ঘেটুপুত্র কমলা’-এর মহরতের দিন হঠাৎ করেই হুমায়ূন আহমেদ ঘোষণা দেন, এটিই তার শেষ ছবি। মহরতে উপস্থিত বিশিষ্ট ব্যক্তিরা তাৎক্ষণিকভাবে হুমায়ূন আহমেদকে এ সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের অনুরোধ জানান।
[সংগ্রহ : আনোয়ার জাহান ঐরি, চলন্তিকা ডট কম।]
হিমুকে নিয়ে হ্যালো-টুডেতে
হুমায়ুন আহমেদ উপন্যাস ও নাটকের জন্যে কয়েকটি চরিত্র তৈরি করে তিনি ব্যাপক আলোচিত হয়েছিলেন। চরিত্রগুলোর মধ্যে অন্যতম হিমু । নন্দিত এই কথা শিল্পী হিমু চরিত্র নিয়ে কি ভাবেন? হিমু কে নিয়ে হ্যালো-টুডেতে দেয়া হুমায়ুন আহমেদের সাক্ষাৎকারটি তুলে ধরা হল ।
তাকে জিজ্ঞেস করা হয়,’আপনার উপন্যাসের জনপ্রিয় চরিত্র হিমু।এটা কি নিছক কাল্পনিক?না আপনি এর মধ্য দিয়ে আপনার পরিচিত কাউকে তুলে ধরেছেন?’
হুমায়ুন আহমেদের উত্তর,’না হিমুতে আমি আসলে পরিচিত কাউকে তুলে ধরি নাই,যে হিমু আমি লিখি আসলে সে হিমু হওয়া একটা জটিল ব্যাপার।মানুষের অনেক ইচ্ছা পূরনের ব্যাপার আছে,মানুষ করতে চায় কিন্তু করতে পারে না।এই যে ইচ্ছাগুলি আছে,আমি হিমুর মাধ্যমে এই ইচ্ছাপূরন গুলি ঘটাই।
পাঠকদের কাছে হিমুর এত জনপ্রিয়তার কারন কি বলে আপনার ধারনা?
-যে কারনে আমার ধারনা পাঠকরা এত পছন্দ করে,এরা হতে চায়,করতে চায়।এরা চায় যে আমার আধ্যাত্বিক ক্ষমতা থাকবে,আমি মানুষের ভূত ভবিষ্যত বলে দিতে পারবো।সবার মনের একটা গোপন বাসনা পথে ঘাটে আমি হেটে বেঁড়াবো,কেউ আমাকে কিছু বলবে না।আমাকে কোনো চাকরি করতে হবে না।কোনো কিছুই করতে হবে না,আমার জীবন চলবে জীবনের মত।এই যে গোপন ইচ্ছাগুলি থাকে এইগুলি আমি পূরন করি হিমু উপন্যাসে।’
আচ্ছা মি.আহমেদ,হিমু তো আপনার পাঠকদের কাছে অনুকরনীয় চরিত্র হয়ে দাড়িয়েছে।এই হিমুকে নিয়ে বিশেষ কোন ঘটনা আছে কি যা আপনাকে নাড়া দিয়েছে?
-হ্যা,একটা বলা যেতে পারে।আমি একবার একটা ম্যাগাজিন পেলাম রাশিয়া থেকে,ঐ ম্যাগাজিনে দেখি ওদের রাশিয়াতে একটা হিমু ক্লাব আছে।হিমু ক্লাবের ছেলেমেয়েরা কিন্তু সব রাশিয়ান,বাংলাদেশি না।এরা একটি অনুষ্ঠান করেছিল যাতে সব অ্যাম্বাসেডরদের ডেকেছে,সেখানে সব অ্যাম্বাসেডরদের হলুদ কাপড় পড়ে আসতে হবে। এর পর যারা যারা হলুদ কাপড় পড়ে আসেনি তাদের সবাইকে একটা করে হলুদ টাই দেয়া হয়েছে।এটা পড়ে আমি ধাক্কার মত খেয়েছিলাম।
হিমুকে নিয়ে আর কোনো স্মরনীয় ঘটনা কি আছে?
