ডেভিড বাঁকা মুখে বললেন, ওটা একরকম পোড়া কবরখানাই বলতে পারেন কর্নেল! কে যাবে অতদূরে? তার ওপর চোর-ডাকাত-ওয়াগনব্রেকারদের আচ্ছা। আমি প্রভুর নামে দিব্যি কেটে বলতে পারি, কোনও ধনী খ্রিস্টান গত চল্লিশ বছরে ওখানে বডি নিয়ে যাননি। কেন জানেন? মার্বেল ফলক, দামী কাঠের ক্রস, সব রাতারাতি ডাকুরা উপড়ে নিয়ে পালাবে। শয়তানের কবলে পড়েছে কবরখানাটা! তা ছাড়া ওটা প্রোটেস্ট্যান্ট চার্চের সম্পত্তি। ক্যাথলিক চার্চ হলে বরং রক্ষণাবেক্ষণ হতো!
সেই প্রোটেস্ট্যান্ট চার্চের ঠিকানাটা জানেন?
ডেভিড একটু অবাক হয়ে বললেন, কিছু কি ঘটেছে?
কর্নেল বুঝলেন, ডেভিড খবরের কাগজে ছোট করে বেরুনো খুনের খবরটা পড়েননি। চেপে গিয়ে বললেন, নাঃ মিঃ প্যাটার্সন! আপনি তো জানেন আমি বার্ড-ওয়াচার, গতকাল ওখানে পাখি দেখতে গিয়ে কবরখানার দুর্দশা লক্ষ করলুম। অনেক বিখ্যাত ইংরেজদের কবর আছে ওখানে। আপনি যা বলছিলেন, সব দামী ফলক আর ক্রস লোপাট হয়ে গেছে। তাই ভাবলুম…….
হাত তুলে তাঁকে থামিয়ে রুষ্ট ভঙ্গিতে ডেভিড বললেন, কিছু করা যাবে না। কেন জানেন? কেয়ারটেকার গোমেশ বুড়োই হলো যত নষ্টের গোড়া। আমার দৃঢ় ধারণা, সে-ই ফলক আর ক্রসচোরদের সাহায্য করে। বখরা পায়। গোমেশ মূর্তিমান শয়তান।
গোমেশকে আপনি চেনেন?
চিনি না মানে? ডেভিড ফুঁসে উঠলেন। জীবনে অসংখ্য কাজ সে করেছে, যা কোনও কবরখানার কেয়ারটেকার কখনই করবে না।
যেমন?
গোমেশ রেস খেলত।
বলেন কী!
ডেভিড আরও উত্তেজিত হয়ে বললেন, রেসে ফতুর হয়ে যাচ্ছিল দেখে ওর বউ আত্মহত্যা করেছিল। ওর ছেলেমেয়েরা রাগ করে অস্ট্রেলিয়া চলে গেল। আমার কাছে গোমেশ একবার পঞ্চাশ টাকা ধার করে নিয়ে গেল। আর শোধ দেবার নাম নেই। শেষে ওর খুড়তুতো বোনকে গিয়ে ধরলুম! ভদ্রমহিলা পরিবারের সম্মান বাঁচাতে টাকাটা শোধ করলেন। কর্নেল! যদি ওর সব কথা ওদের চার্চকে জানাতুম, ওর চাকরিই থাকত না। প্রভু যিশুর দিব্যি, টাকাটা না পেলে আর মুখ বুজে থাকতুমই না।
কর্নেল চুরুটের কৌটো বের করে ডেভিডকে একটি চুরুট দিলেন। ডেভিড সিগারেট তক্ষুণি ঘষটে নিভিয়ে অমায়িক হেসে চুরুটটির তারিফ করলেন। এতক্ষণে কর্নেলের আপ্যায়নের জন্য হাঁক দিলেন, বারবারা! হোয়ার আর ইউ, হনি? কাম অ্যান্ড সি, হু ইজ হেয়া!
