শোপেনহাওয়ার —Arthur Schopenhour (১৭৮৮—১৮৬০) জার্মান দার্শনিক। তাঁহার রচনাসমুহের মধ্যে উল্লেখযোগ্য—(On Sight and Colours(১৮১৬) The World as Will and Idea(১৮১৯), The Two Fundamental Problems of Ethics(১৮৪১)ইত্যাদি।
শোপেনহাওয়ার নৈরাশ্যবাদী দার্শনিক। তাঁহার মতে অচেতন ইচ্ছাই (Will) আত্মা। এই ইচ্ছার মাধ্যমেই আত্মার অন্যান্য মানসিক ক্রিয়াগুলি সুসম্বদ্ধ ও পরিপুষ্ট হয়। এই পরিদৃশ্যমান জগৎ আমাদের ইচ্ছারই বহিঃপ্রকাশমাত্র।
স্পেন্সার —Herbert Spencer (১৮২০—১৯০৩) ইংরেজ দার্শনিক। উল্লেখযোগ্য রচনা—Principles of Psychology(১৮৫৫), First Principles(১৮৬২), Principles of Biology(১৮৬৪—৬৭), Principles of Ethics(১৮৭৯), Principles of Sociology (১৮৭৬)প্রভৃতি।
হার্বার্ট স্পেন্সার অজ্ঞেয়বাদে (Agnosticism)বিশ্বাসী। তাঁহার প্রণীত First Principles নামক গ্রন্থে তিনি এই মতবাদের অবতারণা করেন। তাঁহার মতে—এই পরিদৃশ্যমান জগতের প্রথম এবং প্রধান কারণ সম্বন্ধে স্পষ্টরূপে কিছুই বলা সম্ভব নয়। তাহাকে তিনি অজ্ঞাত এবং অজ্ঞেয়(Unknown and Unknowable) বলিয়া বর্ণনা করিয়াছেন।
হাক্সলি —Thomas Henry Huxley(১৮২৫—৯৫) ইংরেজ প্রাণীতত্ত্ববিদ্। তাঁহার রচনাসমূহের মধ্যে সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য—On the Anatomy and Affinities of the Family of Medusae; The Origin of Species(১৮৫৯), Man’s Place in Nature(১৮৬৩)
হাক্সলি প্রথমজীবনে চিকিৎসকরূপে রাজ-নৌবহরবিভাগে যোগদান করেন (১৮৪৬)। অতঃপর জলজ জীবদেহসমূহের গবেষণায় তিনি বিশেষভাবে মনঃসংযোগ করেন। জীবনের শেষ দশ বৎসর তিনি দার্শনিক এবং ধর্মীয় সমাস্যাসমূহের আলোচনা করেন। তবে দার্শনিক অপেক্ষা বৈজ্ঞানিক হিসাবেই তিনি সমাধিক পরিচিত।
হিউম —David Hume(১৭১১—৭৬)ইংরেজ দার্শনিক। প্রধান রচনাগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য—Treatise on Human Nature(১৭৩৪—৩৭), Enquiry Concerning Human Understanding(১৭৪৮), An Enquiry Concerning Principles of Morals(১৭৫১)ইত্যাদি।
তাঁহার দর্শন প্রত্যক্ষবাদ (Empiricism) বলিয়া পরিচিত। তিনি একজন সংশয়বাদী দার্শনিক। তিনি তাঁহার পূর্ববর্তী দার্শনিক লক(John Locke) এবং বার্কলির(bishop Berkeley) মতের কিছু কিছু ত্রুটি সংশোধন করিয়াছিলেন। প্রচলিত কার্যকারণবাদ হিউম অস্বীকার করেন।
হেকেল —Karl Haeckel(১৮৩৪—১৯১৯) জার্মান বৈজ্ঞানিক। তাঁহার প্রধান রচনাসমূহের মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য—Die Radiolarien—(১৮৬২), Deep Sea Medusae(১৮৮২)।
