একটা ফার্নিচার কেনার তালে আছি, মিঃ সিনহা!
আমিও। হাসিখুশি সিনহা বললেন। ভাবছি বারটা টোট্যালি রিমডেলিং করব। একটু পুরনো বনেদি চেহারা দেব। ভিক্টোরিয়ান শেপ। তাই রয়সায়েবের কাছে এসেছিলুম যদি তেমন কিছু পাই।
পেতে পারেন।
আশা দিলেন রয়সায়েব। ওক্কে চলি। বাই!
সিনহা হন্তদন্ত হয়ে চলে গেলেন। কর্নেল কার্পেট বিছানো সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠলেন। রিসেপশনিস্ট মহিলা মিষ্টি গলায় বললেন, ক্যান আই হেল্প যু, স্যার?
কর্নেল বাংলায় বললেন, রয়সায়েবের সঙ্গে দেখা করতে চাই।
হ্যাভ য়ু এনি অ্যাপয়েন্টমেন্ট, স্যার? হি ইজ নাউ ভেরি বিজি।
কর্নেল একটু হাসলেন। কিন্তু আমার যে দেখা করা জরুরি। বলে তিনি এম রয় ফলক আঁটা ঘরটির দিকে পা বাড়ালেন। রিসেপশনিস্ট মহিলা বিব্রতমুখে দাঁড়িয়ে রইলেন।
কিন্তু দরজা ঠেলতেই দেখলেন টেবিলের ওধারে রয়সায়েব এবং এধারে তার ভাগ্নে ড্যানি ঘোষ বসে আছেন। ড্যানি ঘোষ ঘুরে কর্নেলকে দেখে উঠে দাঁড়ালেন। ঘুষি পাকিয়ে বললেন, ইউ ওল্ড হ্যাগার্ড! গেট আউট! আউট!
রয়সায়েব বললেন, ঔ ড্যানি! ডোন্ট শাউট লাইক দ্যাট!
ডোঞ্চু নো হিম? হি ইজ আ ডিটেকটিভ!
সো হোয়াট? ড্যানি, ইউ গো টু ইওর চেম্বার প্লিজ!
ড্যানি ঘোষ চোখের আগুনে ঝলসে দিতে দিতে বেরিয়ে গেলেন। কর্নেল বসে বললেন, আমি ডিটেকটিভ নই, মিঃ রয়। নিছক প্রকৃতিবিদ। পাখি প্রজাপতি দেখা আমার হবি। তাই আপনার ভাগ্নের চন্দননগরের ডেরার কাছে গিয়েছিলাম। কিন্তু কেন জানি না, উনি আমাকে ডিটেকটিভ ভাবলেন! ভাববার কোনও বিশেষ কারণ আছে কি?
রয়সায়েব পাইপ ধরিয়ে বললেন, আমি ব্যস্ত। বলুন।
ইস্টার্ন সাপ-আর্বান সিমেট্রির কেয়ারটেকার গোমেশ জেভিয়রের আয়নাটা আপনারা কিনেছেন দেখলুম। গোমেশ আমাকে ওটা বেচতে চেয়েছিলেন। তো…….
তা হলে ড্যানি ইজ রাউট। আপনি ডিটেকটিভ।
আমি গোয়েন্দাগিরি করতে আসিনি মিঃ রয়। ওই আয়নাটা আমি কিনতে চাই।
নিলামের দিন কিনবেন।
প্লিজ মিঃ রয়। নিলামে দরাদরি আমার পোয় না বড্ড। বাজে লোকেদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হয়। কর্নেল নীলাদ্রি সরকার……
রয়সায়েব হাসলেন। আই নো, আই নো! দা নেম ইজ ওয়েলনোন। এবার সব স্পষ্ট হলো। প্রাইভেট ডিটেকটিভ কর্নেলসায়েবের কথা কে না জানে? ওয়েল, আসল কথাটা বলুন। আমার বাড়ি, অফিস, গোডাউন সার্চের পর পুলিশ আপনাকে পাঠিয়েছে, আমি জানি। বলুন!
গোমেশসায়েবের আয়নাটা। আমি কিনতে চাই।
আই অ্যাম আ ম্যান অব প্রিন্সি! ট্রাই ইওর লাক অ্যাট দা অকশন।
কর্নেল উঠলেন। রয়সায়েব গম্ভীর। কাগজপত্রে মন দিলেন। কর্নেল বাইরে বেরিয়ে দেখলেন, রিসেপশনিস্ট মহিলা করুণমুখে বসে আছেন। ড্যানি ঘোষ বকে দিয়েছে কি?
