ডারুইন বিবর্তনবাদ প্রচারের জন্য খ্যাত। তাঁহার মতে প্রাকৃতিক নির্বাচনই (Natural Selection)বিবর্তনবাদের মূলকথা। তিনি যোগ্যতম প্রাণীর বাঁচিবার অধিকারের উপর (Survival of the fittest) বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেন। তাঁহার মতে এই বিবর্তনবাদ একটি যান্ত্রিক প্রক্রিয়া।
পিথাগোরাস —Pythagoras(খৃঃ পূঃ ৬০০—৫১০) গ্রীক দার্শনিক। তাঁহার লিখিত রচনা কিছুই পাওয়া যায় না। পিথাগোরীয় সম্প্রদায় হইতেই তাঁহার মতবাদ কিছু কিছু জানা যায়।
পিথাগোরাসকে গ্রীক দর্শনের ইতালীয় শাখার প্রতিষ্ঠাতারূপে বর্ণনা করা হয়। তিনি পুনর্জন্মবাদে (Transmigration of souls)বিশ্বাসী। সংখ্যাতত্ত্বের (Number)মূলবিষয়ে বহু গবেষণা করেন; ইহা হইতেই চরম সত্যের (Ultimate Reality)স্বরূপ নির্ণয় করিবার ইঙ্গিত পাওয়া যায় বলিয়া তিনি বিশ্বাস করেন।
প্লেটো —Plato (খৃঃ পূঃ ৪২৭—৩৪৭) প্রাচীন গ্রীক দার্শনিক। তাঁহার উল্লেখযোগ্য রচনা—Apllogy; Crito; The Republic; Symposium; Phaedo; Phaedrus; Meno ইত্যাদি।
স্বনামধন্য প্রাচীন দার্শনিক সক্রেটিস্ প্লেটোর শিক্ষাগুরু। প্লেটোর দর্শনে সক্রেটিসের প্রভাব উল্লেখযোগ্য। দর্শনের সহিত গণিতশাস্ত্রের যে ঘনিষ্ঠ যোগোযোগ আছে, তাহা প্লেটো সর্বপ্রথম তাঁহার দর্শনের মাধ্যমে প্রমাণ করেন। সঙ্গীত ও স্বাস্থ্যচর্চা দর্শনের একটি অপরিহার্য বিষয় বলিয়া তিনি উল্লেখ করেন। তাঁহার মতে আত্মার মধ্যেই প্রজ্ঞাই (reason) আত্মার (soul)আসল রূপ। প্রজ্ঞারূপ আত্মা দেহের সহিত যুক্ত হইলে কামনা ও অন্যান্য বৃত্তির সূচনা হয়। আবার দেহ বিনষ্ট হইলে তাহাদের লোপ হয়। আত্মা অবিনশ্বর এবং তাহাকে জানাই হইল প্রকৃত জ্ঞান(wisdom)।
ফিক্টে —Johann Gottilieb Fichte (১৭৬২—১৮১৪) জার্মান দার্শনিক। তাঁহার রচনাসমূহের মধ্যে উল্লেখযোগ্য—Essay toward a Critique of All Revelation (১৭৯২), Introduction to the Science of Knowledge, The Natural Right, Science of Ethics( ১৭৯৬—৯৮) ইত্যাদি।
ফিক্টে কাণ্টের দার্শনিক মতবাদ দ্বারা বিশেষবাবে প্রভাবিত। জ্ঞানের উপায় ও স্বরূপ সম্বন্ধে তিনি বৈজ্ঞানিক আলোচনা করিয়াছেন। বৈজ্ঞানিক জ্ঞানের (Scientific Knowledge) মূল সূত্রগুলি ধরিয়া তিনি নীতিশাস্ত্র এবং সমাজতত্ত্বের উপর গ্রন্থ রচনা করিয়াছেন। তাঁহার মতে জীবাত্মার মধ্যে সক্রিয় (active) এবং নিষ্ক্রিয় (passive) এই দুইটি স্তর আছে। মন বা অহং (Ego)চরম তত্ত্ব। নৈতিক জীবনের পরিপূর্ণতার জন্যই অহং নিজেকে বস্তুরূপে বিক্ষিপ্ত করে।
