ঘাস ছিল বডির নিচে?
ইয়া। অরিজিৎ পাইপ বের করলেন। মর্গের রিপোর্ট অনুসারে মৃত্যু হয়েছে। রাত এগারোটা থেকে বারোটার মধ্যে। ডান কাঁধের হাড় কেটে গলা অব্দি একটা আঘাতের চিহ্ন। আরেকটা গলার পেছনে। তবে মাথাটা বডির সঙ্গে……… হাত তুলে কর্নেল দ্রুত বললেন, এনাফ ডার্লি! সত্যিই ক্র ভয়াল মৃত্যু।
অরিজিৎ পাইপে তামাক ঢুকিয়ে জোরে হাসলেন। অবজেক্টিভ ডেসক্রিপশন, কর্নেল। বুঝতে পারছি, শূন্যোদ্যানের মালী ভদ্রলোক এবার তার ফুলগুলোর মতোই কোমল হয়ে উঠেছে!
তোমার এই চমৎকার কবিত্ব সত্ত্বেও তুমি পুলিশে চাকরি করো! কর্নেল চুরুট ধরালেন লাইটার জ্বেলে। অরিজিতের পাইপেও তামাক ধরিয়ে দিলেন। অবজেক্টিভ ডেসক্রিপশন বললে! অর্থাৎ যা যেমনটি, তা তেমনটি করে বর্ণনা, ওকে। তা হলে ভোজালির আঘাত?
ইয়া! না হলে হাড় কাটত না। ভোরের দিকে ঝিরঝিরে বৃষ্টিটাই অনেক ক্লু নষ্ট করে দিয়েছে।
কর্নেল ধোঁয়ার রিং পাকানোর ব্যর্থ চেষ্টা করে বললেন, যে লোকটি ওকে বার থেকে আনতে যেত…….
গত রাতে সে যায়নি। টিনির মা বলেছেন, যুধিষ্ঠিরের সারাদিন জ্বর। টিনি তার মাকে বলে গিয়েছিল, কারও যাওয়ার দরকার নেই। সে ঠিকই চলে আসতে পারবে। কিন্তু এল না। সকাল সাড়ে সাতটায় কবরখানার কেয়ারটেকার মিঃ গোমেশ টিনির বডি দেখতে পান। তিনি থানায় খবর দেন।
যুধিষ্ঠিরের সত্যিই জ্বর হয়েছিল কি না! টিনির মা কী বলেছেন, সেটা কথা নয়।
ঠিক। তাকে অ্যারেস্ট করা হয়েছে। একদিনের জ্বর বলে নাকি ডাক্তারের কাছে যায়নি। অরিজিৎ একটু হাসলেন। আজ অবশ্য তার জ্বরটর নেই।
জেরার মুখে কিছু জানতে পেরেছ?
তেমন কিছু না। শুধু বলেছে, পাড়ার মস্তানদের কাজ। এদিকে সোকলড মস্তানগুলো পাড়া ছেড়ে বেপাত্তা। খোঁজা হচ্ছে। পেয়ে যাবখন। কিন্তু………
কর্নেল তাঁকে থামিয়ে দিয়ে বললেন, বারের মালিক কী বলছেন?
টিনি গত রাতে যায়নি বারে। তিন ঘণ্টায় ওর মজুরি ছিল মাত্র তিরিশ টাকা আর ট্যাক্সিভাড়া কুড়ি টাকা।
বাড়ি থেকে কখন বেরিয়েছিল?
পাঁচটায়। রোজই ওই সময় বেরুত সেজেগুঁজে। অরিজিৎ একটু গম্ভীর হলেন। সাধারণ মার্ডার কেস বলা যেত। কিন্তু ওই কাগজটা সব জট পাকিয়ে তুলেছে।
কর্নেল হাসলেন। কাগজটা যেন টিনির জীবনী! যেন জ্যোতিষীর কোষ্ঠীবিচার! বলে একটু নড়ে বসলেন। কাগজটাতে আঙুলের ছাপ থাকা উচিত। তোমরা…
বাধা দিলেন অরিজিৎ। উই আর নট সো ফুল, কর্নেল! ফরেনসিক ল্যাবে ছাপ তুলে রাখা হয়েছে। আমরা ওতে হাত দিইনি দেখামাত্র।
কর্নেল অট্টহাসি হাসলেন। ভৃত্য ষষ্ঠীচরণ পর্দার ফাঁকে উঁকি দিল। বাবামশাইয়ের এমন হাসি শুনলেই সে টের পায়, একটা সাংঘাতিক কিছু ঘটেছে বা ঘটতে চলেছে। পুলিশি আঁতে ঘা লেগেছে, ডার্লিং! বলে ষষ্ঠীর দিকে চোখ কটমটিয়ে তাকালেন। ষষ্ঠীচরণ অদৃশ্য হলো। কর্নেল হাঁকলেন, কফি!
