ক. ১৫৬৯ সনে Ceasar Frederick সন্দ্বীপে মুসলিম বাসেন্দা ও মুসলিম সুশাসক রাজা দেখে ছিলেন।
খ. ডক্টর জেমস ওয়াইজ-এর মতে ফাদার ম্যানরিক ১৬৩০ সনে চট্টগ্রামে উপস্থিত হন।
গ. ফ্রানসিস ফারনানডিজ নামে গোয়ানিজ পাদ্রীর বন্দী হিসেবে ১৬০২ সনে চট্টগ্রামের কারাগারে মৃত্যু হয়। আরাকানরাজের পীড়নেই তার মৃত্যু হয়।
ঘ. ১৬০১ সনে যশোরে ও চট্টগ্রামে দুটো জেসুইট মিশন আসে। তখন দেয়াঙ্গে এক গীর্জাও ছিল।
ঙ. ১৬০২ সনে পর্তুগীজেরা চট্টগ্রামে আরাকান শাসক কর্তৃক উৎপীড়িত হয়ে সন্দ্বীপে ঘাঁটি করে। সন্দ্বীপ আগে বাকলারাজের শাসনে ছিল, কিন্তু পরে গৌড় শাসনভুক্ত হয়। ১৫৬৫-৮৬ সনের দিকে সন্দ্বীপের মুসলমানেরা পর্তুগীজদের প্রতি প্রীতি ও সৌজন্য রাখত।
চ. বাকলারাজের অনুগত Dominique Carvalho এবং Manuel-de-Mallos–এর যুক্তবাহিনী সন্দ্বীপ দখল করল। কিন্তু অল্পকালের মধ্যেই আরাকানরাজ তাদের বিতাড়িত করে সন্দ্বীপ পুনরাধিকার করে বাকলা জয় করেন (১৬০২), যশোরে হানা দেন এবং বাংলাদেশ জয়ের হুমকি হাকেন। তখন কারভালহু কিছু অনুচরসহ পালিয়ে শ্রীপুরে আশ্রয় নেন।
ছ. ১৬০৭ সনে আরাকানরাজ দেয়াঙ্গ দখল করেন। দেয়াঙ্গের পর্তুগীজ বাসেন্দাদের কিছু নিহত হয়, কিছু মেঘনার দ্বীপাঞ্চলে পালিয়ে গিয়ে আত্মরক্ষা করে। এক মুঘল নৌ-অধ্যক্ষ ফতেহ খান সন্দ্বীপ দখল করে মুঘলের চাকরি ছেড়ে দিয়ে স্বাধীনভাবে রাজত্ব করতে থাকেন। তিনিও পর্তুগীজ আর খ্রীস্টান দাসদের হত্যা করে উচ্ছেদ করেন। এ সময় সাবসটিয়ান গনজালিস টিবাও এবং কিছুসংখ্যক পর্তুগীজ দেয়াঙ্গ থেকে পালিয়ে গিয়ে দস্যুবৃত্তি গ্রহণ করে। এদিকে ফতেহ খান ১৬৬৫ সনে মুঘল সেনা ইবন হোসেনের হাতে পরাজিত ও বন্দী হন।
জ. দস্যু গনজালিস ক্রমে শক্তিশালী হয়ে সন্দ্বীপের স্বাধীন রাজা হন। তিনি চন্দ্রদ্বীপের রাজার সঙ্গে বন্ধুত্ব করে বিশ্বাস ভঙ্গ করেন। আবার আরাকানরাজ-ভ্রাতা আনোপোরমকে বশ করে তার ভগ্নীকে বিয়ে করেন এবং কিছুকাল পরে তাকে হত্যা করে বহু ধনরত্নের মালিক হন। গনজালিস সন্দ্বীপে নয় বছর রাজত্ব করার পরে আরাকানরাজের হাতে পর্যুদস্ত হয়ে পালিয়ে যান (১৬১৬) 4016 I (Gongales s) sovereignty passed like a shadow. his pride was humbled and his villainies punished. পর্তুগীজরা এরপরে আর কোনোদিন রাজনৈতিক প্রতিপত্তি লাভ করেনি, তবে উপকূলাঞ্চলে অপ্রতিহতভাবে দৌরাত্ম্য করতে থাকে। হার্মাদদের জালিয়া দেখলে মুঘল নওয়ারাও ত্রস্ত হয়ে উঠত।
ঝ, বানিয়ার বলেছেন–(১৬৬৮) St Augustine সম্প্রদায়ের এক ভিক্ষু Fra goan কয়েক বছর ধরে স্বাধীনভাবে সন্দ্বীপে রাজত্ব করেছেন।