বেন্থাম —Jeremy Bentham (১৭৪৮—১৮৩২) ইংরেজ দার্শনিক। তাঁহার রচনাসমূহের মধ্যে উল্লেখযোগ্য—Introduction to the Principles of Morals and Legislation (১৭৮৯), Deontology(১৮৩৪)ইত্যাদি।
প্রাচীন দার্শনিক এপিকিউরাসের (Epicurus) মতবাদকে যথাযথ সংস্কার করিয়া নব্যভাবধারায় পরিপুষ্ট করিয়াছেন। নীতিশাস্ত্রজ্ঞ হিসাবেই বেন্থাম সমধিক পরিচিত। সুখী হইবার পন্থার মধ্যে তিনি নীতিশাস্ত্রের মূল সুর আবিষ্কার করিয়াছেন। তাঁহার মতে সর্বজনীন সুখ বা সর্বাধিক মানুষের সর্বাধিক সুখ (greatest happiness of the greatest number)মানুষকে জীবনের চরম মুক্তির পথ লাভ করিতে সাহায্য করে। এই সর্বজনীন সুখ যত তীব্র এবং দীর্ঘস্থায়ী হইবে, ততই তাহার নৈতিক মূল্য বৃদ্ধি পাইবে।
মিল —John Stuart Mill(১৮০৬—৭৩) ইংরেজ দার্শনিক। তাঁহার রচনাসমুহের মধ্যে উল্লেখযোগ্য—System of Logic(১৮৪৩), Utilitarianism(১৮৬৩), An Examination of William Hamilton’s Philosophy(১৮৬৫)ইত্যাদি।
জন স্টুয়ার্ট মিল পিতা জেমস্ মিলের দার্শনিক মতবাদের দ্বারা বিশেষভাবে প্রভাবান্বিত। দার্শনিক হিসাবে মিল ইন্দ্রিয়কেন্দ্রিক জ্ঞানের উপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করিয়া থাকেন। বৈজ্ঞানিক গবেষণার মূল পদ্ধতি(Methodology of Sciences) সম্পর্কে তিনি অনেক আলোচনা করেন।
ম্যাক্স মূলার —Friedrich Maximillian Muller (১৮২৩—১৯০০) বিখ্যাত ভাষাতত্ত্ববিদ্ জার্মান পণ্ডিত। তাঁহার রচনাসমূহের মধ্যে উল্লেখযোগ্য History of Ancient Sanskrit Literature, Sacred Books of the East, Science of languageইত্যাদি। সংস্কৃত ভাষায় তাঁহার অগাধ পাণ্ডিত্য ছিল। তিনি সায়নাচার্যের ভাষ্য-সহিত ঋগ্বেদের একখানি সংস্করণ প্রকাশ করেন। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে আধুনিক ভাষার অধ্যাপক নিযুক্ত হন।—১০ম খণ্ডে স্বামীজীর প্রবন্ধ দ্রষ্টব্য।
ম্যাসপেরো —Sir Gaston Camille Charles Maspero(১৮৪৬—১৯১৬) ফরাসী মিশরতত্ত্ববিদ্(Egyptologist)। তিনি প্রাচীন ইতিহাস সম্পর্কে অনেক প্রামাণ্য গ্রন্থ রচনা করেন।
লেসীং —G. E. Lessing(১৭২৯—৮১) জার্মান দার্শনিক ও সাহিত্যিক। তাঁহার উল্লেখযোগ্য রচনা— Collected Works (6 vol-umes, ১৭৫৩-৫৫);
upon Current Literature(১৭৫৮)। তিনি দার্শনিক স্পিনোজার সর্বেশ্বরবাদ (Pantheism)এবং লাইব্ নিজের ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদের (Individualism) সমন্বয় সাধন করেন। পরবর্তীকালে কবি গ্যেটে এবং শিলার যে ভাবধারায় সাহিত্য-জগৎ সমৃদ্ধ করিয়াছিলেন, লেসীং তাহারই সূচনা করেন।