ওই হলো। হালদারমশাই বলেন না? শুনে-শুনে মুখস্থ।
কর্নেল তেড়ে গেলেন। বল্ কে-স!
খেস!
থাপ্পড় খাবি। খেস নয়, কেস।
ষষ্ঠী কেস, কেস করতে করতে হাসতে হাসতে নেমে গেল।
কর্নেল খুরপি রেখে হাত ঝাড়তে ঝাড়তে সিঁড়ির দিকে এগোলেন। ড্রংইরুমে গিয়ে ফোন তুলে আস্তে বললেন, কর্নেল নীলাদ্রি সরকার বলছি।
আপনার কোনও বিপদ হয়নি তো?
কণ্ঠস্বরে উদ্বেগ। আসল-নকল একটি বাক্য শুনে বোঝা অসম্ভব। তবে সুরেলা কণ্ঠস্বর। কর্নেল বললেন, কার সঙ্গে কথা বলছি, আগে জানতে চাই।
আমার নাম কথাকলি চক্রবর্তী।
হুঁ সুব্রত…।
আপনার কোনও বিপদ হয়নি তো?
হতে পারত। হয়নি? তো বলো–বলুন?
আপনি-টাপনি নয়। আমি আপনার মেয়ের মতো। টিনি আমার বন্ধু ছিল।
তুমিও কি বারের গাইয়ে?
ভ্যাট্! কেন এ কথা বলছেন?
তোমার কণ্ঠস্বরটি গায়িকার।
ধন্যবাদ। শুনুন, আমি আপনার সঙ্গে দেখা করতে চাই। কিন্তু আমার ভয় করছে, অকারণ পুলিশ যদি আমাকে…….
না। পুলিশ আমার বাড়ি পাহারা দেয় না। তুমি চলে এস।
প্লিজ কর্নেল! আমি সামান্য নেয়ে। আমার আয়ের ওপর একটা বড় ফ্যামিলি বেঁচে আছে। আমার বাবা পক্ষাঘাতগ্রস্ত। ভাইবোনেদের লেখাপড়া, সংসার…
এনাফ। নির্ভয়ে চলে এস, ডার্লিং! এই বৃদ্ধের অবস্থা বটবৃক্ষের মতো। সবাইকে আশ্রয় দিয়ে খুশি হয়। চলে এস।
কর্নেল ফোন রেখে গার্ডেনিং জোব্বা খুলতে গেলেন। বাথরুম সেরে ড্রইং রুমে এলেন। চুরুট ধরালেন। একবার ভাবলেন, আবার কোনও ফাঁদ নয় তো? আবার মনে হলো, কণ্ঠস্বরে অভিনয়ের ছাপ নেই। থাকলে আঁচ করার ক্ষমতা আছে তার। অবশ্য তিনি চিরকুমার। সাংবাদিক জয়ন্ত চৌধুরীর মতো মেয়েসঙ্গ করার অভিজ্ঞতা তার নেই। ভারতীয় প্রাচীন শাস্ত্রে বলেছে, মেয়েদের বুঝতে দেবতাদেরও হিম্মত নেই, মানুষ কোন ছার!
মাত্র পনের মিনিট পরে ডোরবেল বাজল। ষষ্ঠীকে বললেন কর্নেল, তোর সেই চকরবর্তী এলে নিয়ে আসবি এ ঘরে। অন্য কেউ হলে বুঝেছিস তো! ওয়েটিংরুমে বসিয়ে নামধাম সব জিজ্ঞেস করবি।
ষষ্ঠী বোঝে। ঝটপট সে যাকে নিয়ে এল, তার বয়স কুড়ি-একুশের মধ্যে। পরনে প্যান্ট-কোর্তা। স্মার্ট মড চেহারা। ছোট করে ছাঁটা চুল। নমস্কার করে। বসল।
কর্নেল অমায়িক হেসে বললেন, তুমি টিনির বন্ধু! ওয়েল, তোমারও ডাকনাম থাকা উচিত।
কলি।
সুইট নেম, ইনডিড! কর্নেল নিভন্ত চুরুট ধরিয়ে বললেন, তুমি আমার জন্য উদ্বিগ্ন ছিলে। সেজন্য ধন্যবাদ। তবে বুঝতে পারছি, তুমি টিনির খুনীদের চক্রটি সম্পর্কে খবর রাখো। প্লিজ, এই পয়েন্টটা আগে ক্লিয়ার করে দাও।
কথাকলি মুখে বিষণ্ণতা ফুটিয়ে বলল, টিনি আমাকে মুখ ফসকে বলেছিল, সে শিগগির ভাল পাড়ায় উঠে যাবে। কারণ সে অনেক টাকা পাচ্ছে শিগগির। ওকে ইনসিস্ট করেছিলুম। তখন শুধু বলল, কাকেও যেন না বলি, একটা দামী পাথরের খোঁজ পেয়েছে একটা সিমেট্রিতে। সে…
এক মিনিট। সুব্রতর সঙ্গে তোমার পরিচয় আছে?
