ঘোষের বাড়ির কাছে……
স্যার! কর্নেলসায়েব ইদানীং দাড়ি কামাননি তো?
অসম্ভব।
স্যার, একটা লম্বা বডি গঙ্গা থেকে উদ্ধার করেছে লোকেরা। তবে ফর্সা নয়।
ডেডবডি?
প্রায় সেই অবস্থা। হাসপাতালে আছেন। জাঙ্গিয়া-পরা বডি। মাঝে মাঝে জ্ঞান ফিরে বলছেন, রিভলবার। বড় মিসটিরিয়াস!
লম্বা নাক, শ্যামবর্ণ, ঢ্যাঙা?
হ্যাঁ, স্যার! সেই রকমই।
গোঁফ নেই?
না তো।
রিভলবার বলছেন?
হ্যাঁ। যখনই জ্ঞান ফিরছে, তখনই রিভলবার বলে ফের অজ্ঞান। এখানকার কেউ আইডেন্টিফাই করতে পারছে না।
ভবেশবাবু, নাকের পাশে জডুল আছে কি?
আছে! আছে!
অরিজিৎ হাসতে লাগলেন।
কী হলো স্যার?
ভবেশবাবু, তা হলে উনি প্রাইভেট ডিটেকটিভ কে কে হালদার। রিটায়ার্ড পুলিশ ইন্সপেক্টর। গণেশ অ্যাভেনিউতে হালদার ডিটেকটিভ এজেন্সি আছে। ওঁর। কিন্তু আমি ভেবে পাচ্ছি না, উনি গঙ্গায় জাঙ্গিয়া পরে ঝাঁপ দিলেন কেন? এনিওয়ে, ওঁর সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করুন। তারপর জবানবন্দি নিয়ে অ্যাকশন নিন। সামথিং মিসটিরিয়াস হ্যাঁজ হ্যাঁপনড়। থরোলি ইনভেস্টিগেট। আমি কুঁচড়োয় পুলিশ সুপারকে অনুরোধ করছি।
ওক্কে স্যার!……
ফোন রেখে অরিজিৎ আবার হাসতে গিয়ে গম্ভীর হলেন। প্রাইভেট ডিটেকটিভ মাত্রেই ছিটগ্রস্ত, অথবা ছিটগ্রস্তরাই প্রাইভেট ডিটেকটিভ হন। দুই মেরুর দুই নিদর্শন, কর্নেল এবং হালদারমশাই। একজন হয়তো রাঁচি চলে গেলেন হঠাৎ, অন্যজন দিলেন জাঙ্গিয়া পরে গঙ্গায় ঝাঁপ! কী অদ্ভুত!…..
.
চন্দননগর হাসপাতালে হালদারমশাই চোখ খুলে পিটপিট করে তাকালেন। সাদা সিলিং ফ্যান ঘুরছে। আলো জ্বলছে। তিনি কোথায়? কিছু মনে পড়ছে না।
হঠাৎ টের পেলেন নাকে কী ঢুকে আছে। বেজায় চটে গেলেন। তাঁর নাকে কী ঢুকিয়েছে কেউ। সুড়সুড় করছে। আধ মিনিট পরে কালুর কথা মনে পড়ল। সেই ব্যাটাছেলের কাজ না হয়ে যায় না। খাপ্পা হয়ে নাক থেকে জিনিসটা হ্যাঁচকা টানে খুলে ফেললেন। উঠে বসলেন। নার্স হ, করে দৌড়ে এলেন।
হালদারমশাই রাগী চোখে চারদিকটা দেখে নিয়ে বললেন, আমি এখানে ক্যান? আমার তো অন্যত্র থাকনের কথা। ব্যোম কালী! ব্যোম শিব!
নার্স ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে সিস্টারকে ডাকতে গেলেন।
হালদারমশাই দেখলেন, তার পরনে পাজামা, গায়ে পাঞ্জাবি। ছা ছা! সে উঠলেন, কোন হালায় এগুলান পরাইল?
তারপর বালিশের পাশেই নিজের সেই ঝুলিটি আবিষ্কার করলেন। ঝটপট হাত ঢুকিয়ে দেখলেন, রিভলবারটি রয়েছে। বের করে বললেন, গুলি করুম। সব হালারে গুলি করুম!
