বললাম, সে তো তুমি বলবে না। কিন্তু ক্ষমা করে দেবে বলো।
লিমা বলল, হ্যাঁ রে বাবা দোব। নে দিলাম।
আমি আমতা আমতা করে বলা শুরু করলাম—আমি ভোম্বল আর ডম্বল তোমাদের দেখেছি…
লিমা এবার রীতিমতো উদবিগ্ন— কী দেখেছিস আমাদের?
–তোমাদের চান করতে দেখেছি।
গমের মতো রং লালিমার, তাতে সূর্যডোবার ছটা লাগল যেন। ওর চোখ দুটো বন্ধ করে বসে রইল চুপচাপ। কিন্তু আমি আর থামতে পারছি না, বলেই চলেছি, আমরা দরজার ফুটো দিয়ে তোমাকে আর রিমাকে সাবান মেখে খেলা করতে দেখেছি।
লিমা সব শুনেও সেই চুপ করে আছে। তারপর হঠাৎ আমার মাথাটা টেনে নিয়ে গালে একটা চুমু দিল। দিয়ে বলল, যাঃ। কাউকে বলিস না, ক্ষমা করে দিলাম।
আমি ফের আমতা আমতা করে শুরু করলাম, আর তো তোমাদের ওভাবে দেখতে পাব
…
-তো?
-তো, আরেকবার দেখতে দেবে তোমার বুকটা।
লালিমা চোখ বড়ো করে আমার দিকে চাইল। তারপর গলা নামিয়ে বলল, কী দেখতে
চাস?
—তোমার বুক দুটো।
–কেন? এত রসকষ কীসে ভালোমানুষের পো?
—আর তো দেখতে পাব না।
লালিমা হঠাৎ ওর টেপফ্রকের পিছনে বোতামগুলো পটপট করে খুলতে লাগল। তারপর হাতার থেকে হাত দুটো ছাড়িয়ে জামার ওপরের অংশ নামিয়ে বুক দুটো খুলে দিলে আমার সামনে। আর আমি একদম থ।
তাকিয়ে দেখেই যাচ্ছি তো দেখেই যাচ্ছি, সাধও মেটে না, কথাও ফোটে না। আর লালিমা একনজরে দেখে যাচ্ছে আমার চোখ দুটো। জানি না কখন এক সময় আমার ডান হাতটা গিয়ে স্পর্শ করল লালিমার ডান বুক। আদরের ভঙ্গিতে হাত বুলোনো শুরু করলাম। যেন খেলা করছি নিজের সঙ্গে। কিংবা পাড়ার ছোট্ট সরস্বতী প্রতিমার সঙ্গে।
হঠাৎ যেন একটা ঘোরের মধ্যে থেকে উঠে এসে লালিমা বলল, আমি এখান থেকে চলে গেলে তোর কষ্ট হবে?
আমি ওর বাঁ-দিকের বুকটায় আদর করতে করতে বললাম, কেন এসব অলক্ষুণে কথা বলছ?
লালিমা বলল, সত্যি রে। আমার সম্বন্ধর খবর দিয়ে গেছে মামা। হয়ে গেলে তো চলে যাব।
আর আমি নিজেকে ধরে রাখতে পারলাম না। লিমার খোলা বুকে ঝাঁপ দিয়ে পড়ে সিরিলের ঢঙে মুখ ঘষতে ঘষতে বললাম, না, না, তোমরা সবাই এভাবে ছেড়ে চলে গেলে আমি কাদের নিয়ে থাকব?
আমার গলাটা ভেঙে এসেছিল। লিমা আমার মাথায় হাত বুলাতে বুলোতে বলল, নে ছাড়, মা-রা এসে পড়বে কোন সময়। আমি লিমার মুখে, ওর বুকের বোঁটায় দুটো চুমু দিয়ে ঘর ছেড়ে গলির অন্ধকারে পড়লাম।
২.
আমার ম্যাটিনি শোয়ের নায়িকারা দিন দিন সংখ্যায় বাড়ছে। ফ্ল্যাটের চিলেকোঠার ঘরে বসে খেয়াল রাখি মার্লিনদের পাশের ফ্ল্যাটের টুম্পা কখন লোরেটো থেকে ফিরে ওদের বসার ঘরের কাচের শার্সি খুলে নীচে তাকাবে মাথায় বাক্স নিয়ে ঘোরা কেক-প্যাটিসের জন্যে। ও তখন হাত নাড়ে আমায় আমিও হাত নাড়ি।
একদিন এরকম প্যাটিস কিনছি আমরা, হঠাৎ ও বলল, নীতুদা, তুমি ইশকুলে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছ?