ঞ. বহু পর্তুগীজ শাহ সুজাকে (১৬৬০) আরাকানরাজের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে সহায়তা করেছে। সুজার পরাজয়ে এরা আরাকান থেকে পালিয়ে এসে বাঙলার উপকূলাঞ্চলে (সুন্দরবন, বাকলা ও হুগলী অবধি) ডাকাতি করে বেড়াত।
ট. ফ্রায়ার ম্যানরিক–এর (১৬২৮-৪৩) বর্ণনায় পাই:
১. পর্তুগীজরা আরাকানরাজের অনুমতি নিয়েই দেয়াঙ্গে বাণিজ্যকুঠি নির্মাণ করে। বন্দর করবার জন্যেই পর্তুগীজরা আরাকানরাজ থেকে দেয়াঙ্গ ইজারা নেয়।
২. আরাকানরাজ মুঘলশক্তিকে প্রতিরোধ করবার অভিপ্রায়েই পর্তুগীজ জলদস্যুদের সহায়তা করতেন, এমনকি এ কার্যে ওদেরকে তিনিই নিযুক্ত করতেন এবং লুণ্ঠিত দ্রব্যের ও দাসের অর্ধেক পেতেন তিনি।
৩. দেয়াঙ্গে ও তার চারপাশের গায়ে খাঁটি ও সঙ্কর পর্তুগীজের সংখ্যা ছিল সাড়ে সাতশ। এসব লোক কয়েকটি কম্পানী বা দলে বিভক্ত ছিল। আরাকানরাজ তাদের জায়গীর দিয়েছিলেন। ১৬১৬ সনে সন্দ্বীপের রাজা গনজালিস টিবাও আরাকানে হানা দিতে গিয়ে ব্যর্থ হয়। দেয়াঙ্গের পর্তুগীজদের উপর গোঁয়ার গভর্নর-এর কোনো কর্তৃত্ব চলত না। গনজালিস ও ব্রাইটো নিজেদেরকে গভর্নরের সমকক্ষ বলে দাবী করতেন।
৪. ম্যানরিক যখন দেয়াঙ্গে আসেন, তখন চট্টগ্রামের শাসক ছিলেন সুধর্মার ভাই। তাঁর মৃত্যুতে নতুন এক শাসক প্রেরিত হন। ১৬০০-১৭ সাল অবধি পর্তুগীজ প্রতাপ অপ্রতিরোধ্য ছিল। তখন The portuguese had dreams of making and unmaking the rulers of Arakan। বিশ্বাসঘাতকতার শাস্তি দেবার জন্য আরাকানরাজ দেয়াঙ্গে একটি সৈন্যদল প্রেরণ করেছিলেন। পরবর্তীকালে আওরঙ্গজীব দেয়াঙ্গের পেশাদার পর্তুগীজদের ঘুষে ও হুমকিতে বশ করেছিলেন।
ঠ. শিহাবুদ্দীন তালিসের বর্ণনায় আরো কিছু তথ্য মেলে :
১. চট্টগ্রাম দুর্গের ভেতরে একটি টিলায় একটি সমাধি আছে। ঐটি পীর বদরের আস্তানা নামে পরিচিত। মঘেরাও এ সমাধিকে তীর্থরূপে মানে কয়েকখানি গ্রাম এই সমাধির জন্যে ওয়াকফ করে দেয়া হয়েছে।
২. কর্ণফুলীর অপর তীরে চট্টগ্রাম দুর্গের বিপরীত দিকে একটি সুদৃঢ় ও উঁচু দুর্গ আছে। এখানে প্রতিরক্ষার সব উপকরণ মজুত থাকে। আরাকানরাজের বিশ্বস্ত আত্মীয় বা জ্ঞাতি চট্টগ্রামে শাসনকর্তা থাকেন। ১৫৮৬ সন থেকে এ ব্যবস্থা চালু হয়। আরাকানরাজ নিজের নামে চট্টগ্রামে স্বর্ণমুদ্রা তৈরি করান।
৩. অতীতে বাঙলার সুলতান ফখরুদ্দীন চট্টগ্রাম জয় করে চট্টগ্রাম থেকে চাঁদপুর অবধি রাস্তা (আল) তৈরি করিয়েছিলেন, এ রাস্তা শ্রীপুরের বিপরীত দিকে নদীর অপর পার থেকে শুরু। ফখরুদ্দীনের সময়ে নির্মিত মসজিদ ও সমাধি ছিল চট্টগ্রামে। এগুলোর ভগ্নাবশেষই তার প্রমাণ।