নালবাজারের নাহিড়ীসায়েব?
আজ্ঞে। তিনি তো বটেই। কাল আবার ডেভিডসায়েব এসে হাজির। ভুতে জ্বালাচ্ছে। আর…… ষষ্ঠী মাথা চুলকে স্মরণ করে বলল, হালদারমশাই! তার দেখি গোঁফ নেই। খেকুঠে মড়ার মতো চেহারা। জল থেকে মড়া উঠে এসেছে যেন। তা, পরে…….হ্যাঁ, ফোং! কী যেন নাম যেন…….পেটে আসছে, মুখে আসছে না……
সুব্রত চৌধুরি?
ষষ্ঠী জোরে মাথা নেড়ে বলল, না, না। মেয়েছেলে! নরম গলা।
সুরঞ্জনা দেবী, যাঁর মেয়ে খুন হয়েছে?
ধূস!! কা…কা……না, না! ক…………কথা……কথা…..তাপরে কী যেন, ক……কলি? নামটা কেমন যেন গোলমেলে। বিচ্ছিরি!
কথাকলি?
ষষ্ঠী দাঁত বের করল। আজ্ঞে, তা-ই। কথাকলি চ……চ…চক্কবত্তিই হবে।
কী বলেছিলি?
আপনার খোঁজ করছিল। আমি বললুম, নেই।
উঁহু, রাঁচি গেছি বলেছিলি!।
ষষ্ঠী ফের দাঁত বের করল। তা হতে পারে। কী করব? খালি ফোং আর ফোং। তাই বলেও থাকতে পারি।
কথাকলি চক্কবত্তি কী বলল?
বললে সব্বোনাশ! মারা পড়বেন যে! শুনে আমি বললুম, বাবামশাইকে মারে এ সাধ্যি ভগবানেরও নেই।
তাই বললি?
বললুম। বলব বৈকি।
হ্যাঁরে বুদ্ধ, মানুষ বুঝি মরে না?
মরে। তবে আপনাকে মারে কে? বলে ষষ্ঠী পা বাড়াল।
কর্নেল ডাকলেন, শোন হতভাগা!
রান্না করিগে। মুখ দেখে মনে হচ্ছে, পেটে কিছু পড়েনি।
সবে সন্ধ্যা সাতটা বাজে। ডিনার খাব দশটায়। তুই শোন্!
বলুন। বলে ষষ্ঠী সেখানেই দাঁড়িয়ে রইল।
কথাকলি চক্কবত্তি আর কী বলল?
ভেংচি কাটছেন। বলব না। আমি কি শুদ্ধ কথা বলতে পারিনে? চকরোবর্তী! হলো তো?
হলো। বল্!
বললে, এক্ষুণি পুলিশে খবর দাও। কর্নেলসায়েবের বিপদ হতে পারে। আমি যত বলি, আমার বাবামশাই নোহার মানুষ তত বলে, বিপদ হবে। পুলিশে খবর দাও। তো কী করি, নালবাজারে…….
ফোন বাজল। কর্নেল ফোন তুলে সাড়া দিলেন। ……অরিজিৎ! হ্যাল্লো ডার্লিং! কী খবর?
অরিজিৎ বললেন, বেঁচেবর্তে ফিরেছেন? আজ দুপুরেই রাঁচিতে রেডিও মেসেজ পাঠিয়েছি। বাপস্! কী যে করে বেড়ান!
ষষ্ঠীর মুখে শুনেই…..
নাঃ! সাম গার্ল! নাম বলেনি। ইয়াং বলেই মনে হচ্ছিল গলা শুনে। বলল, কর্নেলসায়েব রাঁচিতে ফাঁদে পা দিতে গেছেন, তাকে বাঁচান। লাইন কেটে গেল। এক্সচেঞ্জে এনকোয়ারি করে জেনেছি জি পি ওর পাবলিক বুথ থেকে ফোন করেছিল। এনিওয়ে, ব্যাপারটা কী?
এসে শুনো। চলে এস।
বাই দা বাই, আপনার হালদারমশাইকে নিয়ে পারা গেল না। এইমাত্র খবর পেলুম, ওঁকে আমাদের লোক কিঞ্চিৎ ভোলাই করেছে। ওদের দোষ নেই। কবরখানায় সন্ধ্যাবেলা গেছেন আড়ি পাততে। যাই হোক, ওঁকে লালবাজারে আনতে বলেছি। ওঁকে সঙ্গে নিয়েই যাব। ওয়েট!…….
