দ্রুত পোড়ো জমিটা পেরিয়ে সংকীর্ণ রাস্তায় পৌঁছুলেন। আলোকিত অংশে এসে সাহস ফিরে পেলেন।
ইনটুইশন? হয়েতো তাই। কেন হঠাৎ তখন মনে হলো তিনি বিপন্ন? বড় রাস্তায় পৌঁছে হনহন করে হাঁটতে থাকলেন। কোনও ট্যাক্সি নেই। ডাইনে দূরে সেই কবরখানার গেটের সামনে আলো জ্বলছে। এক দঙ্গল পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে দেখতে পেলেন কর্নেল।
একটু অন্যমনস্ক হলেন। কেউ আজই শাসিয়ে গেছে টিনির মাকে। কে সে? সুব্রত? কোনও কথা জিজ্ঞেস করার সুযোগই পেলেন না। হ্যাঁ, সুব্রতর কথাই জানতে গিয়েছিলেন। কিন্তু সুব্রত…….।
পেছনে গরগর শব্দ। ঘুরেই দেখলেন, হেড লাইটহীন একটা গাড়ি তার মাত্র কয়েক গজ দূরে। এক লাফে উঁচু ফুটপাতে উঠলেন। জনহীন খাঁ খাঁ রাস্তা। প্রাইভেট গাড়িটা প্রচণ্ড জোরে এগিয়ে গিয়ে ব্রেক কষল। সঙ্গে সঙ্গে কর্নেল পকেট থেকে রিভলবার বের করে তৈরি হলেন। গাড়ির দরজা খুলে দুটি লোক বেরুল। চোখে কালো চশমা।
বাঁ দিকে একটা হাউসিং কলোনি। কর্নেল বাঁ দিকে ফুটপাতে। হঠাৎ মনে হলো, অকারণ একটা খুনোখুনি ঘটিয়ে লাভ নেই। হাউসিং কলোনির গেট দিয়ে ঢুকে পড়লেন। ছোট পার্কে কয়েকটি যুবক উজ্জ্বল আলো জ্বেলে ভলিবল খেলছে। কর্নেল খেলা দেখার ছলে একটু দাঁড়িয়ে লক্ষ্য রাখলেন। লোক দুটো তাকে ফলো করে আসেনি। কিন্তু ও পথে যাওয়া আর নিরাপদ নয়।
হাউসিং কলোনির উল্টোদিকে একটা বস্তি। এই বস্তিটা সচ্ছল অবাঙালি মুসলিমদের। বস্তিতে রিকশো পাওয়া গেল। বললেন, পার্ক সার্কাস! জলদি……
.
সিঁড়িতে দেখা হয়ে গেল অরিজিৎ লাহিড়ীর সঙ্গে। সবে নেমে আসছিলেন। কর্নেলকে দেখে থমকে দাঁড়িয়ে ভুরু কুঁচকে বললেন, আধ ঘণ্টা অপেক্ষা করে চলে যাচ্ছিলুম। বাট হাউ ফানি! আপনাকে ঝোড়ো কাক দেখাচ্ছে কেন?
কর্নেল হাসবার চেষ্টা করলেন। চলো, বলছি! আমায় সত্যিই বাহাত্তুরে ধরেছে ডার্লিং!
ষষ্ঠী দরজা খুলে দিলে বললেন, কফি! কড়া কফি! তারপর ধপাস করে বসে রুমালে মুখ মুছলেন।
অরিজিৎ বসে বললেন, ঝড়টা কিসের?
এক মিনিট। ড্যাম টায়ার্ড। আগে কফি, পরে কথা। বলে হঠাৎ অট্টহাসি হাসলেন, বোকা! আমি এক নম্বর বার্ধক্য এবার সত্যিই…ওঃ! ভাবা যায় না!
ষষ্ঠী এই হাসি শুনলেই পর্দার ফাঁকে উঁকি মারে। চোখে চোখ পড়লে কর্নেল চোখ কটমট করে বললেন, কফি!
