হুম। তুমি ভাঙা ওয়াগনের আড়াল থেকে আমাকে ঢিল ছুঁড়েছিল!
সুব্রত করুণ হাসল। আমার চটি ছিঁড়ে গিয়েছিল। পরে পুলিশের ডগস্কোয়াডের কথা মনে পড়েছিল। আমি টিনিকে ছুঁয়েছি। কুকুর আমার চটি শুকে যদি…
কর্নেল অট্টহাসি হাসলেন, আমার পদ্ধতি ভিন্ন। আমি কুকুর পছন্দ করি। ওয়েল, যা হবার হয়েছে। এবার আমাকে খুনীকে ধরতে সাহায্য করো। আমি আজ রাতে ফাঁদ পততে চাই। একটু রিস্ক আছে। তবে তোমার কোনও ভয় নেই। শোনো, লেট মি এক্সপ্লেন…।
কথাকলি বলে উঠল, কিন্তু গোমেশবুড়োকে টিনির খুনী কেন খুন করল?
কর্নেল একটু গম্ভীর হয়ে বললেন, অনুমানও যুক্তিশাস্ত্রে সিদ্ধ। জাস্ট অঙ্ক, ডার্লিং! টিনি খুন হওয়ার পর টর্চের আলোয় গোমেশ সেই নির্দিষ্ট ফলকটিতে খোঁজার চিহ্ন দেখে থাকবেন, যা সুব্রতর চোখে পড়েনি। ফলে গোমেশ ফলকটি কোনও এক সময়ে চুপিচুপি খুঁড়ে হাতিয়েছিলেন। বেচার জন্য চন্দননগর গিয়েছিলেন। টিনির খুনী কবরখানায় গিয়ে ব্যাপারটা টের পায়। গোমেশকে সে রাত্রে গিয়ে ডাকে এবং খুন করে। ফলকের দামও দিতে চেয়েছিল হয়তো। গোমেশ সরাসরি নাকি ড্যানির সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এতে সে চটে যায়। ভয়ে গোমেশ ফলকটা লুকিয়ে ফেলেন। খুনীকে ধরতে পারলে জেরা করে জানা যাবে। যাই হোক, গোমেশকে খুন করে তারপর সে তন্নতন্ন করে খুঁজেছে। ফলকটি পায়নি। বুদ্ধিমান গোমেশ সেটি অদ্ভুত জায়গায় লুকিয়ে রেখেছিলেন। প্রাণের আশঙ্কা ছিল বলে সাংকেতিক ভাষায়…না। সব পরে শুনবে। আমার প্ল্যান নিয়ে বসা যাক। ষষ্ঠী! কফি! কফি না খেলে আমার মগজ চাঙ্গা হয় না। ষষ্ঠী। দেরি কেন?…..
.
কাঁটায় কাঁটায় রাত দশটা বাজল। আকাশ এ রাতে পরিষ্কার। ভ্যাপসা গরম। গাছপালার পাতা চুপ করে আছে। কবরখানায় পোকামাকড় ডাকছে। একটা রাতপাখি ডাকল কোথাও। তারপর ক্রাও ক্রাও একটা প্যাঁচা গির্জা থেকে উড়ে গেল রেলইয়ার্ডের দিকে। সেখানে হুইল্ শোনা গেল। তারপর মালগাড়ির শব্দ কতক্ষণ ধরে। টেনে-হিঁচড়ে বিরক্তিকর ভারী জিনিস টেনে নিয়ে যেতে ইঞ্জিনটা ফোঁস ফোঁস করে হাঁফাচ্ছে!
কৃষ্ণপক্ষের টুকরো চাঁদটা উঠেছে সবে। হালকা নরম সোনালি জ্যোৎস্না ছড়াচ্ছে। ছায়াকালো একটা মূর্তি রেলইয়ার্ডের দিকের ভাঙা পাঁচিল পেরিয়ে সাবধানে কবরখানায় চুল।
ছায়ামূর্তিটি গির্জার দিকে এগিয়ে এল। গাছের ছায়ায় কখনও সে মুছে যাচ্ছিল, আবার ফাঁকায় তাকে দেখা যাচ্ছিল।
মুর্তিটি সোজা গির্জার পুব দিকে এসে একটু কাশল।
গির্জার জানালার কাছে অন্য কেউ কেশে সাড়া দিল। তখন ছায়ামূর্তিটি হনহন করে এগিয়ে এল। চাপাস্বরে বলল, এনেছ?