হলঘরে নেমে আবার আয়নাটির উদ্দেশে চললেন কর্নেল। আয়নাটি নেই। ওপর থেকে ফোনে নিচে রয়সায়েব জানিয়ে দিয়েছেন, ওটা সরিয়ে ফেলো। কর্নেল হাসতে হাসতে বেরিয়ে এলেন। রয়সায়েব ভেবেছেন কি আয়নার মধ্যে গ্রিয়ার্সনের ফলকের কোনও সূত্র লিখে রেখে গেছেন গোমেশ এবং তিনি তা ধরে ফেলবেন? অদ্ভুত মানসিকতা! তবে গোমেশ ধুর্ত লোক ছিলেন নিঃসন্দেহে। তাকে হত্যা করার মোটিভ আবছা টের পাওয়া যাচ্ছে।…….
.
দুপুরে খাওয়ার পর সুব্রতর লেখা সেই টিনি বৃত্তান্তের জেরক্স কপিটি নিয়ে বসে ছিলেন কর্নেল। বারবার পড়ছিলেন।
ভুল পা ফেলে দৈবাৎ সেখানে পৌঁছুলেই সর্বনাশ।…মেয়েটি সেই ভুল। করে বসল।
সুব্রতর এই সব কথায় কি কোনও সূত্র লুকিয়ে আছে? কী ভুল করেছিল টিনি? তার একটা স্বপ্ন ছিল। আধুনিক জীবনযাত্রার স্বপ্ন। বস্তি এলাকা ছেড়ে কোনও ফ্ল্যাটবাড়িতে উঠে যাওয়ার স্বপ্ন। সেই স্বপ্নের জন্যই কি টিনি এমন কিছু করে ফেলেছিল, যাতে মৃত্যুর সামনে গিয়ে পড়ল সে?
ঘটনার দিন সুব্রত গোমেশকে একটা চিঠি দেয়। চিঠিতে সুব্রত টিনিকে ক্রিস্টিনার কবরে তার জন্য অপেক্ষা করতে বলেছিল। তারপর সে খুন হয়ে যায়। সুব্রত পরে এসে তার ব্লাউসের ভেতর পার্সে এই লেখাটা গুঁজে রেখে যায়।
কিন্তু খুনের পর এমন হস্তাক্ষরে এমন গুছিয়ে কিছু লেখা যায় না। এটা টিনির মৃত্যুর আগেই লেখা। এখানেই সব জট পাকিয়ে যাচ্ছে। সুব্রত জানত টিনি খুন হবেই।
কী ভাবে জানতে পেরেছিল? পেরেছিল যদি, কেন বাধা দেয়নি তাকে কবরখানায় আসতে? টিনি কি তার নিষেধ শোনেনি? নাঃ, সুব্রতর চিঠিটা এই পয়েন্টটা নস্যাৎ করে দিচ্ছে। সুব্রত তাকে কবরখানায় ডেকেছিল অন্যান্য দিনের মতো।
অথচ গোমেশ চিঠিটা ছিঁড়ে ফেলেছিলেন। ছেঁড়া চিঠির টুকরো কর্নেল হাতিয়ে আনার পর তিনি উধাও হয়ে গেলেন চন্দননগরে। তারপর তাকে খুন করা হলো কবরখানার কোথাও।
গোমেশ টিনির বাড়ি গিয়েছিলেন, এও একটা পয়েন্ট।
কর্নেল চোখ বুজে দাড়ি মুঠোয় চেপে দুলতে থাকলেন। দাঁতে চুরুট কামড়ানো।
বাবামশাই!
চোখ খুলে ষষ্ঠীকে দেখতে পেলেন। তার মুখে কাঁচুমাচু হাসি। কান চুলকোচ্ছে। কর্নেল বললেন, কী রে? কিছু বলবি?
ষষ্ঠী বলল, আজকাল আমার কেন যেন বড্ড ভুলভাল হয়ে যাচ্ছে, বাবামশাই! মনে থাকছে না কিছু। নালবাজারের নাহিড়ীসায়েব……
এসেছিল অরিজিৎ?
আজ্ঞে না। নোক পাইঠেছিলেন। এই খামখানা দিয়ে গেছে। আমি…
ভুইলে গেছিস, হতভাগা! কর্নেল হাসলেন। কৈ, দে!