জয়ন্তকে কি পাঞ্জাবের সন্ত্রাসবাদীদের সঙ্গে লড়তে পাঠিয়েছেন?
আপনার শাগরেদ রোজ একখানা করে সাসপেন্স থিলার টেলেক্সে পাঠাচ্ছে।
আচ্ছা মিঃ গাঙ্গুলি, আপনাদের সাংবাদিকরা তো নিউজপ্রিন্টে ডটপেনে লেখেন?
আরে, আরে! কী সর্বনাশ! হঠাৎ এসব…
প্যাডের সাইজটা কাইন্ডলি বলবেন?
কী কাণ্ড!…এক মিনিট।… হুঁ, বারো বাই আট জেনারেলি, কখনও চৌদ্দ বাই দশ।
থ্যাংকস! কর্নেল লাইন অফ করে ফোন নামিয়ে রাখলেন। তারক গাঙ্গুলি আকাশ-পাতাল হাতড়াচ্ছেন। তাকে ফোন করবেন ভেবেই কর্নেল টেবিলে ফোনটা কাত করে রাখলেন। কাগজের লোকেরাও আজকাল রহস্যের গন্ধ পেলেই হইহই বাধিয়ে ছাড়ে। খবরের কাগজে অন্ততদন্ত অধুনা হিড়িক ফেলে দিয়েছে। পাবলিক খুব খাচ্ছে।…
৩. কর্নেলের শুন্যোদ্যান থেকে
কর্নেলের শুন্যোদ্যান থেকে বাইনোকুলারে লেডি ব্র্যাবোর্ন কলেজের ওদিকে উঁচু-উঁচু দেবদারুগুলি চমৎকার দেখা যায়। দেবদারুশীর্ষে শকুনের বাসা! রোজ সকালে বাসাগুলি দেখা অভ্যাসে দাঁড়িয়েছে কর্নেলের। ষষ্ঠীকেও ব্যাপারটা দেখিয়েছেন। ষষ্ঠী বলে, ভাবগতিক ভাল ঠেকছে না বাবামশাই! বড় কুলক্ষণ। কর্নেল দাড়ি নেড়ে সায় দেন। কলকাতা ভবিষ্যতে কি ভাগাড়ে পরিণত হবে, এ তারই পূর্বাভাস? শকুনের আশ্চর্য এক ইন্দ্রিয় আছে। কোথায় মড়া প্রাণী পড়েছে, ঠিকই টের পায়। কলকাতাকে প্রধানমন্ত্রী মুমূর্য নগরী বলেছিলেন। বুদ্ধিজীবীরা তাই শুনে খাপ্পা হয়েছিলেন। কিন্তু সত্যিই কি কলকাতা ধুকছে না? সেদিন কাগজে কে শাসিয়ে লিখেছে, দেখে নিও, কলকাতা একদিন মোহেনজোদাড় হয়ে যাবে! শকুনগুলির গাছে গাছে বাসা বেঁধে বংশবৃদ্ধি সেই শাসানিরই প্রতীক কি? এদিকে একদল হুজুগে লোক কলকাতার তিনশো বছর পূর্তি উপলক্ষে উৎসবের জন্য উঠে পড়ে লেগেছে! বুড়ো থুথুড়ে এক শহর চুলে কলপ দিয়ে যুবক সেজে আছে, মুখে পেন্ট। হার্ট কমজোর, সেদিকে কারও লক্ষ্য নেই! বোকা। বোকা!…
বোকা! কী আশ্চর্য! আপনি যা বললেন, তাই করলুম। আর উল্টে বলছেন, বোকা?
কর্নেল দ্রুত ঘুরলেন। অরিজিৎ লাহিড়ীকে দেখে একটু হেসে বললেন, ও! তুমি? মর্নিং ডার্লিং!
কিন্তু বোকা বলাটা কি ঠিক হলো বসু?
কর্নেল অট্টহাসি হাসতে গিয়ে সংযত হলেন। না, না। তোমায় নোকা বলিনি!
