টিনি যে রাতে খুন হয়, সেই রাতে যা সব ঘটেছিল, সুব্রত জানে। আর জানতেন গোমেশ। গোমেশ ইজ ডেড। আমার ভয় হচ্ছে, সুব্রত……
সুব্রতকে বেরুতে দিলে তো? কথাকলি হেসে ফেলল।
কর্নেল তার বিশাল অট্টহাসি হেসে বললেন, খাঁচায় পুরেছ? ভেরি ওয়েল, ডার্লিং! কামনা করি, এ খাঁচা স্থায়ী হোক।
কথাকলি ঈষৎ রাঙা হয়ে বলল, উই আর জাস্ট ফ্রেন্ডস!
ওক্কে। ওকে নির্ভয়ে নিয়ে এস।
সুব্রত ভীষণ অনুতপ্ত, কর্নেল! গোমেশ বেচারাকে ওর ভুলের জন্য মরতে হলো। টিনি অবশ্য জেদী গোঁয়ার মেয়ে ছিল। নষ্ট হয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু সুব্রত সৎ ছেলে, আমি বলছি!
হুঁ, ওকে আজই নিয়ে এস। বিকেলের মধ্যে আনলে ভাল হয়। তা হলে আমার ফাঁদ পাতার সুবিধে হবে।
কথাকলি চমকে উঠে বলল, কিসের ফাঁদ কর্নেল?
খুনীদের চক্রটি আমরা জানি। তুমি এবং সুব্রতও জানো। কিন্তু কে টিনিকে খুন করল এবং গোমশ জেভিয়ারকেও খুন করল, তাকে আমি চিনতে পেরেছি। তোমরা পারোনি। অথচ তোমরা–হয়তো তুমি নও, সুব্রত তাকে ভালই চেনে। কিন্তু শুধু জানে না, সে সাংঘাতিক খুনী। টিনি বোকামি করে তার সাহায্য নিতে গিয়েই…..নাঃ। তুমি সুব্রতকে আজই নিয়ে এস। ফাঁদ পাতব।
ষষ্ঠী জানে, মেয়েরা কফি পছন্দ করে না। চা-ও খুব কম মেয়ে খায়। তাই সে স্ন্যাক্স, সন্দেশ এবং চা এনেছিল। কর্নেল, সস্নেহে বললেন, সুখবর এনেছ। মিষ্টিমুখ কারো ডার্লিং?
কথাকলি হাসল। জয়ন্তদার কাছে শুনেছি, পুরুষ-মেয়ে সবাইকে আপনি ডার্লিং বলে সম্ভাষণ করেন। ইট ইজ আ বিট…
হুঁ, ইট ইজ আ বিট স্ট্রেইঞ্জ! কর্নেল আবার বিশাল হাসি হাসলেন। কলি! ইংরেজি ভাষার মজাটাই এই। বাংলায় এই ডার্লিং শব্দের বিকল্প নেই। বলো, আছে?
কথাকলি সন্দেশ খেতে খেতে বলল, বোধ হয় নেই।
বাছা শব্দটা চলত। কিন্তু ওটা একেবারে বালক-বালিকাঁদের ওপর চলে। এদিকে দেখ, ইংরেজিতে হনি শব্দটাও উভলিঙ্গ। ডার্লিং! ইংরেজরা মহা ধূর্ত জাতি!
আবার এক অট্টহাসি।
কথাকলি অবাক চোখে দেখছিল। এতদিন পরে রহস্যভেদী ধুরন্ধর বৃদ্ধ ঘুঘুর সঙ্গে ঘটনাচক্রে তার অপ্রত্যাশিতভাবে পরিচয় হয়ে গেল।
৮. লাঞ্চের পর কর্নেল
লাঞ্চের পর কর্নেল সুব্রত এবং কথাকলির প্রতীক্ষায় ছিলেন। আড়াইটে বাজার। পর ডোরবেল বাজল। কর্নেল নিজেই গিয়ে লুকিং গ্লাসে যাদের দেখলেন, একটু অবাক হলেন। যুধিষ্ঠির এবং টিনির মা।
দরজা খুললে যুধিষ্ঠির হকচকিয়ে গেল। বলল, আজ্ঞে আপনি স্যার…….
কর্নেল সহাস্যে বললেন, সি এম ডি এ অফিসার নই। ভেতরে এস। আসুন। সুরঞ্জনা দেবী!
