এমা দাঁতমুখ খিঁচিয়ে বলল, শাট আপ! ইউ আর আ ফুল! গিভ আপ দা প্রফেশন! গো অ্যান্ড ওয়াশ দা ফিট অব ইওর ওয়াইফ।
রাগ হজম করলেন গোয়েন্দা। বউয়ের পা ধুইয়ে দিতে বলছে ঊ্যাস ফিরিঙ্গি মেয়ে। ফিরে গিয়ে দেখাচ্ছি মজা! কে কার পা ধুইয়ে দেয়।
তবে মুক্তি পাওয়া গেল। মেমসায়েব টেনে তুলে বের করে দিল ঘর থেকে। বেরিয়ে গোয়েন্দা করজোড়ে বললেন, ঘোষসায়েব, দয়া করে আমার ঝুলিটা……
মেমসায়েব হাসি চেপে জাঙ্গিয়া-পরা গোয়েন্দাকে কটাক্ষ করে পাশের ঘরে ঢুকল। ড্যানি ঘোষ বলল, ভাগ! ভাগ!
আমার রিভলবারটা…….
কাল্লু! এই বেড়ালটাকে জলে চুবিয়ে দে!
কাল্লু ছুরি হাতে এগিয়ে এসে হালদারমশাইয়ের ঘেঁটি ধরল। গায়ে একফেঁটা জোর নেই। নয় তো এই হাফপ্যান্ট গেঞ্জি পরা নেংটি ইঁদুরকে কুপোকাত করে ছাড়তেন। কী আর করা যাবে।
কিন্তু সত্যি কি জলে চুবোতে নিয়ে যাচ্ছে কাল্লু? থামলেই পিঠে ছুরির খোঁচা। কেটে-ছড়ে গেল হয়তো। চিনচিন করছে।
সর্বনাশ! জাঙ্গিয়া-পরা হালদার মশাইকে ঠেলে গঙ্গায় ফেলে দিল কালু। দু হাত তুলে তিনি চিক্কুর ছাড়লেন, বাঁচাও! বাঁচাও!
অক্টোবরের ভরা গঙ্গা। নদীনালার দেশের মানুষ কে কে হালদার। সাঁতার জানেন। পুলিশে চাকরি করলেও সবই শিখতে হয়। কিন্তু গায়ে যে জোর নেই। মরিয়া হয়ে আবার চেঁচালেন, বাঁচাও! বাঁচাও!……
লালবাজার পুলিশ হেড কোয়াটার্সে ক্রাইম ব্রাঞ্চের ডি সি ডি ডি অরিজিৎ লাহিড়ী কার্ডটা দেখে বললেন, ডাকো! সাদা পোশাকের পুলিশ সেলাম ঠুকে বেরিয়ে গেল।
একটু পরে আগন্তুক ঢুকে সেলাম ঠুকলেন সামরিক কায়দায়। বোঝা গেল, মিলিটারি-কায়দা-রপ্ত।
অরিজিৎ লাহিড়ী বললেন, হ্যাল্লো মিঃ প্যাটার্সন! বসুন। আশা করি, কোনও দুঃসংবাদ নিয়ে আসেননি কবরখানা থেকে?
ডেভিড প্যাটার্সন বসে বললেন, কর্নেল নেই। তাই আপনার দ্বারস্থ হলুম স্যার!
বলুন।
কবরখানায় দিনদুপুরে রহস্যময় কাণ্ড ঘটছে। আমার এবার মনে হচ্ছে, পুলিশ পাহারার ব্যবস্থা না থাকলেন আবার কী ঘটে যাবে। হয়তো আমিই……ঔ জেসাস! বলে বুকে ক্রস আঁকলেন ডেভিড।
কী ঘটছে?
