কিন্তু বিনতার কিছুই ভালো লাগছিল নানা আলো, না পানীয়, না খাদ্যের সৌরভ।
দেখেই বোঝা যাচ্ছিল একই অবস্থা মধুরও। না হলে অত দামি ফরাসি সুরায় চুমুক দিয়ে কেউ অমন মুখবিকৃতি করেনা। সে চোখ তুলে তাকাল পেছন ফিরে দাঁড়িয়ে থাকা বিনতার দিকে। একদৃষ্টিতে কিছুক্ষণ চেয়ে রইল বিনতার প্রশস্ত নিতম্ব, সরু কোমর আর প্রায় নগ্ন পিঠের দিকে। কামে, রীরংসায় জ্বলে গেল তার বুক। আঃ, একবার যদি ওকে টেনে নিয়ে যাওয়া যেত ওই বিছানায়! ঠিক এই সময়েই বিনতা তীব্র মোচড়ে ঘুরে দাঁড়াল আর তার চোখ সরাসরি পড়ল মধুর কামুক চোখের ওপর। সেই দৃষ্টি চিনতে বিনতার ভুল হল না। সে ঘৃণায় মুখ বাঁকিয়ে বলল, রেপিস্ট…মাডারার! তোমাকে আমি এই কাজ করতে বলেছিলাম?
মানে? মধুও আহত সাপের মতন ফোঁস করে উঠল। যার জন্যে করি চুরি সেই বলে চোর! যা হয়েছে তাতে আপনার উপকার হয়েছে কি হয়নি বলুন।
সেটা বলার সময় এখনও আসেনি। বাট ইউ নো, আমরা বিজনেস কমুনিটির লোক, কাজ উদ্ধার করার জন্যে ব্রাইব দিই, পলিটিকাল-প্রেসার অ্যাপ্লাই করি, সেগুলো আলাদা কথা। খুনখারাপি করি না। আর রেপ! ও মাই গড। একটা বেচারা মেয়ে…কোন জানোয়ার করেছে। ওই কাজ?
আমি জানি না। মধু ঘাড় গোঁজ করে বলল।
না, জানো না! ইউ স্কাউন্ডেল! ঘৃণায় মুখ বেঁকিয়ে বলল বিনতা মেহরা। তারপর বারান্দা থেকে সেন্টার টেবল অবধি দূরত্বটা আবার টলোমলো পায়ে পেরিয়ে এসে ঝুঁকে পড়ল ওয়াইনের গ্লাসটা হাতে তুলে নেবার জন্যে। এর ফলে বিনতার সুডৌল দুই স্তন মধুর নাগালের মধ্যেই উন্মোচিত হল। ক্রোধ আর কামে মেশা এক জান্তব তাড়নায় মধু ঝট করে হাত বাড়িয়ে বিনতার হাতের কব্জি চেপে ধরে বলল, গালাগাল দেবেন না বলছি। যা করেছি তার দাম চুকিয়ে দিন। চলে যাচ্ছি। বিনতার হাত ধরে একটা টান দিল মধু নিজের দিকে। পরক্ষণেই বিনতা দেখল, মধু বর্মন তাকে এক হাতে চেপে ধরেছে নিজের বিশাল জানুর ওপর। অন্য হাতটা তার বুকে। অবাক বিনতা অস্ফুট স্বরে একবার ডাকল, মেফিস্টো!
মধু ঠিক বুঝল না কী হল। সে শুধু দেখল বিনতার ওই ডাকে ভেতরের ঘর থেকে একটা ঝড় ছুটে এল। পরমুহূর্তেই যেন গরম লোহার অনেকগুলো শিক গেঁথে গেল তার কাঁধে। মধু দুটো হাতই বাড়িয়ে দিল সেই মূর্তিমান শমনকে সামলানোর জন্যে, যে ততক্ষণে তার গলার দিকে তাক করেছে।
মধুর মুঠির থেকে মুক্ত বিনতা নিজেকে সামলে নিয়ে উঠে দাঁড়াল। চিবিয়ে চিবিয়ে মধুকে বলল, মেফিস্টো হল খাঁটি জার্মান ব্রিডের ডোবারম্যান পিনসার। কিলার ডগ। তোমার গলার নলি ছিঁড়ে নেবে ও।
মধু দুহাতে সেই খুনে কুকুরকে আটকাতে আটকাতে কাতর গলায় কোনওরকমে বলতে পারল, সরান। আপনার পায়ে পড়ছি একে সরান!
