সাউথ এণ্ড-এ এসেক্সের সঙ্গে খেলা। অস্ট্রেলিয়া প্রথম দিনে তুলল ৭২১। একদিনে এত রান আজও বিশ্বরেকর্ড। ডন করে ১৮৭ রান। দ্বিতীয় দিনে এসেক্সকে দু-বার আউট করে দিয়ে অস্ট্রেলিয়া বুঝিয়ে দেয়, ব্যাটিংয়ে ও বোলিংয়ে এই দল অসাধারণ ক্ষমতা ধরে। লর্ডসে এমসিসি-র বিরুদ্ধে ডন করল ৯৮ এবং ইনিংসে পরাজিত হয় এমসিসি। ল্যাঙ্কাশায়ারের বিরুদ্ধে বৃষ্টিভেজা উইকেটে দুই ইনিংসে ডনের উইকেট পায় ল্যাটা স্পিনার ১৯ বছরের হিলটন। ডন করে ১১ ও ৪৩। হিলটনের এটি প্রথম ম্যাচ খেলা। সারা ইংল্যাণ্ডে মাতামাতি শুরু হল ছেলেটিকে নিয়ে। কয়েকটি কাগজ লিখল, এখুনি একে টেস্ট খেলানো হোক। হিলটন পরে চারটি টেস্ট খেলে ১৪ উইকেট পায় গড় ৩৩.৬৪ রানে—দক্ষিণ আফ্রিকা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও ভারতের বিরুদ্ধে। তারপর ওকে সবাই ভুলে যায়। এরপর ডন নটিংহামের বিরুদ্ধে ৮৬ ও সাসেক্সের বিরুদ্ধে ১০৯ করে। এবার নটিংহামে প্রথম টেস্ট ম্যাচ।
নটিংহামের আকাশে মেঘ, উইকেট তাজা ঝকঝকে। প্রথম টেস্ট ম্যাচের শুরুর মুহূর্তে ডন টস হেরে ড্রেসিং রুমে এসে বলল, ‘এটা বোধ হয় জীবনের সবথেকে পয়া হার হয়েছে।’ চমৎকার উইকেট, বাতাসে বৃষ্টির আমেজ। শুরুতেই মিলার উড়িয়ে দিল হাটনের মিডল স্টাম্প। দিনের শেষদিকে ইংল্যাণ্ড ইনিংস শেষ হল ১৬৫ রানে।
দ্বিতীয় দিনে মরিস ফিরে আসার পর ডন খেলতে নামে। হ্যাসেটের সঙ্গে জুড়ি বেঁধে যখন তার ব্যাটিং প্রস্ফুটিত হচ্ছে, ইয়ার্ডলি তখন রক্ষণাত্মক ফিল্ড সাজিয়ে রক্ষণাত্মক বল করতে শুরু করে। উদ্দেশ্য ডনের রান তোলা বন্ধ করা। বোলারদের অধিকাংশ বল লেগ-স্টাম্পের বাইরে। ওরা ছেড়ে দিতে লাগল। খেলা চলল মন্থর গতিতে, রান উঠেছে আরও মন্থরে। মিডিয়াম পেসার বার্নেটের একটা ওভারে ডন শুধু ব্যাট তুলে বলের দিকে তাকিয়ে থাকে, খেলার চেষ্টা না করে। বল লেগ-স্টাম্পের এক ফুট বাইরে দিয়ে যায়। চায়ের আগে ১৫ মিনিট ডন একটিও রান করল না। দর্শকরা বিরক্ত হয়ে তার উদ্দেশ্যে চেঁচামেচি-বিদ্রূপ করতে থাকে।
তৃতীয় দিনে নতুন বল নিয়ে ইংল্যাণ্ড শুরু করল ১৩০ রানে অপরাজিত ডনের বিরুদ্ধে। আরও ৮টি রান করার পরই লেগ-স্টাম্পের উপর বেডসারের ইন-সুইং বল গ্লান্স করে ব্যাকোয়ার্ড শর্ট লেগে হাটনের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরে আসে। বলটি ডন না খেললেও পারত। কিন্তু লেগ-সাইডে ফিল্ড সাজিয়ে, লেগ-স্টাম্পে মিডিয়াম পেস ইন-সুইং—অধুনা প্রচলিত এই পদ্ধতির বলকে ডন তীব্র অপছন্দ করে। তার মতে এই ধরনের বলই খেলাকে একঘেয়ে নিষ্প্রভ করে দেয়। তাই বেডসারের বলটিকে সেশাস্তি দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। এরপর প্রতিটি খেলায়ইংরেজ বোলাররা এইভাবে বল করে ডনের উইকেট পাওয়ার চেষ্টা করে।
