এ পর্যন্ত আমরা যা বলেছি, তা সংক্ষেপে এই-সাহিত্য হচ্ছে ভাবের অভিব্যক্তি মাত্র! সাহিত্যে রসভেদ আছে কিন্তু রূপভেদ নেই! কারণ মানুষের জীবন হচ্ছে অনুভূতির সমষ্টিমাত্র অর্থাৎ ভাবসর্বস্ব সুতরাং সাহিত্যে প্রয়োজন-অপ্রয়োজন, বাস্তব-অবাস্তব, গণ-বুর্জোয়া বলে কোনো সীমারেখা টেনে দেওয়া নিরর্থক। তারপর বলেছি, মানুষের মানস-সংস্কৃতি যখন দেশ, কাল, ধর্ম ও জাতীয়তার ছাপ মুক্ত হয়; তখন সাহিত্যে যে-অনুভূতি বিধৃত হয়, তা হয় সর্বকালের, দেশের ও চিরমানবের সম্পদ। অতএব সাহিত্যে একমাত্র কাম্যবস্তু হচ্ছে বহির্ঘটনার সঙ্গে হৃদয়ের গভীরতর সংযোগ সন্ধান। বাস্তবের ঘটনা সংঘাতে মনে দুঃখ-বেদনা, আশা-আকাঙ্ক্ষা ও আনন্দ-উল্লাসের যে-আবেগ সৃষ্টি হয়, তা যতক্ষণ যথার্থরূপে বাণী লাভ না করবে, ততক্ষণ তা মনান্তরে বা হৃদয়ান্তরে সহানুভূতি সঞ্চারে সমর্থ হবে না। এইজন্যে সৃষ্টিমাত্রই নিরর্থক–সাথে হৃদয় নহিলে। অনুভূতি বা ভাবের যথার্থ প্রকাশ মানেই হৃদয়ের বৃত্তি-প্রবৃত্তির বাণী-চিত্র দান করা। এক কথায়, বাহ্যবস্তু বা ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে জীবনের অন্তর্নিহিত রূপ সাহিত্যে বিধৃত হওয়া চাই। একমাত্র এরই নাম সাহিত্য।