কর্নেল ফোন রেখে ফোঁস করে শ্বাস ছাড়লেন। কথাকলি চক্রবর্তী কে? একটা নতুন সুতোর খেই এই রহস্যজটে। কে সে? কর্নেলের হিতাকাঙিক্ষণী মনে হচ্ছে। সে কী করে জানল কর্নেল রাঁচি যাচ্ছেন বা গেছে এবং সেখানে ফাঁদ পাতা হয়েছে তাকে হত্যা করতেই? সে অরিজিৎ লাহিড়ীকেও ফোন করেছে। কিন্তু নাম বলেনি নিজের।
কর্নেল চার্লস গ্রিয়ার্সনের বইটি নিয়ে এলেন র্যাক থেকে। তারপর ফলকের বিবরণ পড়ে ড্রয়ার থেকে সেই ইংরেজি উপদেশাবলী বের করলেন, যেটি গির্জার বাইবেলের ভেতর গোঁজা ছিল। আতস কাচ দিয়ে খুঁটিয়ে পড়তে থাকলেন।
আধঘণ্টা ধরে খুঁটিয়ে দেখা এবং পড়ার পর টেবিল ল্যাম্পের বালবের আরও কাছে নিয়ে গেলেন। ক্রমে এই কথাগুলি উপদেশবাক্যের মাথায় স্পষ্ট ফুটে উঠল।
FOR COLONEL N. SARKAR.
কর্নেলের ঠোঁটের কোণায় সুক্ষ্ম হাসির রেখা ফুটে উঠল। ভ্যানিশিং ইংকে লেখা ছিল তার নাম। উত্তাপ দিলেই ভ্যানিশিং ইংকে লেখা ফুটে ওঠে।
কার লেখা এটা?
গোমেশ জেভিয়ারের কি?
কর্নেল নীলাদ্রি সরকারের উদ্দেশে এই উপদেশ লেখার কারণ কী? আবার উপদেশগুলি পড়তে শুরু করলেন। তার মধ্যে হাঁকলেন, ষষ্ঠী! কফি।
তারপর ড্রয়ার থেকে চুরুটের বাকসো বের করে চুরুটটি কাগজটির ওপর লম্বালম্বি রাখলেন। চুরুট কফি খেয়েই ধরাবেন। ফ্যানের হাওয়ায় কাগজটা উড়ে যাচ্ছে। চুরুটটা কাগজের কাপনে একটুখানি গড়িয়ে ঠাইনড়া হলো।
একটা পেপার-ওয়েট বের করে চাপাতে গিয়েই কর্নেল চমকে উঠলেন, মাই গুডনেস!
ষষ্ঠী কফি আনছিল। বলল, রাচির গারদ থেকে ছেড়ে দিয়ে ডাক্তারবাবুরা কাজটা ভাল করেননি। আবার সেই…..
কর্নেল উঠে গিয়ে ষষ্ঠীকে জড়িয়ে ধরে বললেন, ওরে হতভাগা! আমার বড় আনন্দ হচ্ছে। দে দে কফি খাই। ওঃ! ষষ্ঠী! আমার নাচতে ইচ্ছে করছে রে!
সব্বোনাশ! সব্বোনাশ। ষষ্ঠী বেজায় ভড়কে গেল। ছাড়ুন, ছাড়ুন! গরম
কর্নেল এসে ধপাস করে বসলেন। কফিতে চুমুক দিয়ে চুরুট ধরালেন। তা হলে গোমেশ-ই চিঠিটা লিখে রেখে গেছেন! হতভাগ্য কেয়ারটেকার! লোভে পাপ, পাপে মৃত্যু। তবু একটা পুণ্যকর্ম করে গেছেন এই উপদেশটি লিখে।……
.
আধঘণ্টা পরে অরিজিৎ লাহিড়ী এলেন। সঙ্গে কাচুমাচু মুখে গোয়েন্দা হালদারমশাই।
তিনি ধপাস করে বসে বললেন, সেমসাইড!
অরিজিৎ মুচকি হেসে বললেন, আইডেন্টিটি কার্ড সঙ্গে সঙ্গে দেখালে সেমসাইড হতো না! এনিওয়ে, কর্নেল! আপনার এই চর ভদ্রলোককে একটা সামলান। যদি কোনও অ্যাসাইনমেন্ট দেন, তা হলে অন্তত আমাকে একটু জানিয়ে রাখবেন।
কর্নেল অট্টহাসি হেসে বললেন, হালদারমশাই মাঝে মাঝে বিপদে পড়লেও কিছু মূল্যবান সূত্র যোগান দেন। আশা করি, কাল্লু……