অরিজিৎ কপট স্মার্টনেস দেখিয়ে বললেন, লাগবে না। আপনার কাছে যাচ্ছি শুনেই ডিপার্টমেন্টের পাকা পাকা মুখে বাঁকা হাসি ফুটেছে।
কাগজটাতে আসা করি টিনির আঙুলের ছাপ পাওয়া যায়নি?
ডি সি ডি ডি লাহিড়ীসায়েবের চোখে একটু বিস্ময় ঝিলিক দিল। যায়নি। ওটা প্ল্যান্টেড। পার্সের ভেতর কেউ ঢুকিয়ে দিয়ে গেছে।
যে ঢুকিয়েছে, আশা করি, তাকেই খুনী ভাবছ না?
ভাবছি। সেটাই তো স্বাভাবিক।
কাগজে রক্তের দাগ……মাই গুডনেস! কর্নেল হঠাৎ টেবিলে ঝুঁকে গেলেন। আতস কাচের সাহায্যে আবার কাগজটা পরীক্ষা করতে করতে বললেন, কাগজটা নিউজপ্রিন্ট। গোটানো অবস্থায় নিউজপ্রিন্ট কিনতে পাওয়া যায়। আজকাল বিয়েবাড়িতে টেবিলে লম্বা করে নিউজপ্রিন্ট বিছিয়ে দেওয়া হয় দেখেছি। তার ওপর সুখাদ্যের প্লেট। যাই হোক, নিউজপ্রিন্টে ডটপেনে লেখা। ওপরের দিকটা চমৎকার ভাঁজ করে ছেঁড়া হয়েছে। কিন্তু নিচের দিকটা টেনে ছেঁড়া। বেঁকে গেছে। রক্তের দাগ ছিল কি?
অরিজিৎ সহাস্যে বললেন, বৃদ্ধ ঘুঘু মহাশয়! আপনার খুরে খুরে দণ্ডবৎ। ইউ আর ড্যাম রাইট। ছেঁড়াটা অবশ্য ফরেনসিক ল্যাবের ডঃ মহাপাত্রের উত্তেজিত হাতের কীর্তি! আপনি তো জানেন আপনার বন্ধুকে। রক্ত দেখলেই কেমন একসাইটেড হয়ে ওঠেন। একেবারে বাঘের মতো!
ষষ্ঠীচরণ চুপচাপ কফির ট্রে রেখে গেল। কর্নেল তাকে বললেন, ছাদে কিছু ঘটেছে। দেখে আয়!
যষ্ঠী দাঁত বের করে বলল, কাকের ঝগড়া বাবামশাই! কখন থেকে শুনছি।
কর্নেল তেড়ে উঠলেন। শুনছিস আর চুপ করে আছিস হতভাগা?
ষষ্ঠী সিঁড়ির ওপর উধাও হয়ে গেল। অরিজিৎ বললেন, আপনার সেই অ্যারিজোনার ক্যাকটাসটির কী অবস্থা? ফুল ধরাতে পেরেছেন তো?
না ডার্লিং! কলকাতা বড় সাংঘাতিক হয়ে উঠেছে দিনে-দিনে। বাতাসে বিষ…….
এবং ঘাসেও রক্ত!
এবং কাগজেও!
অরিজিৎ কফিতে চুমুক দিয়ে বললেন, হু, কাগজেও। এবং সেটাই প্রবলেম। এই লেখা যে লিখেছে, আমার ধারণ সে সাহিত্যিক-টাহিত্যিক না হয়ে যায় না!
টাহিত্যিকটি কী ডার্লিং?
জাস্ট কথার কথা।
ও নো নো! কর্নেল তার টেকো মাথাটি জোরে নেড়ে বললেন, কথার কথা নয়। মনে হচ্ছে, এই কেসটিকে জটিল করে ফেলেছে ওই টাহিত্যিক জিনিসটাই। এনিওয়ে! এটার একটা জেরক্স কপি আমার চাই। আর… হুঁ, বারটির নামধাম?
মুনলাইট।
চিনি। মালিক ভদ্রলোককেও চিনি।