দুজনে কুণ্ঠিতভাবে ড্রইংরুমে বসল। সুরঞ্জনা চোখ মুছে বললেন, আগে ক্ষমা চাইছি দাদা! আমার মাথার ঠিক ছিল না। ওই নচ্ছার খুনেগুলোর কথায় আমার বুদ্ধি সুদ্ধি গুলিয়ে গিয়েছিল।
কর্নেল বললেন, কী ব্যাপার বলুন! আমার ঠিকানাই বা কোথায় পেলেন, তা-ও বলুন!
যুধিষ্ঠির বলল, সুব্রতবাবু আজ গিয়েছিল। আপনার ঠিকানা দিয়ে বলল, ওঁর কাছে যান। দিদি আমাকে বললেন, যুবধা আমাকে নিয়ে চল। কিন্তু আমি স্যার, ভাবতেই পারিনি…..
তার কথার ওপর সুরঞ্জনা বললেন, তুমি থামো ত যুধোয় আমাকে বলতে দাও। ড্যানিসায়েব আর ওই গোমেশ পোড়ারমুখো আমার মেয়েকে খুন করেছে। দাদা, আমি ঘুণাক্ষরে বুঝতে পারিনি। টিনির সঙ্গে ওদের চেনা ছিল। টিনিই বলেছিল, বিপদে-আপদে ড্যানিসায়েবকে বললে মাথার কাছে দাঁড়াবে। গোমেশ পাপের সাজা পেয়েছে। এবার ড্যানিসায়েবের পালা। আমাকে বারণ করেছিল অচেনা লোক কিছু জিজ্ঞেস করল যেন মুখ না খুলি। তারপর আমাকে সে-ই ক্যামাক স্ট্রিটে এক ফ্ল্যাটবাড়িতে নিয়ে গিয়ে তুলল। বলল, পুলিশ জ্বালাতন করবে। এখানেই আপনি যতদিন খুশি থাকুন। কাল সন্ধ্যাবেলা বদমাশ হারামজাদা গুণ্ডা দিয়ে আমাকে ফ্ল্যাট থেকে বের করে দিল। জিনিসপত্র ফুটপাতে ফেলে দিল। তখন কী আর করব? কাঁদতে কাঁদতে নিজের বাড়িতে গেলুম।
যুধিষ্ঠির বলল, আমি বারণ করেছিলুম স্যার, দিদি শোনেনি।
কর্নেল বললেন, সুব্রত কখন আপনাদের কাছে গিয়েছিল আজ?
সুরঞ্জনা বললেন, ঘণ্টাখানেক আগে। সঙ্গে ছিল কলি নামে একটা মেয়ে। টিনির বন্ধু। আপনার ঠিকানা দিয়ে বলল, এখনই কর্নেলসায়েবের সঙ্গে দেখা করে সব বলুন।
কর্নেল হাসলেন। আস্তে বললেন, ড্যানিসায়েব বুঝতে পেরেছে, আপনাকে ক্যামাক স্ট্রিটে রেখে লাভ নেই। কারণ আপনার ঘরে পাথরের দামী ফলকটা নেই।
যুধিষ্ঠির চমকে উঠল। পাথরের দামী ফলক? সে কী জিনিস স্যার?
কবরখানার ফলক। কর্নেল মিটিমিটি হেসে টিনির মাকে বললেন, আপনাকে আপনার বাড়ি থেকে সরানোর কারণ, সে আপনার বাড়ি তন্নতন্ন করে খুঁজতে চেয়েছিল। যুধিষ্ঠির হাজতে ছিল। কাজেই ইচ্ছেমতো খোঁজার সুযোগ পেয়েছে।
যুধিষ্ঠির আবার চমকে উঠে বলল, কাল রাত্তিরে স্যার, দিদির ঘরে চোর ঢুকেছিল। আমি চুপচাপ ছিলুম। নেবেটা কী? ঘরে তো লবডঙ্কাটি! সে হেসে ফেলল। চোর চলে গেলে খুব হাসলাম, স্যার!
কর্নেল চুরুট ধরিয়ে একরাশ ধোঁয়ার মধ্যে সুরঞ্জনাকে বললেন, ড্যানিসায়েব আপনার মেয়েকে খুন করেছে?
সুরঞ্জনা কী বলতে ঠোঁট ফাঁক করেছিলেন, যুধিষ্ঠির বলল, গোমেশ স্যার, গোমেশ! তবে ড্যানিসায়েব হয়তো পেছনে ছিল। খুন করেছে গোমেশ। আমার সামান্য বুদ্ধিতে তাই মনে হচ্ছে। গোমেশ প্রায়ই যেত টিনির কাছে। ফুসুরফুসুর করত।