পিঙ্গলা ও ইড়ার সংযোগস্থলে (দক্ষিণ ও বাম নাসিকার সংযোগস্থলে) ‘হুং’ বীজ চিন্তা করিয়া ইড়াকে দ্বাদশমাত্রা বাহ্য বায়ু দ্বারা পূর্ণ করিবে, পরে সেই স্থানে অগ্নির চিন্তা ও ‘রং’ বীজ ধ্যান করিবে; এইরূপে ধ্যান করিবার সময় ধীরে ধীরে পিঙ্গলা (দক্ষিণ নাসিকা) দিয়া বায়ু রেচন করিবে। পুনরায় পিঙ্গলার দ্বারা পূরক করিয়া পূর্বোক্ত প্রকারে ধীরে ধীরে ইড়া দ্বারা রেচন করিবে। গুরুর উপদেশ অনুসারে ইহা তিন-চারি বৎসর অথবা তিন-চারি মাস অভ্যাস করিবে। ঊষাকালে, মধ্যাহ্নে, সায়াহ্নে ও মধ্যরাত্রে, যতদিন না নাড়ীশুদ্ধি হয় ততদিন গোপনে অভ্যাস করিতে হইবে; তখন তাঁহাতে এই লক্ষণগুলি প্রকাশিত হয়, যথা-শরীরের লঘুতা, সুন্দরবর্ণ, ক্ষুধা ও নাদ-শ্রবণ।
পরে রেচক, কুস্তক, পূরকাত্মক প্রাণায়াম করিতে হইবে। অপানের সহিত প্রাণ যোগ করার নাম প্রাণায়াম।
১৬ মাত্রায় মস্তক হইতে পদ পর্যন্ত পূরক, পরে ৩২ মাত্রায় রেচক ও ৬৪ মাত্রায় কুম্ভক করিবে।
আর এক প্রকার প্রাণায়াম আছে তাহাতে প্রথমে ৬৪ মাত্রায় কুম্ভক, পরে ৩২ মাত্রায় রেচক ও শেষে ১৬ মাত্রায় পূরক করিতে হইবে।
প্রাণায়ামের দ্বারা শরীরের সমস্ত দোষ দগ্ধ হইয়া যায়। ধারণা দ্বারা মনের অপবিত্রতা দূর হয়, প্রত্যাহার দ্বারা সঙ্গদোষ নাশ হয় এবং ধ্যানের দ্বারা নাশ হইয়া যায়-যাহা কিছু আত্মার ঈশ্বরভাব আবৃত করিয়া রাখে।
৩. সাংখ্য-প্রবচন-সূত্র
তৃতীয় অধ্যায়
ভাবনোপচয়াৎ শুদ্ধস্য সর্বং প্রকৃতিবৎ ।।২৯।।
-প্রগাঢ় ধ্যানবলে শুদ্ধস্বরূপ পুরুষের প্রকৃতির মতো সমুদয় শক্তি আসিয়া থাকে।
রাগোপহতির্ধ্যানম্ ।।৩০।।
-আসক্তির নাশকে ধ্যান বলে।
বৃত্তিনিরোধাত্তৎসিদ্ধিঃ ।।৩১।।
-সমুদয় বৃত্তির নিরোধ ধ্যানসিদ্ধি হয়।
ধারণাসনস্বকর্মণা তৎসিদ্ধিঃ ।।৩২।।
-ধারণা, আসন ও নিজ কর্তব্যকর্ম নিষ্পাদনের দ্বারা ধ্যান সিদ্ধ হয়।
নিরোধশ্ছর্দিবিধারণাভ্যাম্ ।।৩৩।।
-শ্বাসের ছর্দি (ত্যাগ) ও বিধারণ (ধারণ) দ্বারা প্রাণবায়ুর নিরোধ হয়।
স্থিরসুখমাসনম্ ।।৩৪।।
-যেভাবে বসিলে স্থৈর্য ও সুখ লাভ হয়, তাহার নাম আসন।
বৈরাগ্যাদভ্যাসাচ্চ ।।৩৬।।
-বৈরাগ্য ও অভ্যাসের দ্বারাও।
তত্ত্বাভ্যাসান্নেতি নেতীতি ত্যাগাদ্বিবেকসিদ্ধিঃ ।।৭৪।।
-‘ইহা নয়, ইহা নয়’ বলিয়া প্রকৃতির প্রত্যেকটি তত্ত্বকে ত্যাগ করিতে পারিলে বিবেক সিদ্ধ হয়।
চতুর্থ অধ্যায়
আবৃত্তিরসকৃদুপদেশাৎ ।।৩।।
-বেদে একাধিকবার শ্রবণের উপদেশ আছে, সুতরাং পুনঃপুনঃ শ্রবণের আবশ্যক।
শ্যেনবৎ সুখদুঃখী ত্যাগবিয়োগাভ্যাম্ ।।৫।।
শ্যেনপক্ষী যেমন মাংসের বিয়োগে দুঃখী ও স্বয়ং ইচ্ছাপূর্বক ত্যাগ করিয়া সুখী হয়, সাধুও সেইরূপ ইচ্ছাপূর্বক সর্বত্যাগ করিয়া সুখী হইবেন।
