বলল, আগে প্রসাদ করুন বাবা!
সাধুবাবা বোতল খুলে মড়ার খুলিতে একটু র স্কচ ঢেলে চোখ বুজে গিললেন। গলা জ্বলে গেল। এমন গণ্ডগোলে কখনও পড়েননি। কিন্তু ওইটুকুতেই মাথা টলছে। খালি পেটে স্কচ! গলা ঝেড়ে হুঙ্কার দলেন, ব্যোম কালী! কিন্তু হুঙ্কারটা জমল না।
কাল্লু গাঁজার পুরিয়া এগিয়ে দিয়ে বলল, ছুঁয়ে দেন বাবা! আমি মাল তৈরি করি। আপনি ছিলিম বের করুন।
কী বিপদ! ছিলিমের কথা মনে ছিল না সাধুবাবার। দরকার হবে মনে হয়নি আসলে। তাছাড়া গাঁজা খাওয়া…….সর্বনাশ! হুঙ্কার ছেড়ে বললেন, ছিলম গঙ্গামাইজি লে লিয়ি! তু খা। হম্ নেহি পিউঙ্গা! মাইজিকি মানা হ্যাঁয়।
কাল্লু গাঁজা ডলতে ডলতে বলল, তবে আপনি কারণবারি খান, বাবা। খান, খান। তবেই তো ধ্যানে মন বসবে।
পাছে কাল্লু সন্দেহ করে, আরেক চুমুক র স্কচ টানতে হলো। মাথার ভেতরটা কেমন করছে। তবে স্ফূর্তি হচ্ছে খুব। ঘনঘন হুঙ্কার ছাড়লেন সাধুবাবা, ব্যোম! ব্যোম কালী! ব্যোম! ব্যোম ভোলা!
স্কচের নেশা বেশ টান ধরায়। ঝোঁকের মাথায় আরও এক চুমুক এবং হুঙ্কার। তারপর চোখ নাচিয়ে বললেন, ঔর এক পাপী আয়া তোরা কোঠিমে। কৌন হ্যাঁয় বে?
ড্যাংসায়েবের মামা রায়সায়েব। মামাভাগ্নে মাল টানছে আর তক্ক হচ্ছে।
কি নিয়ে?
কাল্লু ছিলিম এগিয়ে ধরল দুহাতে। চিমটে নেই? বলে সে নিজেই একটুকরো অঙ্গার ধুনি থেকে তুলে ছিলিমে রাখল এবং বলল, প্রসাদ, বাবা! প্রসাদ।
নেশার ঝোঁকে সাধুবাবা ছিলিম নিয়ে এক টান দিলেন। তারপর কী হতে থাকল, বুঝতে পারছিলেন না। মনে হলো, শূন্যে ভেসে চলেছেন। কখনও মনে হলো, পাতালে তলিয়ে যাচ্ছেন। আবার মনে হলো, উড়ে বেড়াচ্ছেন আকাশে।……
.
চোখ খুলে কিছুক্ষণ বুঝতে পারলেন না হালদারমশাই, কোথায় আছেন। ঘুলঘুলি দিয়ে আলো আসছে। কিছুক্ষণ পরে দৃষ্টি স্বচ্ছ হলো। কিন্তু শরীরে ব্যথা। একটা ঘুপচি ঘরের মেঝেয় শুয়ে আছে। হাত এবং পা দুটো শক্ত করে বাঁধা। তারপর সব মনে পড়ল।
কিন্তু পরনে খালি জাঙ্গিয়া! ঝুলিতে পোশাক ছিল। অতিকষ্টে ডাকলেন, কাল্লু! বেটা কাল্লুয়া!
দরজা খুলে গেল। কাল্লুয়া ঢুকল। ঢুকেই দরজা বন্ধ করে দিল সে। আতঙ্কে হালদারমশাই দেখলেন, তার হাতে একটা চাকু। বললেন, কী বে শালা টিকিটিকি? জ্ঞানবুদ্ধি হলো? নাকি এক খোঁচা দেব?
হুঁ, ধূর্ত কালুর কাছে ধরা পড়ে গেছে। নেশা করিয়ে তাকে অচেতন অবস্থায় এখানে এনে ফেলে রেখেছে। হালদারমশাই কাতরস্বরে বলল, ইয়ে ক্যা হ্যাঁয় বেটা?
চুপ শালা! এখনও ন্যাকামি? বলে কাল্লু তার পাশে বসে গলায় ছুরির ডগা ঠেকাল। ড্যাংসায়েবের চোখরে কঁকি দেবে? আমি না হয় বোকা। ড্যাংসায়েব ঠিকই ধরেছে। দেব শ্বাসনালী ঘেঁদা করে?
