দুপুরের ঘুম-ভাঙা চোখে দরজা খুলেছে একটি মেয়ে। বিবাহিত। সুশ্রী স্রস্ত বেশবাস। কোলে একটি ফুটফুটে শিশু।
দরজা খুলে মেয়েটিও অবাক একটু।
। আচমকা ধাক্কাটা অর্চনা যেন যন্ত্র-চালিতের মতই সামলে নিল। জিজ্ঞাসা করল, এবাড়িতে কে থাকেন?
জিজ্ঞাসা করার দরকার ছিল না। দরজার নেমপ্লেটে সুখেন্দু মিত্রের নাম লেখা। আর শিশুটির মুখের আদলেও তার জবাব লেখা।
মেয়েটি ইশারায় নেমপ্লেটটাই দেখিয়ে দিল।
ও… অর্চনা বিব্রত মুখে হাসল একটু, আমি ঠিকানা ভুল করেছি। হাত বাড়িয়ে তাড়াতাড়ি শিশুটির গাল টিপে দিল।–বেশ ছেলেটি তো…আপনাদের ছেলে?
মেয়েটির মুখে তুষ্টির আভাস একটু। মাথা নাড়ল। তার পর জিজ্ঞাসা করল, আপনি যাবেন কোথায়?
অর্চনা ব্যস্তভাবে জবাব দিল, এই এ-দিকেই যাব, আপনাকে বিরক্ত করলাম… নমস্কার।
আর জিজ্ঞাসাবাদের ফুরসৎ না দিয়ে ছেলেটির গালে আর একবার আঙুল স্পর্শ করে অতি-আধুনিকার মতই টক-টক করে রাস্তায় নেমে এলো অর্চনা বসু …
.
০৯.
পাখি-ডাকা আবছা অন্ধকারে ভোরের আভাস।
খরখরে দু-চোখের ওপর দিয়ে আর একটা রাতের অবসান। অর্চনা বসু উঠবে। ঈজিচেয়ারটা ঠেলে ভিতরে নিয়ে যাবে। তার পর, হাত-মুখ ধুয়ে এসে চেয়ারে বসে ঝিমুবে খানিক। দাশু চা নিয়ে আসবে। পর পর দু-তিন পেয়ালা চা খেয়ে গা ঝাড়া দিয়ে উঠে দাঁড়াবে সে, চান করে আসবে। ইস্কুলের খাতা দেখে বা বই পড়ে কাটবে কিছুক্ষণ। তারপর শুচি শুভ্র বেশবাসে নিজেকে ঢেকে ইস্কুলে যাবার জন্য প্রস্তুত হবে।
সেই ধপধপে সাদা পোশাক। আর সাদাটে ব্যবধান।
গাইডের শুচি-মত থাকার নির্দেশ ভোলে নি।
আর, তার কথা-মত বিশ্বাসটাও দূর করে উঠতে পারে নি।