ডেভিড্ গতকাল গির্জার ভেতর যা-যা ঘটেছিল, কর্নেলকে নিয়ে গিয়ে যা যা দেখিয়েছেন, সব ঘটনা ইনিয়েবিনিয়ে বর্ণনার পর আজকের ঘটনা শোনালেন। আজও একই ঘটনা। আজ বাড়তি সংযোজন হলো ঢিল। পাথরকুচি ছুড়ছিল ভূতেরা। ঘর থেকে বেরুতেই পারেননি ডেভিড। যখনই বেরুতে পা বাড়িয়েছেন, তখনই ঝাঁকে ঝাঁকে ঢিল। গিয়ে স্বচক্ষে দেখতে পারেন পুলিশের গোয়েন্দারা। এবার গির্জার সদর দরজার তালাও ভেঙেছে। ভেতরকার আসবাবপত্র ওলট পালট করেছে। জঙ্গুলে কবরখানা, তার ওপর সেকেল কবর সব। একেকটি খুদে স্থাপত্য। আড়ালে লোকজন চলাফেরা করলে বা ঘাপটি পাতলে দেখতে পাওয়া যায় না।
অরিজিৎ বললেন, ঠিক আছে। আবার পুলিশ মোতোয়েন করছি। আপনার সঙ্গেই পাঠাচ্ছি। আপনি বাইরে অপেক্ষা করুন।
ডেভিড বেরিয়ে গেলে অরিজিৎ কর্নেলের বাড়ি রিং করলেন। বৃদ্ধ প্রকৃতিবিদের কাল রাত্রি থেকে পাত্তা নেই। কিছু বলেও যাননি। বাইরে গেছেন নাকি।
ষষ্ঠীচরণ ফোন ধরেই বলে দিল, বাবামশাই নেই! একশোবার লোকে জ্বালাতন করছে কাল রাত্তির থেকে। বলছি, নেই, নেই, নেই, নেই!
অরিজিৎ মুচকি হেসে বললেন, আমি নালবাজারের নাহিড়ীবাবু, ষষ্ঠী।
অমনি ষষ্ঠির স্বর বদলে গেল। আজ্ঞে স্যার, আপনি? নমস্কার স্যার! তা আগে বললে…স্যার, দোষ নেবেন না। কে একজন খালি জ্বালান করছে……তাই স্যার…….
তোমার বাবামশাই কিছু বলে যাননি?
আজ্ঞে, না। আপনাকে বলে গেছেন ভাবছি। বলেননি?
না তো!
স্যার, স্যার! হঠাৎ ষষ্ঠী উত্তেজিত হয়ে উঠল।
কী হলো, ষষ্ঠী?
বাবামশাই সত্যি রাঁচি যাননি তো?
রাঁচি? রাঁচি কেন?
বাবামশাই ঠাট্টা করে বলেছিলেন, ষষ্ঠী, তুই বলিস আমি নাকি পাগল হয়ে যাচ্ছি। বিড়বিড় করে বকি। ঠিক বলেছিস! বলে বাবামশাই বললেন, এবার আমি রাঁচিই চলে যাব। সেখানে পাগলাগারদ আছে জানিস তো? আজ্ঞে স্যার, ভেবে দেখুন কথাটা।
ষষ্ঠী, তুমি বুদ্ধিমান। কবে এ কথা বলছিলেন কর্নেল?
আজ্ঞে, পরশু স্যার! গতকালকেও সন্ধ্যায় বেরুনোর সময় জিজ্ঞেস করলুম, কখন ফিরবেন। অমনি রাগ করে বললেন, পাগলাগারদে যাচ্ছি।
ঠিক আছে। হাসতে হাসতে ফোন রাখলেন অরিজিৎ লাহিড়ী। তারপর গম্ভীর হলেন। কর্নেল হঠাৎ নিপাত্তা হলেন কোথায়? ফের চন্দননগরের ওদিকে গিয়ে ড্যানি ঘোষের পাল্লায় পড়েননি তো? একটু উদ্বিগ্ন হলেন অরিজিৎ। ড্যানি ঘোষের রেকর্ড খারাপ। পুলিশ ওকে বহুদিন থেকে ফাঁদে ফেলার চেষ্টা করছে। ধূর্ত লোক।
ডেভিডসায়েবের সঙ্গে সাদা পোশাকের একদল পুলিশ পাঠানোর ব্যবস্থা করে চন্দননগর থানায় ফোন করলেন অরিজিৎ। ও সি ভবেশ রুদ্র ফোন ধরলেন। ফোনেই সেলামবাজি করে বললেন, বলুন স্যার!
ভবেশবাবু, আপনি কি কর্নেল নীলাদ্রি সরকারের নাম শুনেছেন?
নামটা শুনেছি মনে হচ্ছে। তবে……
দ্যাখেননি?
না স্যার! কেন…
সাদা দাড়ি, মাথায় টাক, প্রকাণ্ড মানুষ। গলায় বাইনোকুলার, ক্যামেরা ঝোলে। পাখি দেখা, প্রজাপতি ধরা, অর্কিড পাড়া বাতিক আছে। খ্রীসমাসের সান্তা ক্লজ! মাতায় কখনও টুপিও থাকে। ফর্সা রং। সায়েব বলে মনে হয়। খাঁটি বাঙালি। ভবেশবাবু, চন্দননগরের ব্রিটিশ এরিয়ায় বিস্তর গাছপালা আছে। ড্যানি