তার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চিহ্ন সুরকিগুড়ো–এই গির্জার সুরকিগুঁড়োর সঙ্গে মেলে না। যাজকের বেদির বাঁ দিকে একটা তাক। তাতে কয়েকখণ্ড জীর্ণ বাইবেল বই। লাতিন, ইংরেজি, হিব্রুও।
একটা বই সরাতেই পেছনে সুরকিগুঁডোর একটা রেখা আবিষ্কৃত হলো।
হুঁ, ফলকটা প্রথমে এখানে এনে রাখা হয়েছিল। তারপর?
জানলায় হঠাৎ সেই পুলিশ সাব-ইন্সপেক্টরের মাথা দেখা গেল। মুখে হাসি। বললেন, যামু স্যার? তখন কইলাম আমারে সঙ্গে লন। হ্যাঃ হাঃ হ্যাঁ। স্যার, কিছু ক্লু পাইলেন নাকি?
কর্নেল দাড়ি নেড়ে বললেন, নাঃ। ব্লু নয়, বাইবেলগুলো দেখছিলাম।
জানলা দেখি ভাঙা! খাইছে!
হ্যাঁ মরচেয় খেয়েছে আর কী!
স্যার! বেরিয়ে আসেন! কিছু বলা যায় না। ছাদের অবস্থা দ্যাখছেন না?
কর্নেল ছাদের দিকে তাকিয়ে আঁতকে ওঠার ভঙ্গি করে হন্তদন্ত হয়ে জানালা দিয়ে বেরুলেন। অফিসার অবাক হয়ে তারিফ করলেন, এই বয়সেও এমন জিমন্যাস্টিক করা যায়, তার কল্পনায় আসে না। তবে কর্নেল সায়েবের সব কথাই তার জানা। শুধু চোখের দেখাটা দেখতে বাকি ছিল। তিনি এও স্বীকার করলেন, এই পড়ো পড়ো গির্জার ভেতর প্রাণ গেলেও তিনি ঢুকতে রাজি হতেন না।
কর্নেল শুধরে দিলেন, প্রাণ নয়, চাকরি বলুন।
অফিসার বেজায় হেসে বললেন, হ, ঠিক কইছেন স্যার, চাকুরী।
কর্নেল তাকে একটি চুরুট দিলে তিনি খুব খুশি হলেন। চুরুটটি জ্বেলে দিয়ে এবং নিজেরটি ধরিয়ে কর্নেল হনহন করে পুবে রেলইয়ার্ডের দিকে চলতে থাকলেন।
ভাঙা দেয়াল ডিঙিয়ে জংলা জমি পেরিয়ে রেলইয়ার্ডের সেই পরিত্যক্ত ওয়াগনটির ভেতরে ঢুকলেন কর্নেল। একবার ঘুরে কবরখানার ভাঙা দেয়ালের ওখানে সেই পুলিশ অফিসারের মাথাটি দেখতে পেলেন। দুটি গুলি গুলি চোখও।
ওয়াগনের ভেতর সাফ করা অংশে বৃষ্টি চুঁইয়ে পড়ে কাদাটে ভাব। ঘাস ও ঝোঁপের ভেতরটা প্রজাপতি ধরা জালের স্টিক দিয়ে সরিয়েই চমকে উঠলেন। একফালি রোদ্দুর পড়েছে এখানে। সেখানে কালচে রক্তের কয়েকটা ছোপ।
জেভিয়ারের বডি এখানে এনে খুনী বা খুনীরা অপেক্ষা করছিল সম্ভবত। তারপর বডিটা নিয়ে গিয়ে রেললাইনে ফেলে দেয়।
কর্নেল বেরিয়ে এলেন ওয়াগন থেকে। বেরিয়েই পড়লেন দুজন সেন্ট্রির মুখে। তারা বন্দুক তাক করে দৌড়ে এল। কর্নেল হাসতে হাসতে আঙুল তুলে কবরখানার ভাঙা দেয়ালের ওখানে পুলিশ অফিসারকে দেখালেন। তিনি দেয়াল গলিয়ে দৌড়ে এলেন চেঁচাতে চেঁচাতে ক্যা করতা হ্যাঁয়? কা করা। হ্যাঁয়?।
সেন্ট্রিদের একজন বলল, ত আপ সি আই ডি কা আদমি হ্যাঁয়? যাইয়ে সাব। ইহাঁপর হমলোগোনে ভি ডিউটি করতা হায়।
কর্নেল এগিয়ে গিয়ে পুলিশ অফিসারকে বললেন, চলুন। ওদেরও তো ডিউটি করতে হবে।
অফিসার চাপাস্বরে বললেন, কিছু ক্লু পাইলেন স্যার?
