ইয়া! মেক হে ডার্লিং! দিস্ ইজ ভেরি ইমপর্ট্যান্ট।
ফোন ছেড়ে দিলেন কর্নেল। কাগজের কুচিগুলো একটা খামে ঢুকিয়ে নিজের লেখাটা ভাঁজ করে ড্রয়ারে রাখলেন। বৃষ্টি আবার শুরু হয়েছে। বাইরে আবহাওয়া স্নিগ্ধ ছিল। কিন্তু এতক্ষণে গরম টের পেলেন। কাগজের কুচি উড়ে যাওয়ার আশঙ্কায় জানালা বন্ধ করেছিলেন। ফ্যানও বন্ধ ছিল। জানালা খুলে ফ্যান চালিয়ে দিলেন। তারপর টেবিল থেকে স্যান্ডেলটা তুলে নিয়ে ইজিচেয়ারে বসলেন।
বাঁ পায়ের স্যান্ডেল। দুপাশেরই ফিতে উপড়ে গেছে। রবারসোল চিড় খেয়েছে। ছুটে পালিয়ে যাওয়ার স্পষ্ট চিহ্ন। কিন্তু ছুটে পালাতে হলো কেন? ওই জনহীন জায়গায় ধীরে-সুস্থে যেতে পারত কাজ শেষ করে–অবশ্য যদি সে খুনী হয়!
রেলইয়ার্ডের সেন্ট্রি তাড়া করেছিল কি?
ওরা তাড়া করে না। চার্জ করে। না থামলে গুলি ছোঁড়ে। খোঁজ নেওয়া দরকার গত রাতে তেমন কিছু ঘটেছিল কি না।
কিন্তু এমন পুরনো স্যান্ডেল, আর সেলাইয়ের চিহ্ন…….কোনও বেকার যুবক?
স্যান্ডেলের চেহারায় রুচির পরিচয় না থাক, সামান্য বিলাসিতা…….নাঃ! বিলাসিতা নয়। সে গতানুগতিকতার পক্ষপাতী নয়। সবাই যে স্টাইল পছন্দ করে, সে তা করে না।
কর্নেল হাত বাড়িয়ে টর্চটা নিলেন। আবার খুঁটিয়ে পরীক্ষা করতে থাকলেন। বুড়ো আঙুলের জোড়ের জায়গাটা ফাঁক করেই চমকে উঠলেন। জোড়ের জমাট অংশে কী ছোপ। বৃষ্টিতেও ধুয়ে যায়নি। দ্রুত একটা আলপিন এনে জোড়ের ভেতর চালিয়ে একটা কাগজে আলপিনের ডগা ঘষে দিলেন। কালচে রক্তের রেখা!
স্যান্ডেলে রক্ত মেখে গিয়েছিল। ধুয়ে গেছে বৃষ্টিতে। আজ সুযোগমতো এটা খুঁজতে এসেছিল। কর্নেল গিয়ে পড়ায় ব্যর্থ হয়েছে।
কাগজে স্যান্ডেলটা মুড়ে ড্রয়ারে ঢুকিয়ে বাথরুমে গেলেন কর্নেল। সাবান দিয়ে রগড়ে দুটো হাত ধুয়ে ফেললেন। ডাইনিং রুমে ঢুকে দেখেন, ষষ্ঠীচরণ বসে ঢুলছে। তার চুল টেনে দিয়ে থাপ্পড় তুলতেই ষষ্ঠী ফিক করে হেসে বলল, বেড়াল, বাবামশাই! বেড়াল?
তারপর নিজের ঘরে চলে গেল। কর্নেল হাসতে হাসতে তার উদ্দেশে বললেন, বেড়াল তোর মাথার ভেতর, ষষ্ঠী! খেয়াল করে শোন, মাও এ্যাও করে ডাকছে।
ষষ্ঠী তার ঘর থেকে বলল, আর ডাকছে না বাবামশাই!
পাইলে গেছে?
ষষ্ঠীকে নকল করায় ষষ্ঠীর অভিমান হওয়া স্বাভাবিক। আর তার সাড়া পাওয়া গেল না।
খাওয়ার পর কর্নেল ড্রইংরুমে এসে ইজিচেয়ারে বসে সবে চুরুট জ্বেলেছেন, ফোন বাজল। সাড়া দিলেন।
হাই ওল্ড বস! চোর পালালে বুদ্ধি বাড়ে।
বাস্কেটটা নেই?