বললাম, তা কেন? এখন তো আমার গরমের ছুটি চলছে। আরও এগারো দিন আছে। টুম্পা বলল, তারপর তো তুমি পরীক্ষা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়বে?
বললাম, তাতে তোর কী অসুবিধে?
-না, মা, বলছিল তুমি ইংলিশে খুব ভালো। আমার কয়েকটা পড়া যদি দেখিয়ে দাও।
–কী পড়া?
—দুটো কবিতা। বেশ টাফ লাগে।
–ওয়াল্টার ডি লা মেয়রের। দ্য লিসনার্স’ আর উইলফ্রেড ওয়েনের ‘স্ট্রেঞ্জ মিটিং’।
আমি একটু অবাক হয়ে বললাম, তোমাদের এসব কবিতা পড়ানো হয়?
ও বলল, বা রে! আমরা কি বাচ্চা আছি নাকি?
-তাহলেও …
–কেন তোমার কাছেও কঠিন লাগছে?
বললাম, তা না। তবে জানিস কী এই দুটো কবিতাতেই ভূত আছে।
হঠাৎ হাতে প্যাটিস নিয়ে খিল খিল করে হাসতে লাগল টুম্পা। বলল, সেজন্যই অ্যাভয়েড করছ? কেন তুমি তো দিব্যি রাতের বেলায় ছাদের ঘরে একলা পড়। তোমার তো আর ভূতের ভয় নেই।
আমতা আমতা করে বললাম, কিন্তু তুই পারবি আমার ওই ছাদের ঘরে গিয়ে পড়ে আসতে?
কীরকম সিটিয়ে গেল টুম্পা—জানি না, মাকে জিজ্ঞেস করতে হবে। কেন, তুমি পার না আমাদের বাড়ি এসে পড়াতে?
বললাম, না। তোমার পাশের ফ্ল্যাটের সিরিলটাকে দেখলে আমার মাথা গরম হয়ে যায়। টুম্পা অবাক হয়ে বলল, সে আবার কী! ও তো খুব ভালো মানুষ। টিপিক্যাল অ্যাংলোইণ্ডিয়ান নয়। ওর সঙ্গে আবার তোমার কী হল?
বললাম, কিছু না। তবে ও মার্লিনকে মারে। আমার একদম এটা পছন্দ নয়।
টুম্পা বলল, তাহলে বলো আমাকে পড়াতে চাও না। তাই তো?
—তাহলে তাই।
বলে আমার হাতের প্যাটিসটাও ওর হাতে ধরিয়ে দিয়ে চলে এলাম। মার্লিনের কাঁদতে কাঁদতে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাওয়া আমার চোখের সামনে ভাসছে। ভাসছে ডম্বল-ডোম্বলের মামার হাত ধরে কলকাতা ছেড়ে চলে যাওয়ার দৃশ্য। ভাসছে লালিমার খোলা বুক। একটা গোটা বছর গড়িয়ে গেছে, কিন্তু দৃশ্যগুলো এতটুকু পুরোনো হয়নি। ইতিমধ্যে লালিমার বিয়ে হয়ে উত্তরপাড়া চলে গেছে। হঠাৎ এক সকালে পায়খানায় মাথা ঘুরে পড়ে গিয়ে কাকা দেহরক্ষা করেছেন। বাবার মৃত্যুর পর কাকাই মাথার ওপরে ছিলেন। সেই তিনিও চলে গেলেন। মা বলেছে, সামনের বছর থেকে আমি বোর্ডিং-এ থেকে পড়ব। এই এত কিছুর মধ্যে আমি শান্তি পাই নানা ইংরেজি বই পড়ে আর নানা বারান্দায় আর জানালায় আমার সোফিয়া লোরেন, সুচিত্রা সেনদের দেখে। কিন্তু এদের কারও সঙ্গেই প্রায় আমি মিশতে পারি না। শুধু একটা বছরেই আমি কী ভীষণ বদলে গেছি!