হালদারমশাই বললেন, কাল্লুরে ধরেছে! ডি সি সায়েবরে, জিগ্যান!
অরিজিৎ মুচকি হেসে বললেন, কাল্লু হালদারমশাইকে গঙ্গায় খুব নাকানি চোবানি খাইয়েছে। ভাগ্যিস, তখন কলোনির ঘাটে লোকেরা স্নান করছিল। তুলে হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়।
কর্নেল আবার অট্টহাসি হাসলেন।
অরিজিৎ বললেন, আমার আশঙ্কা হচ্ছে, রাঁচি থেকে ফিরে আপনি পাগল হয়ে গেছে। লোকে যায় পাগলামি সারাতে। আপনি সম্ভবত কাকে মেন্টাল অ্যাসাইলামের সব পাগলের পাগলামি সংগ্রহ করে ফিরেছেন?
আজ এ মুহূর্তে আমার মনমেজাজ খুশি ডার্লিং! এত খুশি যে আমার কাছে ঘৃণ্য পাখি কাক এবং শকুনদের ক্ষমা করে দিয়েছি। যাই হোক, বলুন হালদারমশাই! আপনার এপিসোড শোনা যাক।
হালদারমশাই ফাঁচ করে হেসে নস্যি নিলেন। তারপর বললেন, ড্যাং সায়েবড়ারে পাওয়া যায় নাই। আপনে আগে কইয়া দ্যান স্যার! আমার পরে কমুঅনে!
অরিজিৎ হাসি চেপে বললেন, না, না। আপনারটা আগে বলুন। আপটু দ ইস্টার্ন সাব-আর্বন খ্রীস্টান সিমেট্রি এপিসোড। গো অন!
হালদারমশাই শুরু করলেন। তার মধ্যে কফি ও স্ন্যাক্স এসে গেল। লম্বা চওড়া কাহিনীটি শেষ করে হালদারমশাই বললেন, মজাটা দেখুন কর্নেলস্যার.! ড্যাংসায়েব আমাকে হায়ার করতে আসত। কেন, সেটাই বোঝা যাচ্ছে না।
কর্নেল বললেন, যাচ্ছে। পারস্যের পহলভিসম্রাট আর্দশিরের ফলক উদ্ধার করতেই।
অরিজিৎ অবাক হয়ে বললেন, তার মানে?
ডার্লিং! চার্লস গ্রিয়ার্সন নিজের কবরে যে ফলক লাগিয়েছিলেন, সেটাই সেই পহলভি ফলক। উল্টোপিঠে কী লেখা ছিল, এই দেখ। বলে কর্নেল গ্রিয়ার্সনের বইটা এগিয়ে দিলেন অরিজিৎ লাহিড়ীকে।
অরিজিৎ আগ্রহে বইটার পাতায় চোখ রাখলেন। হালদারমশাই তাঁকে পাশে উঁকি মেরে পড়ার চেষ্টা করছিলেন। কর্নেল বললেন, হালদারমশাই! অনেক ধকল গেছে। এবার বাড়ি ফিরে বিশ্রাম নেওয়া দরকার। টানা ঘুম!
হাই তুলে হালদারমশাই বললেন, হঃ! যাই গিয়া। তবে ঘুম হইব না।
চেষ্টা করবেন। ভেড়ার পাল গোনার চেষ্টা করবেন। মনে আছে তো সেবারকার রূপগঞ্জের কাহিনী? পালের গাড়লটাকে ধরার চেষ্টা করবেন। ঘুম এসে যাবে।
ফাঁচ শব্দে হেসে হালদারমশাই ডি সি ডি ডি-কে প্রথাসিদ্ধ স্যালুট ঠুকে বেরিয়ে গেলেন।
অরিজিৎ পড়া শেষ করে বললেন, বুঝলুম। কিন্তু ফলকটা নিয়েই কি এই খুনোখুনী?
তাই মনে হচ্ছে, ডার্লিং! কর্নেল সায় দিয়ে বললেন। তবে টিনিও এই চক্রে জড়িত ছিল। মাই গুডনেস!
কী হলো হঠাৎ?
কথাকলি চক্রবর্তী সুব্রত চৌধুরির নতুন প্রেমিকা নয় তো?
কথাকলি চক্রবর্তী? হু ইজ শি?