এনেছি।
দাও।
টাকা?
সায়েব ওয়াগনের ওখানে আছে। বললে, সঙ্গে করে নিয়ে এস। টাকা। মিটিয়ে দেব।
চলো।
উঁহু, আমার হাতে মাল দাও আগে। মাল দেখি। আমি ওটা চিনি।
চলো না। ওয়াগনের ওখানে গিয়েই দেখবে আসল না নকল!
নাঃ। আগে দাও, দেখি। আমার কাছে টর্চ আছে।
টর্চ জ্বলল। হুঁ, ঠিক আছে। দাও। টর্চ নিভে গেল। দেরি কোরো না! দাও, দাও।
না। হাতে-হাতে টাকা চাই! নৈলে টিনির মতো আমাকেও……
শালা মরেছ তা হলে!
এবার ছায়ামূর্তি হাত তুলেছে। অমনি দ্বিতীয় ছায়ামূর্তি টর্চ জ্বালল। আততায়ীর হাতে ভোজালি!
দ্বিতীয় ছায়ামূর্তি একলাফে সরে গিয়ে চিৎকার করল, কর্নেল! কর্নেল!
অমনি চারদিক থেকে টর্চের আলো জ্বলে উঠল। বাজখাই গলায় কে চেঁচিয়ে উঠল, হাত উঠাও! চারদিক থেকে বুটের শব্দ। দুদ্দাড় ধুপধুপ এবং তীব্র আলো আর আলো!
আততায়ী যেদিকে পালাতে যায়, আললা! হাত উঠাও শুওরকা বাচ্চা! সে দুহাত তুলে দাঁড়াল। ভোজালিটা পড়ে গেল হাত থেকে।
কর্নেল সাড়া দিলেন, সুব্রত! আর ইউ অলরাইট?
সুব্রত হাসল। অলরাইট, কর্নেল!
অরিজিৎ লাহিড়ী এগিয়ে এসে হতভম্ব হয়ে বললেন, কী আশ্চর্য! এ তো সেই যুধিষ্ঠির!
কর্নেল বললেন, হ্যাঁ, যুধিষ্ঠির। টিনি ওর সাহায্য চেয়েই বিপদটি বাধিয়েছিল। দুধ দিয়ে কালসাপ পোষা একেই বলে। গোমেশ ওকে টেক্কা দিয়ে সরাসরি ড্যানিকে ফলক বেচার চেষ্টা করেছিলেন। এতে যুধিষ্ঠিরের রাগ হওয়া স্বাভাবিক।
যুধিষ্ঠিরকে হাতকড়া পরিয়ে টানতে টানতে নিয়ে যাচ্ছে, আচমকা হালদারমশাইয়ের গলা শোনা গেল, এই তো হেই থার্ড ক্লাস লোকটা! হেই বারের লোকটা! ড্যাং হালার লগে অরে দেখছিলাম!
কর্নেল অবাক হয়ে বললেন, আরে হালদারমশাই যে! আপনি কোথায়?
হালদারমশাই গির্জার ভাঙা জানালা গলিয়ে বাইরে ঝাঁপ দিলেন। আমি। গির্জার ভেতর সার্চ করছিলাম। প্রথমে ফিসফিস, তারপর আলো আর চেঁচামেচি শুনে ভয়ে…..বাপস্!
কর্নেল হালদারমশাইয়ের করমর্দন করে বললেন, আপনি বরাবর ঝামেলা বাধান বটে, তবে এবারকার কেসে আপনিই লাস্ট ব্লু দিয়েছে। থার্ড ক্লাস লোকটা! হুঁ, আমার পুরো থিওরি আপনার ক্লু পেয়ে শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে গিয়েছিল। কনগ্রাচুলেশন!
একজন অফিসার হাঁফাতে হাঁপাতে এলেন। অরিজিৎকে স্যালুট ঠুকে বললেন, ড্যানি ঘোষ ইজ অ্যারেস্টেড স্যার! হি ওয়জ ওয়েটিং ইন আ কার নিয়ার দা স্লাম এরিয়া!
অরিজিৎ বললেন, গুড নিউজ! থ্যাংক য়ু মিঃ ঘটক। নাও ডিসবার্স দা ফোর্স! অল দা অফিসারস ব্যাক টু লালবাজার! সি পি ইজ অ্যাংকশাসলি ওয়েটিং! হুঁ, আগে রেডিও মেসেজ জানিয়ে দিন, দা ব্লু মুন অপারেশন ইজ সাকসেসফুল!