অহিনির্ল্বয়নীবৎ।।৬।।
-সর্প যেমন হেয়জ্ঞানে গাত্রস্থ জীর্ণত্বক্ অনায়াসে পরিত্যাগ করে (সাধকও সেইরূপ পূর্বসংস্কার ত্যাগ করিবেন)।
অসাধনানুচিন্তনং বন্ধায় ভরতবৎ ।।৮।।
-যাহা বিবেকজ্ঞানের সাধন নয়, তাহা চিন্তা করিবে না, কারণ উহা বন্ধনেরহেতু; দৃষ্টান্ত-ভরত রাজা।
বহুভির্যোগে বিরোধো রাগাদিভিঃ কুমারীশঙ্খবৎ ।।৯।।
-বহু ব্যক্তির সঙ্গ রাগাদির কারণ বলিয়া ধ্যানের বিঘ্নস্বরূপ; দৃষ্টান্ত-কুমারীহস্তের বহু শঙ্খ।
দ্বাভ্যামপি তথৈব ।।১০।।
-দুইজন (বা দুটি শঙ্খ) একসঙ্গে থাকিলেও এইরূপ।
নিরাশঃ সুখী পিঙ্গলাবৎ ।।১১।।
-আশা ত্যাগ করিলে সুখী হওয়া যায়। দৃষ্টান্ত-পিঙ্গলা নাম্নী বেশ্যা।
বহুশাস্ত্রগুরূপাসনেহপি সারাদানং ষট্পদবৎ ।।১৩।।
-যদি বহু শাস্ত্র ও বহু গুরুর উপাসনা করা হয়, তথাপি তাঁহাদের মধ্যে সারটুকুই গ্রহণ করিতে হইবে, মুধুকর যেমন অনেক পুষ্প হইতে মধু সংগ্রহ করে।
ইষুকারবন্নৈকচিত্তস্য সমাধিহানিঃ ।।১৪।।
-শরনির্মাতার মতো একাগ্রচিত্ত থাকিলে সমাধি ভঙ্গ হয় না।
কৃতনিয়মলঙ্ঘনাদানর্থক্যং লোকবৎ ।।১৫।।
-লৌকিক বিষয়ে যেমন কৃতনিয়ম লঙ্ঘন করিলে মহা অনর্থের উৎপত্তি হয়, তদ্রূপ ইহাতেও।
প্রণতিব্রহ্মচর্যোপসর্পণানি কৃত্বা সিদ্ধির্বহুকালাত্তদ্বৎ ।।১৯।।
-প্রণতি, ব্রহ্মচর্য ও গুরুসেবা দ্বারা বহুকালে সিদ্ধিলাভ হয়, যেমন ইন্দ্রের হইয়াছিল।
ন কালনিয়মো বামদেববৎ ।।২০।।
জ্ঞানোৎপত্তির কালনিয়ম নাই। যেমন, বামদেব মুনির (গর্ভাবস্থায় জ্ঞানোদয়) হইয়াছিল।
লব্ধাতিশয়যোগাদ্বা তদ্বৎ ।।২৪।।
-যে ব্যক্তি অতিশয় অর্থাৎ জ্ঞানের পরাকাষ্ঠা লাভ করিয়াছেন, তাঁহার সঙ্গদ্বারাও বিবেক লাভ হইয়া থাকে।
ন ভোগাদ্ রাগশান্তির্মুনিবৎ ।।২৭।।
-যেমন ভোগে সৌভরিমুনির আসক্তির শান্তি হয় নাই, তেমনি অন্যেরও ভোগে রাগশান্তি হয় না।
পঞ্চম অধ্যায়
যোগসিদ্ধয়োহপ্যৌষধাদিসিদ্ধিবন্নাপলপনীয়াঃ ।।১২৮।।
-ঔষধাদি দ্বারা আরোগ্য হয় বলিয়া যেমন লোকে ঔষধাদির শক্তি অস্বীকার করে না, যোগজ সিদ্ধিও সেইরূপ অস্বীকার করা চলিবে না।
ষষ্ঠ অধ্যায়
স্থিরসুখমাসনমিতি ন নিয়মঃ ।।২৪।।
-স্বস্তিকাদি আসন অভ্যাস করিতেই হইবে, এমন কোন নিয়ম নাই। শরীর ও মন বিচলিত না হয় ও সুখকর হয়, এরূপভাবে উপবেশনের নামই আসন।
৪. ব্যাস (বেদান্ত) সূত্র
৪র্থ অধ্যায়-১ম পাদ
আসীনঃ সম্ভবাৎ ।।৭।। ।
-উপাসনা বসিয়াই সম্ভব, সুতরাং বসিয়া উপাসনা করিবে।
ধ্যানাচ্চ ।।৮।।
-ধ্যান-হেতুও (উপবিষ্ট, অঙ্গচেষ্টারাহিত্যাদি লক্ষনাক্রান্ত পুরুষকে দেখিয়া লোকে বলে, ইনি ধ্যান করিতেছেন, অতএব ধ্যান উপবিষ্ট পুরুষেই সম্ভব)।