আছে। তবে খালি। কিচেনে ছাইয়ের গাদা। মিঃ গোমেশ উধাও।
সে কী! কর্নেল সোজা হয়ে বসলেন। অরিজিৎ! ওঁর কোনও বিপদ হয়নি তো?
তেমন কোনও লক্ষণ খুঁজে পাওয়া যায়নি। ঘরের দরজায় তালা আটা ছিল। ভাঙতে হয়েছে।
ঘরে তালা আটা! জিনিসপত্র? দেয়ালে একটা ওভাল মিরর ছিল…
নেই। ইন্সপেক্টর আর মিটারকে তো চেনেন! খুবই দক্ষ অফিসার আমার ডিপার্টে। কেয়ারটেকার সন্ধ্যা সাতটা নাগাদ রিকশো চেপে কোথায় গেছেন, সো মাচ ইনফরমেশন হি গট।
তুমি সকালে একবার এস, ডার্লিং! একপাটি জুতো…….
জুতো মারবেন? আমার অপরাধ?
তুমি যে খাঁটি বারেন্দ্র বামুন, বোঝা গেল। একটুতেই উত্তেজনা!
জুতোটুতো শুনলে ভূতেও উত্তেজিত হয় কর্নেল!
আরও উত্তেজিত হও, ডার্লিং! কাগজে রক্তের দাগ ছিল। এবার জুতোয় রক্তের দাগ।
ব্যস! এনাফ! আজ ঘুমের ট্যাবলেট খেতে হবে। গুড নাইট!…..
২. ছেঁড়া একপাটি স্যান্ডেল
সকাল নটায় ছেঁড়া একপাটি স্যান্ডেল নিয়ে অরিজিৎ লাহিড়ী চলে গেলে কর্নেল বেরুলেন। পায়ে হেঁটেই গেলেন। ক্রিশ্চিয়ান আন্ডারটেকার সোসাইটির অফিস মিনিট পাঁচেক হাঁটলেই বাঁ দিকে পড়ে। গেটের কাছে পৌঁছুলে উঁচু বারান্দায় ডেভিড প্যাটার্সনকে দেখতে পেলেন। বারান্দায় টেবিলের সামনে বসে সিগারেট ফুকছে।
কলকাতায় কয়েকটা আন্ডারটেকার সোসাইটি আছে। এঁরা হিন্দু সত্ত্বার সমিতির মতোই মৃত খ্রিস্টানদের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার ব্যবস্থা করেন। কফিন তৈরি, কফিনবাহী গাড়ি, পাদ্রি ইত্যাদি সবই এঁরা ব্যবস্থা করে দেন।
কর্নেলকে দেখেই ডেভিড তড়াক করে উঠে দাঁড়ালেন। মর্নিং! মর্নিং কর্নেল! বলে হাত বাড়িয়ে দিলেন করমর্দনের জন্য। ঈশ্বর না করেন, লিন্ডার ঠাকমার কিছু সুসমাচার নেই তো?
আন্ডারটেকার-কর্মী হাসতে লাগলেন। লিন্ডারা থাকে কর্নেলের তিনতলা বাড়ির দোতলায়। ওর ঠাকমা অনেকদিন ধরে শয্যাশায়িনী। বুড়ো বয়সে হাজারটা অসুখ।
কর্নেল মুচকি হেসে বললেন, না মিঃ প্যাটার্সন। আপনাকে সেই সুসমাচার এ মুহূর্তে দিতে পারছি না।
ডেভিড একটু নিরাশই হলেন যেন। এক সপ্তাহ যাবৎ কোনও বডি পাচ্ছেন। এমনিতেই এ শহরে খ্রিস্টান সংখ্যা কমে গেছে দিনে দিনে। তার সোসাইটির রোজগারপাতিও কমে গেছে। বড় আশা করে আছেন, লিন্ডার ধনী ঠাকুমার বডি পড়লে দামী কাঠের কফিন অর্ডার আসবে। ফিউনারাল হবে জম্পেশ রকমের। ভাব গোপন করে বললেন, প্রভুর ইচ্ছা! আসুন, বসুন। গল্প করা যাক। চমৎকার আবহাওয়া অজ।
কর্নেল বসে বললেন, এটা কথা জানতে এলাম মিঃ প্যাটার্সন?
বলুন, বলুন! আপনার মোর জন্য আমি সর্বদা তৈরি।
রেলইয়ার্ডের পাশের ওই সিমেট্রি কোন চার্চের প্রপার্টি?