– আরেকটা ঘটনা মনে পড়ছে।জার্মানীতে আমি একবার গিয়েছিলাম ফ্রাংক ফুড বইমেলায়।অনেক ঠান্ডা তখন সেখানে।বরফ পড়ছে এমন অবস্থা।সেখানে হলুদ একটা কোট পড়ে এসে একজন আমাকে বললো,’স্যার আমি হিমু।’আমি বললাম,’হিমু?হিমুর তো পা খালি থাকে।’ছেলেটা বললো যে,’স্যার দেখেন’।আমি তখন একটা ধাক্কার মত খেলাম যে এই ঠান্ডায়ও তার পা খালি।’
স্যার কখনো অবসর নেবেন?
-হ্যা অবসর নেব। মৃত্যুর এক ঘন্টা বা দুই ঘন্টা আগে নেব,আমি চাই মৃত্যুর এক ঘন্টা আগেও যেন আমি এক লাইন হলেও বাংলা গদ্য লিখে যেতে পারি।’
হুমায়ুন আহমেদ বলেছিলেন, মৃত্যুর কয়েক ঘণ্টা আগ পর্যন্ত তার লিখে যাওয়ার ইচ্ছা। তিনি জানিয়েছিলেন, তার লেখার শেষ লাইনটি কী হবে সেটাও তিনি ঠিক করে রেখেছেন।
[সংগ্রহ : আনোয়ার জাহান ঐরি, চলন্তিকা ডট কম।]
হুমায়ূন আহমেদ এবং হুমায়ূন আহমেদ – ইমদাদুল হক মিলন
হুমায়ুন আহমেদকে নিয়ে ইমদাদুল হক মিলনের একটি লেখা আছে, নাম – হুমায়ূন আহমেদ এবং হুমায়ূন আহমেদ। লেখাটিতে হুমায়ুন আহমেদ এর সাক্ষাৎকার এর সাথে সাথে বেশ কিছু মজাদার হাসি তামাশাও চলে এসেছে যাতে হুমায়ুন আহমেদের চির হাস্যমুখর প্রানবন্ত অনুভুতিও ফুটে উঠেছে। লেখাটি অনেক বড়….
এই লেখাটুকু হুমায়ূন আহমেদের
কিছুদিন হলো আমার জীবনচর্যায় নতুন সমস্যা যুক্ত হয়েছে। সন্ধ্যা মিলাবার আগেই সিরিয়াস মুখভঙ্গি করে তিন-চারজন আমার বাসায় উপস্থিত হচ্ছে। আমার মায়ের শোবার ঘরটিতে ঢুকে যাচ্ছে। নিজেরাই উদ্যোগী হয়ে এসি ছেড়ে দিচ্ছে। গলা উঁচিয়ে চা-নাশতার কথা বলছে। এই ফাঁকে একজন ক্যাসেট রেকর্ডার রেডি করছে। অন্য একজন ক্যামেরায় ফিল্ম ভরছে। তৃতীয়জন কাগজ-কলম নিয়ে প্রস্তুত। চতুর্থজন ব্যস্ত হয়ে মোবাইলে টেলিফোন করছে ইমদাদুল হক মিলনকে। ঔপন্যাসিক চলে এলেই কর্মকাণ্ড শুরু হবে। ঔপন্যাসিক আমার ইন্টারভিউ নেবেন।
ইমদাদুল হক মিলনের সমস্যা কী আমি জানি না। ইদানীং সে সবার ইন্টারভিউ নিয়ে বেড়াচ্ছে। টিভি খুললেই দেখা যায় সে কারোর না কারো ইন্টারভিউ নিচ্ছে। পত্রিকার পাতাতেও দেখছি অনেকেই তার প্রশ্নবাণে জর্জরিত। কিছুদিন আগে পশ্চিমবঙ্গ থেকে ঔপন্যাসিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় সস্ত্রীক বেড়াতে এসেছিলেন। তাঁরাও রক্ষা পাননি। তিন দিন ধরে ক্রমাগত তাঁদের ইন্টারভিউ হলো। আমার দখিন হাওয়ার বাসাতেই হলো।
মিলন জানেও না ইন্টারভিউ নিতে নিতে তার গলার স্বরেও কিছু পরিবর্তন হয়েছে। চোখের দৃষ্টিও অন্য রকম। এখন তার চোখে শুধু প্রশ্ন খেলা করে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, আমি কেন এই ফাঁদে পা দিলাম? সন্ধ্যাটা আগে বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে ভালোই কাটত। এখন ক্যাসেট প্লেয়ার মুখের সামনে ধরে মিলন বসে থাকে। সামান্য ঝুঁকে এসে প্রশ্ন করে_