ডেভিডের ধুমসি বউ বারবারা ঘর থেকে উঁকি মেরে প্রায় চেঁচিয়ে উঠলেন, ও! মাই, মাই! তারপর ধুপধাপ শব্দে এসে সামনে দাঁড়ালেন। ইউ নটি বয়। কতোদিন পাত্তা নেই। আজ আপনার শাস্তি।
এক পেয়ালা কফি, ডার্লিং! কর্নেল অট্টহাস্য করলেন। বারবারা ধুমসি সাহেব হলেও খুব চটপটে, হাসিখুশি, চঞ্চল মহিলা। স্বামীর উল্টো। তখনই অতিথি সৎকারে ছুটলেন। ডেভিড বাঁকা মুখেই ছিলেন। এই সময় চাপা গলায় বলে উঠলেন, আস্ক হার অ্যাবাউট গোমেশ। শি অলসো নোজ এভরিথিং। তাছাড়া গোমেশের খুড়তুতো বোন আবার বারবারার বন্ধু। তা নইলে কি টাকাটা ফেরত পেতুম?
সেই বোনের ঠিকানা জানেন?
ডেভিড নাকের ডগা কুঁচকে চুরুটের ধোঁয়া ছেড়ে বললেন, চন্দননগরে . থাকে। আমি ঠিকানা জানি না। বারবারা জানে।
একটু পরে বারবারা ট্রে সাজিয়ে নিয়ে এলেন। কর্নেল ব্রেকফাস্ট সেরে বেরিয়েছেন। কিন্তু বারবারা তাকে ডবল ব্রেকফাস্ট না খাইয়ে ছাড়বেন না। কর্নেল কফিতে চুমুক দিয়ে বললেন, বারবারা, ডিয়ারি! তোমার হাতের কফির কোনও তুলনা হয় না!
বারবারা ভঙ্গি করে বালিকার চাপল্যে বললেন, আই গেস, সামথিং থ্রিলিং হ্যাঁজ হ্যাঁপড় সামহোয়্যার। ওকে নটি বয়! আস্ক মি হান্ড্রেডস অফ কোয়েশ্চস্। আইম রেডি টু আনসার।
ডেভিড চমকে উঠলেন এতক্ষণে। মাই গড! আমার এটা ভাবা উচিত ছিল।
কর্নেল মিটিমিটি হেসে বললেন, তেমন কিছু নয়। ঠিক আপনার মতোই ব্যাপার। গোমেশ আমার কাছে একশো টাকা ধার করেছেন। প্রায়ই ওই কবরখানায় পাখি দেখতে যেতুম। তো কাল বিকেলে গিয়ে দেখি, ওঁর ঘরের দরজায় তালা আটকানো।
ডেভিড দ্রুত বললেন, বারবারা। ইউ ডু সামথিং এগেন! দা ব্লাডি বাস্টার্ড সোয়াইন!
বারবারা স্বামীকে ধমক দিয়ে বললেন, চুপ! দিনটাকে নষ্ট কোরো না। কর্নেল! সমস্যা হলো, বেচারি ইভলিন আর তার কাজিন ব্রাদারের টাকা শোধ করতে পারবে কি না, আমার সন্দেহ আছে। ইভলিন মিশনারি কলেজের অধ্যাপিকা। দয়া করে ওকে এক্সটেনশন দিয়েছেন কলেজ কর্তৃপক্ষ। ওঁর-ও তো ভবিষ্যৎ আছে। তবে আমি চিঠি লিখে আপনাকে পরিচয় দিতে পারি।
উনি কি চন্দননগরে থাকেন? কর্নেল জিজ্ঞেস করলেন।
ইভলিন থাকে একটু দূরে। ব্রিটিশ চন্দননগরের কাছে নিরিবিলি এলাকায় গঙ্গার ধারে ওর পৈতৃক বাড়ি। পুরানো বাড়ি ওর বোন এমা বিয়ে করেছে এক হিন্দু ভদ্রলোক সাম মিঃ ঘোষকে। এমা তার স্বামীকে নিয়ে দিদির বাড়িতেই থাকে। বারবারা একটু ভেবে নিয়ে ফের বললেন, ঠিকানা লিখে দিচ্ছি, তবে ইভলিনকে দয়া করে পীড়াপীড়ি করবেন না, হেভস্ সেক!
না, না। গোমেশ কোথায় গেলেন, সেটা খোঁজার জন্য ওঁর সাহায্য চাইব।
ডেভিড বললেন, বদমাশটা ঠিক ওখানে গিয়ে জুটেছে দেখবেন। আর যাবে কোন চুলোয়? অস্ট্রেলিয়া যে যায়নি, তা আমি দিব্যি কেটে বলতে পারি। যাবার টাকা ও পাবে কোথায়?