কথাকলি একটু হাসল। সুব্রত টিনি আমার কমন ফ্রেন্ড।
সে কোথায় জানো?
কথাকলি একটু চুপ করে থেকে একটু দ্বিধার সঙ্গে বলল, ও নির্দোষ। ও টিনিকে বাঁচাতে চেয়েছিল। টিনিকে খুনের চক্রান্ত সে মুনলাইট বারে শুনেছিল।
কেন টিনিকে খুন করা হবে সে জানতে পেরেছিল?
টিনি কোনও খ্রীস্টিয়ান সিমেট্রির দামী পাথর নাকি অন্য কাউকে বেচতে চেয়েছে। এটা ড্যানি ঘোষ বরদাস্ত করবে না। সুব্রত আমাকে পরে সব বলেছে।
ড্যানি ঘোষকে তা হলে তুমি চেনো?
কথাকলি একটু হাসল। সুব্রতর সঙ্গে মুনলাইট বারে দিন তিনেক বিয়ার? খেতে গিয়েছিলুম। সে ড্যানিকে চিনত। বলেছিল ওই লোকটা সাংঘাতিক খুনী। টিনি ওর পাল্লায় পড়েছে।
ওয়েল, রাঁচিতে আমাকে ফাঁদে ফেলা হবে, কেমন করে জানলে তুমি?
কর্নেল! সাংবাদিক জয়ন্ত চৌধুরী আমার দূরসম্পর্কের দাদা। আমিও দৈনিক সত্যসেবক পত্রিকার স্টাফ। তবে অফসেট প্রিন্টিংয়ে কাজ করি। কম্পিউটার ট্রেনিং নিয়েছি। সেই সূত্রে আপনাকে বিশেষভাবে জানি। সুব্রতও জানে। সুব্রত ড্যানিকে পাল্টা ফাঁদে ফেলার জন্য, মানে টিনি খুন হওয়ার পরে ওর সঙ্গে গোপনে দেখা করেছিল রয় কোম্পানিতে। সুব্রত ড্যানিকে বলেছিল, টিনি যে পাথরটা বেচতে চেয়েও বেচেনি, সেটা কোথায় আছে সে জানে।
ভেরি ইন্টারেস্টিং। তারপর?
সুব্রত বলেছিল, সিমেট্রির কেয়ারটেকার গোমেশের কাছে পাথরটা আছে। গির্জাঘরে লুকিয়ে রেখেছে। এটা সুব্রতর বোকামি। খামোকা বেচারা গোমেশ খুন হয়ে গেল। সুব্রতর রাগে মাথা খারাপ হয়ে গেছে। কিন্তু পুলিশ তাকেও খুঁজছে। ও একটা বোকার বোকা। মিথ্যা বলে একটা লোকের প্রাণ চলে গেল!
হয়তো মিথ্যা বলেনি! কর্নেল মিটিমিটি হেসে বললেন, সুব্রত কোথায়?
কলকাতায় আছে। কথাকলির মুখে দুষ্টু হাসি ফুটে উঠল।
তো শুনুন, ড্যানির সঙ্গে সুব্রত খুব জমিয়ে নিয়েছিল। ড্যানি ওকে পোপোজ করে ডাল্টনগঞ্জে গিয়ে আপনাকে ফোন করতে। সুব্রত ড্যানির প্ল্যান শুনে ঘাবড়ে যায়। সে আর ড্যানির ছায়া মাড়ায়নি।
হুঁ। ড্যানি ডালটনগঞ্জের কোনও বাঙালি ছেলেকে সুব্রত সাজিয়ে আমাকে ট্রাংককল করেছিল। এনিওয়ে, সুব্রতকে নিয়ে এস। একটা জট এখনও খুলছে না। সেটা সে খুলতে পারে। তাকে আমার জরুরি দরকার।
কথাকলি আগ্রহ দেখিয়ে বলল, কী জট বলুন না কর্নেল?