এমনিতে কেমন আলাঝোলা, কিন্তু বুড়োটার পেটেও এত বুদ্ধি! বলে কিনা, গলা টিপে মেরে গিয়েছিল।
একবার স্বামীর ঘুমন্ত মুখটা, আরেকবার মাদুলি ছড়াটার দিকে চেয়ে ওর পাতলা ঠোঁটে একটা সূক্ষ্ম হাসির রেখা ফুঠে ওঠে। এরপর হঠাৎ সক্রিয় হল। স্বামীর গা ঘেঁষে ওর মুখের ওপরে ঝুঁকে মাথার চুলে আদর করে, এরপর একটা নাড়া দিয়ে বলল, এই!
অল্পেতেই ঘুম ভেঙে যায় রমুর। সে পিটপিট চোখে দেখে ঘরে আলো এবং পরী বসে আছে কাছে। বলল, আইছিস?
হ! অভিমানের ইচ্ছাটাকেও পরী ভুলে গেছে, সে বলল, খোয়াবে দেহি তুমারে ক্যাডা মারতে আইতাছে, আর থাকতে পারলাম না।
হু খুব পিরিত। শুয়ে থেকেই বালিশের ধারে হাত দিয়ে একটা বিড়ি বার করল রমু।
মাদুলি ছড়াটা ধরে পরী বলল, দ্যাহ তুম যে কইতা, আমি আজগা চুরি করছি।
লম্বা কথা শোনার অবসর ছিল না রমুর, অলঙ্কারটা দেখবা মাত্র সে ঝট করে উঠে বসলো। চাপা উত্তেজিত স্বরে জিগগেস করলো, কইখে?
ছড়াটা ছোঁ মেরে নিয়ে সে বাতির ধারে মেলে ধরল।
এই দ্যাহ, আরো। কোমরে গুঁজে রাখা আঁচল খুলে পোঁটলাটা বার করল পরী, সঙ্গে সঙ্গে সেটাও রমু টান দিয়ে নেয়। আস্তে খোলবার অবস্থা নেই, দুই হাতে টান দিয়ে ছিঁড়ে মাটিতে ঢেলে দিলে অনেক টাকা, আধুলি, সিকি ঝঝন্ করে উঠল। বৌয়ের মুখের দিকে তেমনি দ্রুত চেয়ে বলল, এই তো! এই তো কামের মত কাম করছস!
বাতিটা নিভাইয়া ফালাও! পরী ফিসফিস্ করে বলল, কেউ দেখবো।
কথাটা ঠিক রমুও উপলব্ধি করল, কিন্তু তৎক্ষণাৎ আলো নেভাল না। আচমকা প্রবলভাবে টেনে ওকে তুলে নিল বুকের ওপর। পরী কোনমতে বলল, আহ্ আস্তে!
পরদিন সকালে অভ্যেসমত হাল নিয়ে মাঠে গেল না ধনু মোশ্লা, ফজরের নামাজের পরেও অনেকক্ষণ বসে ওজিফা করলো জায়নামাজের ওপর। চেহারায় অটল গাম্ভীর্য। সারাটা দিনও তেমনি ভাব। রাত্রে খাওয়া-দাওয়ার পর ছেলেপেলেরা বসলে বৌ-ঝিদেরও ডেকে বলল, রা হগতেই, আমি এবার হজে যাইয়াম। গতরাত্রে রার মারে দেখলাম, হেই পরীর বেশে আইয়া আমারে তাই করতে কইছে। সকলে মুখ চাওয়া-চাওয়ি করে। এবং দুদিনের মধ্যে কথাটা সারা গ্রামে রাষ্ট্র হয়ে গেলেও কেউ তা বিশ্বাস করল না।