নাঃ। একটা প্রজাপতি ঢুকেছিল। ধরতে পারলুম না। দুষ্টু প্রজাপতি!
ওই নামে একটা ফিল্ম দেখেছিলাম, স্যার! হ্যাঃ, হ্যাঃ হ্যাঃ!
বাড়ি ফিরে গিয়েই ডি সি ডি ডি অরিজিৎ লাহিড়ীকে ফোন করলেন কর্নেল। ওই উদ্ভট ব্যাপারটার অর্থ হয় না, ডার্লিং! কর্নেলের প্রথম বাক্যটি এই।
অরিজিৎ, কণ্ঠস্বরে হকচকিয়ে ওটার ভাব ছিল, উদ্ভট! কী উদ্ভট?
কবরখানায় পুলিশ মোতায়েন।
অরিজিৎ হাসছিলেন। বাপ! এমন উদ্ভট কথা নিজেই বলে আমাকে ঘাবড়ে দিচ্ছেন। এনিওয়ে, কবরখানায় পুলিশ মোতায়েন কেন আপনার চক্ষুশূল হলো? বাকি পাথর টাথরগুলো।…
অরিজিৎ! পুলিশ হঠাও!
কী আশ্চর্য! পুলিশ আমরা নিজেদের ইচ্ছেয় রাখিনি। কবরখানার মালিক প্রোটেস্ট্যান্ট চার্চ সোসাইটির কর্তৃপক্ষের অনুরোধ। তা ছাড়া, চার্লস গ্রিয়ার্সনের কবরের ফলক কবরখানাতে কোথাও লুকিয়ে রাখাও সম্ভব, আমার ডিপার্টের এক্সপার্ট ওপিনিয়ন। ডোন্ট ফরগেট কর্নেল, রয় কোম্পানিতে হানা দিয়েও তা খুঁজে পাইনি আমরা। কাজেই…….
পুলিশ হঠাও, ডার্লিং!
কী মুশকিল!
হ্যাঁ, মুশকিল। খুনী অর্থাৎ ফলকচোরের পক্ষে মুশকিল।
অরিজিৎ বিরক্ত হয়ে বললেন, আপনার হঠাৎ তাদের ওপর দয়া উথলে ওঠার কারণ?।
কর্নেল একটু হাসলেন। বেচারা এত কাণ্ড করেছে, তাকে একটু দয়া করা। অন্যায় নয়।
ওঃ! শুধু হেঁয়ালি! ডি সি ডি ডি অনিচ্ছাসত্ত্বেও হাসলেন। ব্যাপারটা বলুন তো?
পুলিশ হঠাও!
বেশ। হঠালুম। তারপর?
আশেপাশে সাদা পোশাকের গোয়েন্দা পুলিশ রাখো। দ্যাট উইল বি এনাফ। বরং আমাদের হালদারমশাইকে কাজে লাগাও।
হালদারমশাই? মাই গুডনেস! সেই কে কে হালদার?
ইয়া। হালদার প্রাইভেট ডিটেকটিভ এজেন্সির হালদারমশাই। ডোন্ট ফরগেট, উনি তোমাদের পুলিশ ডিপার্টের রিটায়ার্ড অফিসার।
আপনার মাথা খারাপ হয়ে গেল? হালদারমশাইকে এতদিন এত কাণ্ডের পরও চিনতে পারেননি? ভদ্রলোক সর্বক্ষেত্রে হিতে বিপরীত বাধিয়ে ছাড়েন। এমন একটা কেসে…..
না, ডার্লিং! ছদ্মবেশ ধরতে ওঁর জুড়ি নেই। তোমার গোয়েন্দারা ছদ্মবেশ ধরতে রাজি হবেন না। ধরো, যদি বলি, পাগলা সেজে কবরখানার আনাচে কানাচে ঘুরুন? ময়লা ন্যাকড়াকানিপরা পাগল, বিড়বিড় করে বকতে হবে ইত্যাদি।
হাঃ হাঃ হাঃ। কোনও মানে হয়? এ কি রহস্য উপন্যাস, না বাস্তব ঘটনা? ওসব রহস্য উপন্যাসে মানায়, বস্!
ঠিক আছে। আমি হালদারমশাইয়ের দায়িত্ব নিচ্ছি। তুমি পুলিশ হঠাও। চার্চ সোসাইটিকে বলো, তোমাদের পক্ষে আর একখানে দিনের পর দিন পুলিশ মোতায়েন সম্ভব নয়। এমনিতেই পুলিশ ফোর্সের অবস্থা টাইট। যাই হোক, প্লিজ ডু দ্যাট ডার্লিং!