হালদারমশাই আঁ আঁ করে উঠলেন আতঙ্কে।
এই সময় দরজা খুলে ড্যানি ঘোষ ঢুকল। দরজা বন্ধ করে বলল, জ্ঞান ফিরেছে শালার?
কাল্লু বলল, হ্যাঁ! সোল ঘণ্টা কেটে গেল। তিন বালতি জল ঢেলেছি গায়ে।
খুনখারাবি করিসনে। ওকে তুলে বসা। জেরা করে দেখি।
কাল্লু হাত-পায়ের বাঁধন খুলে গোয়েন্দাকে দেয়ালে ঠেস দিয়ে বসাল। গোয়েন্দা বললেন, বিশ্বাস করুন, আমি পুলিশের লোক নই।
নোস। তুই প্রাইভেট ডিটেকটিভ কে কে হালদার। ঝুলিতে তোর আইডেন্টিটি কার্ড আর রিভলবার পেয়েছি। ড্যানি ঘোষ বলল, শুওরের বাচ্চা! কাল তোকে আমি হায়ার করতে গণেশ অ্যাভেনিউতে তোর অফিসে গিয়েছিলুম। ভেবেছিলুম, মোটা ফি দিয়ে তোকে কাজে লাগাব! বল, কে তোকে অ্যাপয়েন্ট করেছে? ডেভিড হারামি? না অন্য কেউ?
হালদারমশাই বললেন, ডেভিড কে আমি চিনি না, মিঃ ঘোষ!
চুপ। সত্যিকথা বল্!
কর্নেলসায়েব। বিশ্বাস করুন, কর্নেল নীলাদ্রি সরকার…
হুঁ! তা-ই বটে। বুড়ো ঘুঘুকে ফাঁদে ফেলেছি এবার। শিগগির ওর ডেডবডি দেখবি।
হালদারমশাই হাসবার চেষ্টা করে বললেন, মুশকিল করে দিল বুড়া। আমার আপত্তি নাই ঘোসায়েব। তবে কথা দিচ্ছি, বিনা ফি-তে আপনার কাম করুম। কন, কী করতে হইব?
চার্লস গ্রিয়ার্সনের কবরের ফলক কোথায় আছে জানিস?
ড্যানি ঘোষ প্রশ্নটা করেই কাল্লুকে ইশারা করল। কাল্লু আবার গোয়েন্দার গলায় ছুরি ঠেকাল। গোয়েন্দা ছটফট করে বললেন, মা কালীর দিব্যি! কী কন, কিছু বুঝি না। বুড়া আমারে কিছু কইয়া দেয় নাই। শুধু কইছিল, বাড়ির দিকে নজর রাখবা। ঘোষসায়েব, প্লিজ! বিশ্বাস করেন।
ফের চালাকি? বল, ফলক কোথায়?
মাইরি আপনার দিব্যি, আমারে বুড়া কিছু কয় নাই।
কাল্লু!
ইশারা পেয়ে কাল্লু ছুরির ডগায় একটু চাপ দিল। হালদারমশাই আর্তনাদ করলেন, গেছিরে বাবা! গেছি! গেছি!
অমনি ভেজানো দরজা খুলে গেল এবং এমার আবির্ভাব ঘটল। সে ক্রুদ্ধ। স্বরে বলল, ড্যানি! হোয়াটারায়ু ডুইং? দিস ইজ মাই লাস্ট ওয়ার্নিং, ইফ ইউ ডোন্ট স্টপ দিজ শর্টস অফ ন্যাস্টি থিংস, আই মাস্ট…..
এমা!
শাট আপ! আই অ্যাম গোয়িং টু কল দা পোলিস!
এমা! ডোন্ট ইন্টারফেয়ার!
আই মাস্ট! আই মাস্ট নট টলারেট…ইট ইজ বিয়ন্ড মাইই টলারেশন। লেট মাই সিস্টার কাম ব্যাক।
ড্যানি ঘোষ নরম হয়ে বলল, প্লিজ এমা!
নো। লেট হিম গো ফ্রি!
বাট হি উইল গো টু দা পোলিস। অ্যান্ড গেস, হোয়াট উইল হ্যাঁন।
হালদারমশাই বললেন, আমারে হায়ার করুন! আমারে হায়ার করুন। আমি ফলক উদ্ধার করিয়া দিমু! আই অ্যাম আ প্রাইভেট ডিটেকটিভ ম্যাডাম! বলে তিনি মেমসায়েবকে সেলামও ঠুকলেন।