি সি ডি ডি অরিজিৎ লাহিড়ীর ফোন এল রাত পৌনে এগারোটায়। …কর্নেল! কী ব্যাপার?
কর্নেল বললেন, তুমি বাড়ি থেকে ফোন করছ নিশ্চয়!
হ্যাঁ। অফিসে গিয়ে শুনলুম আপনি রিং করেছিলেন। তখন ভীষণ টায়ার্ড। তাই ঠিক করলুম বাড়ি ফিরে আপনাকে ঘুম থেকে ওঠাব।
অরিজিতের হাসি ভেসে এল। কর্নেল হাসলেন না। বললেন, তোমার অপেক্ষা করছিলুম। তাছাড়া বারোটার আগে আমি ঘুমোইনে।
হ্যাঁ, বলুন!
রক্তমাখা জামাকাপড়ের মালিককে হয়তো খুঁজে বের করেছি।
মরেনি সে?
অরিজিৎ হাসছিল। কর্নেল বললেন, তুমি এই কেসটাকে গুরুত্ব দিচ্ছ না ডার্লিং!
কর্নেল, বর্তমান নিয়েই হিমশিম খাচ্ছে যে, অতীত নিয়ে ঝামেলা পাকাতে তার ফুরসত কোথায়?
সেই অতীতের সঙ্গে বর্তমানের যোগাযোগ রয়ে গেছে, অরিজিৎ! রবীন্দ্রনাথের কবিতাটি পড়োনি? অতীত বর্তমানের মধ্যেও গোপনে-গোপনে কাজ করে?
আসলে ব্যাপারটা কী হয়েছে বলি? আপনি একজনের আত্মহত্যার নিমিত্ত হয়েছেন বলে প্রচণ্ড অনুশোচনায় ভুগছেন, কর্নেল!
দ্যাটস রাইট। তবে ওই যে বললাম, অতীত বর্তমানের ভেতর কাজ করে। করছে। বাই দা বাই, তোমাকে সুশোভন রায়ের ঠিকানা দিয়েছিলুম। ৫/১ গোবিন্দ নস্কর লেন। দশ বছর আগে কে বা কারা তাকে খুন করেছিল। তার বোনের নাম কেয়া। ওর মা বেঁচে আছেন। দুজনকে দিয়ে রক্তমাখা প্যান্ট-শার্ট সোয়েটার সনাক্ত করানো দরকার।