অরিজিৎ বললেন, দিব্যি বোকা বলছে শুনতে পেলুম! এনিওয়ে, ষষ্ঠী বলে যে তার বাবামশাই আজকাল কেমন যেন হয়ে যাচ্ছেন। আপনমনে বিড়বিড়, করে কথা বলেন! কর্নেল, দিনকতক বাইরে কোথাও ঘুরে আসুন বরং!;
কর্নেল চেপে রাখা অট্টহাসিটি ছেড়ে দিলেন। তারপর বললেন, সতি, আজকাল আমার কী যেন একটা গণ্ডগোল ঘটেছে। ডার্লিং! বরাবর নিজের ইনটুইশনের গর্ব করতুম। বর্মার জঙ্গলে গেরিলাযুদ্ধের তালিম নেওয়ার পর যষ্ঠেন্দ্রিয়জাত বোধ জেগে উঠেছিল। এতদিনে তা কি নিঃসাড় হয়ে আসছে? এই যে তুমি কখন এসে দাঁড়িয়ে আছ, টের পেয়েছিলুম, ঠিকই–তবে ঐ ভেবেছিলুম তুমি নও, ষষ্ঠী! আমার আশঙ্কা অরিজিৎ, এর পর পেছনে কোন আততায়ী এসে দাঁড়ালেও…।
ডি সি ডি ডি তাকে থামিয়ে দিয়ে বললেন, প্লিজ কর্নেল! এই সাতসকালে দৌড়ে এসেছি। পরে আপনার বিষাদকাহিনী রিয়ে-তারিয়ে শুনব খন। হাতে সময় কম।
হুঁ, রাতে রয় অ্যান্ড কোম্পানিতে হানা দিয়ে কিছুই মেলেনি তো?
অরিজিৎ হাসলেন। হ্যাঁ। তবে সে কথা ফোনেই জানাতে পারতুম।
কর্নেল পাশের একটা অর্কিডের দিকে তাকিয়ে বললেন, আশা করি, তার, চেয়ে খারাপ কোনও খবর এনেছ?
ইয়া!
কর্নেল দ্রুত ঘুরে বললেন, কারও মৃত্যুসংবাদ কি?
অরিজিৎ গম্ভীর হয়ে বললেন ফের, ইয়া!
মাই গুডনেস! মিঃ গোমেশ জেভিয়ার…
হি হ্যাঁজ কমিটেড সুইসাইড। আত্মহত্যা করেছেন ভদ্রলোক। অন্তত আপাতদৃষ্টে তাই মনে হয়।
কর্নেল শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন কয়েক মুহূর্ত। তারপর একটু কেশে বললেন, কোথায়?
সিমেট্রির ওধারে রেলইয়ার্ডে ভোর ছটায় রেলপুলিশ বডি পেয়েছে। রেললাইনে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন ইঞ্জিনের সামনে!
ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন? ড্রাইভার দেখেছেন?
অরিজিৎ সিগারেট ধরিয়ে বললেন, তদন্ত সবে শুরু। তবে ওটা রেলপুলিশের ভার্সান। মর্গের রিপোর্ট না পেলে কোনও সিদ্ধান্ত করা অবশ্য উচিত নয়। কোনও সুইসাইডাল নোটও ঘরে গোমেশ রেখে যাননি।
কর্নেল দুঃখিতভাবে তার ছাদের বাগিচার দিকে একবার চোখ বুলিয়ে নিয়ে বললেন, চলল! নিচে গিয়ে বসি। কফি ডার্লিং! কড়া কফি দরকার এ মুহূর্তে।
নিচের ড্রইংরুমে বসার সঙ্গে সঙ্গে ষষ্ঠীচরণ কফি রেখে গেল। নালবাজারের নাহিড়ীসায়েব বরাবর তার কাছে রহস্যময় ব্যক্তি, তার বাবামশাইয়ের চেয়েও। সে পর্দার আড়ালে দাঁড়িয়ে ছিল। কর্নেল বললেন, পা দেখা যাচ্ছে হতভাগা। আড়ি পাততেও শিখলিনে এখনও? বোকা! বোকা!
যষ্ঠীর পা দুটো দরজার পর্দার তলা থেকে অদৃশ্য হয়ে গেল।
অরিজিতের তাড়া ছিল। সংক্ষেপে জানালেন, রয় অ্যান্ড কোম্পানির অফিস, গোডাউন, এমন কি মালিকের বাড়ি পর্যন্ত তন্ন-তন্ন খুঁজেও গ্রিয়ার্সনের কবরের দামী পাথরের ফলক মেলেনি। সমস্যা হলো, রয়সায়েব প্রভাবশালী লোক। রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে, দোস্তি আছে। অরিজিৎ একটু উদ্বিগ্ন।
অরিজিৎ কফিতে শেষ চুমুক দিয়ে বললেন, আপনার কথায় তখন মনে। হলো, গোমেশের মরার পথ তাকিয়ে ছিলেন। কারণটা বলতে আপত্তি আছে?