পেছন থেকে ফকিরের গলা শোনা গেল—লতিফ খাঁ পুড়ে ছাই হয়ে গেছে কর্নেল সায়েব!
ফকির দৌড়ে এসে তার লম্বা চিমটেটা লতিফ খাঁয়ের গায়ে ঠেকাতেই সবাই স্তম্ভিত হয়ে দেখলেন গুঁড়ো গুঁড়ো একরাশ জমাট ছাই ছাড়া ওই দেহটা আর কিছুই নয়। ফকির কালো পেটিকা আর মমি-মুণ্ডটা দু হাতে তুলে নিয়ে বলল—আর কী? চলুন সবাই এগুলোকে আজিমুদ্দিনের কবরে রেখে আসি।…
দরমাবেড়ার ঘরের মধ্যে লোভী লতিফ খায়ের ভস্মীভূত মৃতদেহ পড়ে রইল। ওঁরা সবাই ভাটা থেকে রাস্তায় গিয়ে পৌঁছলেন।
অজিতেশ এবার হুইসল বাজিয়ে পুলিশ বাহিনীকে ফেরার সংকেত দিলেন। ভাটার চারদিক। ঝোপের আড়ালে বসে সেই বিস্ময়কর দৃশ্য সবাই দেখেছে! এবার নিঃশব্দে একে একে ফিরে আসছিল।
এবার জিপ ও ভ্যান এগিয়ে চলল স্টেশনের ওধারে সেই পোড়ড়া জমিতে বটতলার দিকে—যেখানে বালক আজিমুদ্দিনের কবর আছে। ফকির জিপের সামনে কর্নেলের পাশে বসে আছে। তার কোলের ওপর মমি-মুণ্ড আর কালো পেটিকা।
যেতে-যেতে কর্নেল একবার শুধু বলে উঠলেন—এই বিরাট পৃথিবীতে এখনও কত রহস্য রয়েছে, বিজ্ঞান তার সীমানায় যেতে পারেনি। তবে যাই বলি না কেন, এত রহস্য আছে বলেই জীবনটা এত লোভনীয় এবং বরণীয়।
ফকির অস্পষ্টস্বরে বিড়বিড় করে কী মন্ত্রপাঠ করতে থাকল। আর কেউ কোনও কথা বললেন না।….
তখন ন্যাড়া মায়ের পাশে শুয়ে গভীর ঘুমে তলিয়ে গেছে। ঘুমের মধ্যে সে একটা আশ্চর্য স্বপ্ন দেখছিল।
আকাশ থেকে একটা নীলরঙের উজ্জ্বল নক্ষত্র খসে পড়ল। স্টেশনের ওপাশের মাঠে দাঁড়িয়ে আছে সে। দৌড়ে যেই নক্ষত্রটা কুড়োতে গেছে, অমনি ফের সেটা উড়ে চলেছে। দুঃখিত মনে ন্যাড়া দাঁড়িয়ে রইল। তারপর নীল নক্ষত্রটা আকাশে ভেসে গিয়ে একস্থানে আটকে যেতেই ন্যাড়া
ভঁা করে কেঁদে ফেলল।
সুনন্দা ডাকছিলেন—ন্যাড়া! ও নেড়ু! কঁদছিস কেন? স্বপ্ন দেখছিলি বুঝি! ন্যাড়া জেগে উঠেছে! জবাব না দিয়ে মায়ের বুকে মাথা গুঁজে দিল। আজ রাতে শীতটাও বড্ড পড়েছে। কুঁকড়ে আরামে শুয়ে রইল। কিন্তু স্বপ্নটা তার মন খারাপ করে দিয়েছে।