তিনি ডারুইনের বহু মত গ্রহণ করেন এবং তাহার সহিত জার্মান দার্শনিক ওকেনের(Oken)মতবাদগুলির সমন্বয় সাধন করেন। জার্মানিতে ডারুইনের মতবাদ সাধারণের উপযোগী করিয়া প্রচার করিবার ব্যাপারে তিনি বিশেষ অগ্রণী ছিলেন। তিনি জড়বাদমূলক একত্ববাদে (Materialistic Monism) বিশ্বাসী; বিরোধী পক্ষ ইহার তীব্র সমালোচনা করেন।
হেগেল —Georg Wilhelm Friedrich Hegel (১৭৭০—১৮৩১) জার্মান দার্শনিক। তাঁহার প্রধান রচনাগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য—Phenomenology of Spirit (১৮০৭), Logic(১৮১২), The Outlines of the Philosophy of Right(১৮২১) ইত্যাদি।
হেগেলের মতবাদকে ‘বিজ্ঞানবাদ’ অথবা ‘পরমচেতনবাদ’ বলিয়া বর্ণনা করা হইয়াছে। হেগেলের মতে মরম চেতন সত্তা(Absolute) সমগ্র বিশ্বের অন্তর্নিহিত সত্য। চিন্তা বা প্রজ্ঞা এই পরমের স্বরূপ। গতিশীলতাই ইহার প্রধান লক্ষণ। দার্শনিক তত্ত্বের ভিত্তিতে হেগেল ধর্ম, শিল্প ও বিজ্ঞানের সমন্বয় সাধন করিয়াছেন। হেগেলের মতে এই পরমের মধ্যেই আমরা সত্য, শিব ও সুন্দরের সার্থক অভিব্যক্তি দেখিতে পাই। নয়, প্রতিনয় ও সমন্বয় (Thesis—Antithesis—Synthesis)—এই ত্রিভঙ্গ নিয়মে ইহার গতি হয়।
হেরোডোটাস —Herodotus(খৃঃ পূঃ ৪৮৫—৪২৫) গ্রীক ঐতিহাসিক। তাঁহার রচনাসমূহের মধ্যে সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য—History. এই গ্রন্থটি রচনা করিয়া হেরোডোটাস ‘ইতিহাসের জনক’ আখ্যা লাভ করিয়াছিলেন।
হ্যারিসন —Frederick Harrison(1813—)তিনি লণ্ডলের অক্সফোর্ডে শিক্ষালাভ করিয়া কিছুকাল শিক্ষকতা করিবার পর তিনি আইন ও রাজনীতি ক্ষেত্রে যোগ দেন। ধর্মসংক্রান্তবিষয়ে তিনি একজন দৃষ্টবাদী (Positivist) এবং রাজনীতিতে উদারপন্থি(Liberal) ছিলেন, বহু পত্রিকায় ধর্ম ও রাজনীতি বিষয়ে তাঁহার সুচিন্তিত ও সুলিখিত অভিমত পাওয়া যায়। তাঁহার লিখিত রচনাসমূহের মধ্যে উল্লেখযোগ্য The Meaning of History, Order and progress, Lectures on education, Byzantine History.
প্রাচ্য বা ভারতীয় দর্শন প্রধানতঃ দুই ভাগ—বৈদিক (ষড়্ দর্শন) ও
অবৈদিক (নাস্তিক দর্শন); দুইটিই এখানে সংক্ষেপে আলোচিত হইল।
ষড়্দর্শনের সংক্ষিপ্ত পরিচয় : ন্যায়, বৈশেষিক, সাংখ্য, যোগ, পূর্ব মীমাংসা ও বেদান্ত (উত্তরমীমাংসা)—ভারতীয় দর্শনের এই ছয়টি দর্শনকে একত্র ষড়্দর্শন নামে অভিহিত করা হইয়া থাকে। এই ছয়টি দর্শনের প্রত্যেকটিই আস্তিক অর্থাৎ এগুলিতে বেদের প্রামান্য স্বীকৃত হইয়াছে।
(১) ন্যায় ও বৈশেষিক : ন্যায়দর্শন ও বৈশেষিক দর্শন এই উভয় দর্শনকে একত্রে ন্যায়-বৈশেষিক বলা হইয়া থাকে। ন্যায়দর্শনের প্রণেতা মহর্ষি গৌতম এবং বৈশেষিক দর্শনের প্রণেতা কণাদ।