বিনতা এবার ঘরের দরজাটা খুলে দেয়ালের একটা পিয়ানো সুইচে চাপ দিল। বাইরে কোথাও একটা বেল বাজল।
মধু বর্মনের নিজের চেহারা যে কোনও মাপকাঠিতেই বিশাল, তবে বিনতা মেহরার ডাকে যে লোকটি ঘরে ঢুকল তার পাশে মধুকে বাচ্চাছেলের মতন লাগছিল। হোটেল-প্রহরীর পোশাক পরা দৈত্যাকার লোকটার তৎপরতা অবশ্য অবাক করে দেওয়ার মতন। ঘরে ঢুকেই ব্যাপারটা কী হয়েছে বুঝে নিতে তার এক সেকেন্ডের বেশি সময় লাগল না। একহাতে সে মেফিস্টোর গলার বকলশ ধরে তাকে টেনে সরিয়ে নিল, অন্য হাতে মধুর জামার কলার ধরে তাকে প্রায় ঝোলাতেই ঝোলাতেই ঘরের বাইরে নিয়ে গেল। ঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে সে একবার মধুর দিকে চোখের ইঙ্গিত করে বিনতার কাছে কোনও একটা কাজের অনুমতি চাইল। বিনতা দ্রুত ঘাড় নেড়ে তাকে নিবৃত্ত করল। বোঝা গেল, মধু বর্মন খুন হওয়ার হাত থেকে আপাতত। বেঁচে গেল।
তবে আহত হওয়াটা যে সে আটকাতে পারেনি সেটা টের পাওয়া গেল, যখন ঝুপা তাড়াহুড়ো করে তিনবাত্তি মোড়ের একটা সরবতের দোকান থেকে বরফ কিনে নিয়ে নিয়ে তাদের গাড়ির মধ্যে ঢুকল। গাড়ির পেছনের সিটে মধু বর্মন শুয়ে শুয়ে কাতরাচ্ছিল। তার শরীরের বেশ কয়েকটা জায়গায় কালশিটের দাগ। তার মধ্যে একটায় ঝুপা বরফ ঘসে দিতেই জ্বলুনির চোটে মধু চিৎকার করে উঠল, অ্যাইইই শুয়োরের বাচ্চা। মেরে ফেলবি না কি আমাকে?
এই সবই হচ্ছে প্রমিতের ওপর গ্রামবাসীদের আক্রমণের পরদিনের ঘটনা।
আগের দিন দ্যুতি আর রূপেন শইকিয়া তাদের কাজ সেরে বিকেল বিকেলই জঙ্গল। থেকে হরিণডুবি বাংলোয় ফিরে এসেছিল। কিন্তু হরিণডুবিতে না আছে মোবাইলের টাওয়ার, না টিভি। ফলে প্রমিতের ওপর আক্রমণের ঘটনা জানলো তারা পরদিন সকালে, হরিণডুবি বিট-অফিসের বিট অফিসার সজল দত্তের কাছে, যিনি আবার জেনেছিলেন অফিসের আর টি সেটে। ঘটনাটা জানার পরেই রূপেন শইকিয়া কালক্ষেপ না করে নিজের বোলেরোয় রওনা হয়ে গেলেন আলিপুরদুয়ারের দিকে। বেরোবার আগে একবার শুধু বলেছিলেন দ্যুতি, তুমি যদি চাও, তাহলে আমার লোকেদের বলে দিতে পারি, তোমাকে কালকের ওই গ্রামটাতেই আবার নিয়ে যাবে। ওখানে তুমি কাজ করতে পারো।
দ্যুতি এই কথা শুনে অসম্ভব অবাক চোখে রূপেনের দিকে তাকাল। তারপর খুব অস্ফুট স্বরে বলল, প্রমিতদার এই অবস্থা, আর আমি আজ কাজ করব! আমি যাব আপনার সঙ্গে। রূপেনের মনে হল তার চোখদুটো একটু ছলছলে।