রোগীরা উঠে বসেছিল বেডে। পাশের বেডে স্যালাইন দেওয়া রোগীটিও ভয়ে চোখের কোনা দিয়ে তাকাল। সিস্টার, নার্সের বাহিনী, জমাদার-জমাদারনি ছুটে আসছিলেন। থমকে দাঁড়ালেন জলে-ডোবা রোগীর হাতে রিভলবার দেখে। এক তরুণ ডাক্তার তক্ষুণি ব্যস্তভাবে পুলিশে ফোন করতে ব্যস্ত হলেন। মুখে তার প্রচণ্ড আতঙ্ক।
হঠাৎ হালদারমশাই ফাঁচ করে হাসলেন। পাওয়া গেছে! পাওয়া গেছে! বলে ঝুলিতে হাত ভরে নস্যির ডিবেটি খুঁজে বের করলেন। রিভলবার ঝুলিতে ঢুকিয়ে দুটিপ নস্যি নিয়ে বিকট হাঁচার সঙ্গে সঙ্গে তার মগজ পরিষ্কার হয়ে। গেল।
সিস্টার এবং হাসপাতালবাহিনী সাহস করে কাছে এলেন। সিস্টার বললেন, প্লিজ! আপনি শুয়ে থাকুন। আপনার এখনও অক্সিজেন দরকার!
হালদারমশাই পুনঃ ফাঁচ করলেন। ব্রেন ইজ ক্লিয়ার নাও! আই অ্যাম কে কে হালদার, দা ফেমাস প্রাইভেট ডিটেকটিভ! আই মাস্ট গো নাও টু দা পোলিস! বলে উঠে দাঁড়লেন।
জমাদাররা ধরে শুইয়ে দিতে এলেন শাসিয়ে বললেন ফেল, ডোন্ট টাচ! রিভলবার বের করুম।
তারা ভয়ে সরে গেল। সিস্টার নার্সকে বললেন, এই ব্যাগটা এল কোত্থেকে? কখন কে আনল জানো ঊষা?
নার্স করুণস্বরে বললেন, একটা লোক কিছুক্ষণ আগে এসে রেখে গেল। বলল, আমি ওঁর আত্মীয়।
তুমি দেখলে না ওতে কী আছে?
নার্স আরও করুণস্বরে বললেন, ভাবলুম খাবার-টাবার আছে। হাসপাতালে বাইরের খাবার তো রোগীদের জন্য অ্যালাউড।
হালদারমশাই বললেন, বাথরুম কোথায়? এই বেঢপ পাঞ্জাবি-পাজামার নিকুচি করেছে। আমার ড্রেস পরব। ছ্যা ছ ছা।
বলে নিজেই বাথরুম আবিষ্কার করে সটান গিয়ে ঢুকলেন। একটু পরে প্যান্ট-শার্ট পরে বেরিয়ে এসে পাঞ্জাবি-পাজামা ছুঁড়ে ফেললেন। বললেন, যাই গিয়া! ডাক্তারবাবুরা, সিস্টার বোন, নার্স বোনটি, সক্কলেরে আমার বিদায় নমস্কার। আমি কৃতজ্ঞ। তবে কেউ বাধা দেবার চেষ্টা করলে….. বলে। রিভলবার বের করলেন। আবার আতঙ্কের হিড়িক পড়ে গেল। পুলিশ আসতে বড্ড দেরি করছে। ডাক্তার এখনও ফোনের কাছে।
রিভলবার তাক করে পিছু হটে বেরিয়ে গেলেন হালদারমশাই। সবে সন্ধ্যা নেমেছে। বাইরে গিয়ে একটা রিকশা ডেকে বললেন, স্টেশন!…
.
বললেন, কফি ভাইটি। ভাগ্যিস বাবা অসুর দুধ। আগে চাঙ্গা হইলে
রাত সাড়ে নটায় দরজা খুলে ষষ্ঠীচরণ হালদারমশাইকে দেখে হাসি চাপল। ওঁকে দেখলেই তার হাসি পায়। সে বলল, বাবামশাই তো গতকাল থেকে বাইরে।
হালদারমশাই সোজা ড্রইংরুমে ঢুকে সোফায় বসে বললেন, কফি ভাইটি! কড়া কফি আর প্রচুর দুধ। আগে চাঙ্গা হই, তারপর মা গঙ্গার কথা। বাপ! ভাগ্যিস বাবা ভোলার নাম জপছিলুম, তাই মা গঙ্গা ভয় পেয়ে…….ফাঁচ! অর্থাৎ হাসি।
ষষ্ঠী যেতে যেতে ঘুরে বলল, হালদারমশাই, আপনার গোঁফ? কাটছিলাম! হালদারমশাই গোঁফের জায়গায় হাত বুলিয়ে বললেন, একবার, একবার নয়, দুবার সাধু সেজে অভিজ্ঞতা হয়েছে। গোঁফে গোঁফ আটকে যায়। যাক সে কথা। আগে কফি, পরে কথা।