৪. বাঙলার সুলতানদের রাজত্বের শেষের দিকে এবং মুঘল শাসনের প্রথমদিকে বাঙলা দেশে বড় বিশৃঙখলা বিরাজ করত।
Chatgaon again fell into the hands of the Maghs who did not leave a bird in the air or a beast on the land (from Chatgaon) to Jagdia, the frontier of Bengal increased the desolation. Thick-kened the jungles, destroyed the Al and closed the road so well that even the snake and wind could not pass through. They built a strong fort and left a large fleet to guard it. Gaining composure of mind from the strength of the place they turned to Bengal and began to plunder it.
ইব্রাহিম ফতেহ জঙ্গ ব্যতীত কোনো মুঘল সুবাদারই শায়েস্তা খানের আগে এদের দমন করবার চেষ্টা করেননি। ফিরিঙ্গি ও মগ সমন্বিত আরাকানী জলদস্যুরা জলপথে বাঙলাদেশের ভুলুয়া, সন্দ্বীপ, সংগ্রামগড়, বিক্রমপুর, সোনারগাঁও, বাকলা, যশোর, ভূষণা ও হুগলী লুণ্ঠন করত। তারা হিন্দু মুসলিম, নারী-পুরুষ ও বড়-ছোট নির্বিশেষে ধরে নিয়ে যেত। হাতের তালু ফুঁড়ে বেত চালিয়ে গরু ছাগলের মতো বেঁধে নৌকার পাটাতনে ঠাই দিত। মুরগীকে যেভাবে দানা ছিটিয়ে দেয়া হয়, তাদেরকেও তেমনি চাউল ছুঁড়ে দেয়া হত খাবার জন্যে। এ অবহেলা ও পীড়নের পরেও যারা বেঁচে থাকত তাদেরকে ভাগ করে নিত মঘে-পর্তুগীজে। মঘেরা অপহৃত লোকদের অবমাননাকর ও শ্রমসাধ্য কাজে নিযুক্ত করত এবং পর্তুগীজেরা অপহৃত ব্যক্তিদের ওলন্দাজ, ইংরেজ ও ফরাসি বেনেদের কাছে দাক্ষিণাত্যের বন্দরগুলোতে, এমনকি তমলুক আর বালেশ্বরেও দাসরূপে বিক্রয় করত।
৫, কর্ণফুলীর মোহনাস্থিত নদীর দক্ষিণতীরে পর্তুগীজ দস্যুঘটির নাম ছিল ফিরিঙ্গি বন্দর। আরাকানরাজ দস্যুবৃত্তির জন্যে নিজের জাহাজ পাঠাতেন না। তিনি ফিরিঙ্গিদের তার চাকুরে মনে করতেন. এবং লুণ্ঠিত দ্রব্য ও দাসের অর্ধেক নিজে নিতেন।
৬. মঘ-ফিরিঙ্গি দস্যুরা এমন ত্রাস সৃষ্টি করেছিল যে মুঘল নওয়ারা বা নৌ-বাহিনীও এদের দেখলে ভয়ে ছুটে পালাত এবং হার্মাদের কবলে পড়ার চাইতে ডুবে মরাই শ্রেয় মনে করত। পর্তুগীজ দস্যুরা হার্মাদ (আরমাদা দেশীয়) নামে পরিচিত ছিল।
৭. ১৬৬৫ সনে আরাকানরাজ ও চট্টগ্রামের পর্তুগীজদের মধ্যে বিবাদ বাধে। পীড়নের ভয়ে পর্তুগীজেরা মুঘলদের আশ্রয়ে চলে আসে। যুগদিয়া ও নোয়াখালির থানাদার ফরহাদ খান এদের সবাইকে সৈন্যবাহিনীতে নিযুক্ত করলেন। শায়েস্তা খান পর্তুগীজ কেপ্টেনকে হাত করবার জন্যে ২০০০ টাকা ইনাম এবং মাসিক ৫০০ টাকা বেতন ধার্য করে দিলেন। এদের সহায়তা শায়েস্তা খানের চট্টগ্রাম বিজয়ে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।
বাঙলাদেশের আঞ্চলিক ইতিহাস ও ইতিহাসের উপকরণ বিরল। ঐতিহাসিক যুগে চট্টগ্রামের কোনো রাজা-বাদশাহ রাজত্ব করেননি। তাই এর কোনো একক ইতিহাস লিখিত হয়নি। শাসকদের ইতিহাসে কেবল প্রাসঙ্গিকভাবেই চট্টগ্রাম সম্বন্ধে ছিটেফোঁটা খবর মেলে। এসব খবর জড়ো করে চট্টগ্রামের পূর্ণাঙ্গ ইতিহাসের কাঠামো তৈরি করা কঠিন কাজ।
চট্টগ্রাম সম্বন্ধে যে-কয়টি ইতিহাস গ্রন্থ রচিত হয়েছে, তার কোনোটিই ত্রুটিমুক্ত নয়। বিচ্ছিন্ন ঘটনা ও তথ্য সমাবেশের প্রয়াস আছে বটে, কিন্তু ধারাবাহিক ইতিহাস রচিত হয়নি।
এই ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্যে চট্টগ্রামের রাজনৈতিক ইতিহাস বিস্তৃত আলোচনা-সাপেক্ষ হয়েছে। গৌড়ের সুলতানের, ত্রিপুরার হিন্দুরাজার, আরাকানের বৌদ্ধ নৃপতির এবং খ্রীস্টান পর্তুগীজদের দ্বান্দ্বিক সম্পর্ক-ক্ষেত্র, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যবন্দর এবং বৌদ্ধ, হিন্দু, মুসলমান ও খ্রস্টান–এ চারটি ধর্মবিশ্বাসীর আবাসভূমি চট্টগ্রামের মানুষ বিভিন্ন পরিবেশের, নানা সমস্যার ও বিচিত্র সংস্কৃতির মুখোমুখি দাঁড়িয়েছে। এ সবকিছুই তাদের মন, মেজাজ ও মননের উপর প্রভাব রেখে গেছে। এমনি বিচিত্র আবহে লালিত চট্টগ্রামী মানুষ ধর্মীয় কোন্দল, জাতিবৈরকে তুচ্ছ জেনে এক উদার অথচ স্বধর্ম ও সংস্কৃতি-নিষ্ঠ মনোভঙ্গির অধিকারী হয়েছিল বলে অনুমান করি। কেননা, মধ্যযুগে চট্টগ্রামে হিন্দু ও মুসলমান রচিত গ্রন্থের সংখ্যা কম নয়, এসব গ্রন্থে কোথাও বিদ্বিষ্ট মনের পরিচয় নেই। স্বধর্মী রাজার সঙ্গে সাযুজ্যবোধে কেউ বিধর্মী প্রতিবেশীর প্রতি পীড়ন প্রবণ হয়নি– অন্তত সে-প্রমাণ নেই। স্বতন্ত্র থেকেও তারা সদ্ভাব ও সদিচ্ছা বজায় রাখতে জেনেছে। বৈচিত্র্যের মধ্যেও যে ঐক্য থাকে–এই তত্ত্ব ও আপ্তবাক্য মনে হয়, তাদের জীবনে বাস্তবরূপ লাভ করেছিল। পরবর্তী অধ্যায়ে এর আভাস মিলবে।