তোমাকে ফোন করেছিল। আমাকেও করেছিল। তখন আমি রাঁচিতে।
অরিজিৎ একটু চুপ করে থেকে সিগারেট ধরিয়ে বললেন, সুব্রত সম্ভবত কলকাতাতেই আছে তাহলে। হুঁ, আপনার কাহিনী শুনি।
কর্নেল তার বেতলা-অরণ্য-অভিযান বর্ণনা করতে থাকলেন।…..
.
ডিনার খেয়ে চুরুট ধরিয়ে শূন্যোদ্যানে উঠে কিছুক্ষণ অভ্যাসমতো পায়চারির পর কর্নেল শুতে এলেন। সবে শুয়েছে, বেডরুমের পাশের ফোনটা বাজল। বিরক্তিকর! হালদারমশাই আবার কোনও বিপদ বাধালেন নাকি? তারই উত্তেজিত কণ্ঠস্বর!
কর্নেল বললেন, আপনাকে ঘুমোতে বলেছিলুম, হালদারমশাই!
কী যে কন কর্নেলস্যার? রহইস্য ভ্যাদ না হওয়া পর্যন্ত ঘুম আসব? শোনেন!
আপনি কোত্থেকে ফোন করছেন?
বউবাজার ফাড়ি থেকে। একটুর জন্য ড্যাংসায়েব ফস্কে গেল কলেস্যার! হালদারমশাইয়ের শ্বাস-প্রশ্বাসজড়িত কণ্ঠস্বর ভেসে এল। আপনার বাড়ি থেকে বেরিয়ে ভাবলুম, বড় ধকল গেছে। একটু ড্রিংক করা উচিত। না কর্নেলস্যার, আমি ড্রিংক করি না। জাস্ট এক পেগ ব্রান্ডি খাই রোজ শোওয়ার আগে। ডাক্তারের পরামর্শ। তো মুনলাইট বারে গিয়ে ঢুকলুম। ঢুকেই দেখি, ড্যাংসায়েব
আর একটা আজেবাজে চেহারার লোক বসে আছে।
আজেবাজে চেহারার লোক মানে?
থার্ড ক্লাস, কর্নেলস্যার। বারে মানায় না। শুড়িখানায় মানায়। বেশ। তারপর?
তক্ষুণি বেরিয়ে গেলুম। সোজা বউবাজার ফাড়িতে। পুলিশ সঙ্গে সঙ্গে চলে এল। এসে দেখি পাখি উড়েছে।
আপনার থার্ড ক্লাস লোকটা?
সে-ও নেই। দুজনেই কেটে পড়েছে। আমাকে দেখতে পেয়েছিল, কর্নেলস্যার! বুঝলেন তো?
বুঝলুম। রাখছি। আপনি…….ধন্যবাদ হালদারমশাই! আপনি এবার বাড়ি যান। ব্র্যান্ডির চেয়ে হালকা ডোজের ঘুমের পিল খেয়ে নেবেন বরং। ট্রাংকুলাইজার পাওয়া যায় যে-কোনও দোকানে। পাঁচ মিলিগ্রামের পিলই যথেষ্ট। পুনশ্চ ধন্যবাদ! অসংখ্য ধন্যবাদ! ফোন রেখে দিলেন কর্নেল।
ড্যানি ঘোষের সঙ্গে থার্ড ক্লাস লোকটা কে হতে পারে? ওর বডিগার্ড? কর্নেল টেবিলবাতির সুইচ অফ করে দিলেন।…
সকালে গার্ডেনিংয়ের জোব্বা পরে কর্নেল তার শূন্যোদ্যানে কিম্ভুত কিমাকার অথচ পুষ্পবতী গাছগুলির সেবা করছিলেন। মাঝে মাঝে উঠে দূরের দেবদারুশীর্ষে বাইনোকুলারে শকুনের বাসা দেখছিলেন। কখনও শরতের নীল আকাশে কোনও পাখি। আজ অবিশ্বাস্যভাবে কোথায় ঘুঘু পাখি ডাকছে। সত্যিকার ঘুঘু তো?
বাবামশাই, ফোং! বাবামশাই, সেই ফোং!
ঘুরে দেখলেন ষষ্ঠী ছটফট করছে। কর্নেল বললেন, কার ফোন বলবি তো হতভাগা? সেই ফোং আবার কী?
ষষ্ঠী গম্ভীর হয়ে গেল। কথাকলি চকরবর্তী। দেখুন গে না! আমার কী আপনারই ক্যাস।
কর্নেল হাসলেন। কেস রে কেস! এত শিখিয়েও কথাটা রপ্ত হলো না! বল্, কে-স।