অস্ট্রেলিয়ার ইনিংস শেষ হয় ৫০৯ রানে। ইংল্যাণ্ড দ্বিতীয় বারে করে ৪৪১। জেতার জন্য ৯৮ রান তুলতে অস্ট্রেলিয়াকে হারাতে হয় মরিস ও ডনকে। এবারও বেডসার-হাটন জুড়ি ডনকে আউট করে এবং শূন্য রানে। ইংল্যাণ্ডে টেস্ট ম্যাচে এই প্রথম তার শূন্য রান।
লর্ডসে দ্বিতীয় টেস্ট ম্যাচ শুরুর আগে ডন একটি ম্যাচ খেলে ইয়র্কশায়ারের বিরুদ্ধে। সফরে ইয়র্কশায়ারের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ার এটি দ্বিতীয় সাক্ষাৎ। প্রথম সাক্ষাতে ডন খেলেনি। প্রায় হারের মুখে এসে অস্ট্রেলিয়া সে-খেলায় ৪ উইকেটে জিতেছিল। জয়ের জন্য যখন ৬০ রান দরকার তখন তাদের ষষ্ঠ উইকেট পড়ে ৩১ রানে। হার্ভি ও ট্যালন শেষপর্যন্ত অস্ট্রেলিয়াকে ৬৩ রানে পৌঁছে দেয়। এবারের খেলা অমীমাংসিত থাকে। ডন করে ৫৪ ও ৮৬।
লর্ডসে ডন টসে জিতল। ইংল্যাণ্ডে দুটি সিরিজে অধিনায়কত্ব করে এই এক বারই মাত্র ডন টসে জেতে। অস্ট্রেলিয়ার ৩৫০ রানের ইনিংসে সেদিল মাত্র ৩৮ রান। আবার সেআউট হয় বেডসারের বলে হাটনের হাতে। ইংল্যাণ্ড ৪০৯ রানে দ্বিতীয় টেস্ট হেরে গেল।
ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে তৃতীয় টেস্ট ম্যাচের আগে ডন একটি মাত্র ইনিংস খেলে। ওভালে সারের বিরুদ্ধে ১২৮। খেলার শেষে ডন উইম্বলডনে গিয়ে অস্ট্রেলিয়ার জন ব্রমউইচকে ফাইনালে হারতে দেখল আমেরিকার বব ফকেনবার্গের কাছে।
যথারীতি বৃষ্টি ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে। দ্বিতীয় ইনিংসে ইংল্যাণ্ড যখন ৩১২ রানে এগিয়ে এবং হাতে সাতটি উইকেট, তখনই বৃষ্টি নেমে দেড় দিন খেলা বন্ধ থাকে। অস্ট্রেলিয়া খেলার বাকি সময় ব্যাট করে কাটিয়ে দেয়। এই টেস্টে ডনের রান ৭ ও অপরাজিত ৩০। ইংল্যাণ্ডের প্রথম ইনিংসে ফরোয়ার্ড শর্ট লেগে ফিল্ড করার সময় ডিক পোলার্ডের প্রচন্ডভাবে পুল করা বল সিড বার্নেসের বুকে লাগে। বার্নেস প্রাণে বেঁচে যায় সে-যাত্রা।
দুটি টেস্টে জয় ও একটি অমীমাংসিত। ‘রাবার’ হারবার ভয় থেকে মুক্ত অস্ট্রেলিয়া লিডসে চতুর্থ টেস্ট জিতল ৭ উইকেটে। এই ম্যাচে ৩১ উইকেটে সংগৃহীত হয় ১,৭২৩ রান—টেস্ট ক্রিকেটে চতুর্থ বৃহত্তম মোট রান। পঞ্চম বৃহত্তম চতুর্থ ইনিংস রানও (৪০৪-৩ ডি:) হয়েছে এই টেস্টে। ডনের প্রিয় হেডিংলি মাঠ। ইয়র্কশায়ারের ক্রিকেটপাগলরা ভোলেনি এই মাঠে ডনের ঐতিহাসিক কীর্তিগুলি— ১৯৩০-এ ৩৩৪, ১৯৩৪-এ ৩০৪, ১৯৩৮-এ ১০৩। ইংল্যাণ্ডের ৪৯৬ রানের ইনিংসের পর ডন যখন ব্যাট করতে আসে দর্শকরা তুমুলভাবে অভিনন্দন জানায়। ডন রীতিমতো অবাক হয়ে যায়। যখন মাঠে নামল তখন প্রচন্ড কলরব, তারপর একটু কমে গিয়ে আবার উত্তাল হয়ে ফেটে পড়ল ডন যখন ক্রিজে পৌঁছোয়। টুপি তুলে সেনাড়ল; অভিনন্দন তখনও অব্যাহত। দেশের বাইরে সেএমন স্বতঃস্ফূর্ত স্বাগতধ্বনি কখনো পায়নি। বুকের মধ্যে বাষ্প ঠেলে উঠল। ডন ব্যাট তুলে তাদের অভিনন্দন জানায়। ৩৩ রান করে পোলার্ডের বলে বোল্ড হয়ে সেফিরে আসে। ফেরার পথে তার কানে এল : ‘ঘাবড়াও মাত, আর একটা ইনিংস আছে।’