ষষ্ঠী অদৃশ্য হলো।
অরিজিৎ কপট গাম্ভীর্যে বললেন, কফির আগেই এই পৈশাচিক হাসি। বড় গোলমেলে ব্যাপার।
কর্নেল দাড়ি খামচে ধরে বললেন, ওই কবরখানার পিশাচের সংস্পর্শে গিয়ে পড়েছিলুম, ডার্লিং! যাই হোক, আমারটা কফি খেয়ে হবে। তোমারটা শোনা যাক।
গোমেশ জেভিয়ার……
সুইসাইড করেননি।
অরিজিৎ কপট রোষে বললেন, তা হলে আমার হয়ে আপনিই বলুন, আমি শুনি।
সরি ডার্লিং! আর স্পিকটি নট। মুখ বন্ধ করলুম।
গোমেশকে মাথার পেছনে শক্ত কিছু দিয়ে আঘাত করা হয়। তারপর বডি তুলে নিয়ে রেলইয়ার্ডে ফেলে রাখা হয় লাইনের ওপর। বৃষ্টি হচ্ছিল। ড্রাইভার কিছু দেখতে পাননি। তবে এসব ক্ষেত্রে যা হয়! তার অনুমান–জাস্ট উইশফুল থিংকিং বলা যায় যে, গোমেশ ইঞ্জিনের সামনে ঝাঁপ দিয়েছিলেন। অর্থাৎ পরে তার এমনটি মনে হয়েছিল মাত্র।
কর্নেল কী প্রশ্ন করতে ঠোঁট ফাঁক করেছিলেন। কিন্তু প্রশ্নটা করলেন না।
অরিজিৎ বললেন, বৃষ্টি এবারও রক্ত ধুয়ে ফেলেছে। কবরখানা তন্নতন্ন খুঁজে রক্তের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। ওঁর ঘর, গির্জার ভেতরটা–কোথাও না।
ষষ্ঠী কফি আনল। চুপচাপ কফি খেতে থাকলেন, কর্নেল। অরিজিৎ দুবার খেয়েছেন। অতএব আর খাবেন না।
কফি শেষ করে কর্নেল চুরুট জ্বেলে ধোঁয়ার মধ্যে বললেন, আঃ!
এবার তাহলে আপনার কথা।
কর্নেল দৈনিক সত্যসেবক-সুব্রত উপাখ্যান এবং মুনলাইট অংশ বাদ দিয়ে শুধু টিনিদের বস্তিতে যাওয়ার ঘটনাটির সরস বৃত্তান্ত দিলেন। সঙ্গে প্রচুর অট্টহাসি।
অরিজিৎ মন দিয়ে শুনছিলেন। সবটা শোনার পর খুব গম্ভীর হয়ে বললেন, আপনি ঝুঁকি নিয়েছিলেন ঠিকই। তবে আমরা আর সহ্য করব না। ড্যানি ঘোষকে, তার মামা রায়সায়েবকে আর ওই ধূর্ত যুধিষ্ঠিরকে দুরমুশ করব। নো, নো! আর আপনার কথা শুনবই না।
দুরমুশ করে লাভটা কী হবে, অরিজিৎ? কোর্টে প্রমাণ করতে পারবে ওরা টিনি এবং গোমেশের হত্যাকারী অথবা হত্যার জন্য দায়ী? কী প্রমাণ তোমার হাতে আছে?
ডি সি ডি ডি ক্রুদ্ধস্বরে বললেন, আপনার ওপর হামলা করার স্পর্ধা গুঁড়িয়ে দেব।
ডার্লিং! নিজেকে রক্ষার ক্ষমতা আমার আছে। একটু ধৈর্য ধরো। কর্নেল নিভন্ত চুরুট ফের ধরিয়ে বললেন, যুধিষ্ঠিরের ওপর অকারণ চাপ দিলে কিছু হবে না।
সে গভীর জলের মাছ!
তেমন কোনও কথা কি বের করতে পেরেছ তার কাছ থেকে?
আজ এক দফা জেরার মুখে সে বলে ফেলেছে, গোমেশ টিনি হত্যার একদিন আগে টিনিদের বাড়ি গিয়েছিলেন।
ইজ ইট? কর্নেল সোজা হয়ে বসলেন।
যুধিষ্ঠির বলেছে, সে গোমেশ কে জানে না। তখনও জানত না। তবে একজন অ্যাংলোসায়েবকে সে যেতে দেখেছিল। টিনিকে তার সঙ্গে বেরিয়ে যেতেও দেখেছিল। অরিজিৎ শ্বাস ফেলে বললেন, অ্যাংলোসায়েবের চেহারার যে বর্ণনা দিয়েছে সে, তা গোমেশের সঙ্গে মিলে যায়।
কর্নেল একটু চুপ করে থাকার পর বললেন, অরিজিৎ! যথেষ্ট দেরি হয়ে গেলেও এবার বলব, টিনিদের বাড়ি তন্নতন্ন করে সার্চ করা দরকার বিশেষ করে টিনির যা কিছু আছে, সেইগুলো। আসলে……