কর্নেল হাসলেন মাত্র। প্রসঙ্গ এড়িয়ে বললেন, তা হলে গোমেশকে কোথায় পাব, আপনি বলতে পারছেন না?
এমা মাথা নাড়লেন। হি ইজ ইন দা হেল! প্লিজ ডোন্ট টক অ্যাবাউট হিম।
তাহলে উঠি ম্যাডাম!
জাস্ট আ মিনিট কর্নেল সরকার। আই অ্যাম সরি! বলে এমা উঠে দাঁড়ালেন। এ বাড়ির একটা বনেদি কালচার আছে। অন্তত এক কাপ চা খেয়ে যান। অথবা একটা কোল্ড ড্রিংক!
ধন্যবাদ, অসংখ্য ধন্যবাদ! কর্নেল উঠে বললেন, চলি!
এই সময় ঘোষসায়েব জীর্ণ পর্দার ফাঁকে উঁকি মেরে বললেন, এমা, হনি! দ্যাটস্ এনাফ। লেট হিম গো!
ড্যানি! ডোন্ট টক ননসেন্স! হি ইজ আ জেন্টলম্যান আ রিটায়ার্ড মিলিটারি অফিসার।
সো হোয়াট?
ড্যানি ঘোষ যে ঘরে ঢুকেই মদ গিলেছেন, বোঝা যাচ্ছিল। জড়ানো গলায় কথা বলেছিলেন। পর্দা ঠেলে ঢুকে কর্নেলের দিকে চোখ কটমটিয়ে বাংলায় বললেন, দেখুন মশাই! শিকারী বেড়ালের গোঁফ দেখলেই চেনা যায়। আমি মাল চিনি। আপনি নির্ঘাত পুলিশের লোক! তবে এখানে সুবিধে হবে না। কেটে পড়ুন!
এমা তাকে ধাক্কা দিতে দিতে ভেতরে নিয়ে গেলেন। কর্নেল বারান্দায় পৌঁছেছেন, তখন তিনি ফিরে এলেন! প্লিজ, প্লিজ কর্নেল সরকার! ড্যানি একটুতেই মাতাল হয়। আপনি দয়া করে কিছু মনে করবেন না। আই অ্যাম সো সরি ফর মাই হাজব্যান্ড!
কর্নেল অমায়িক হেসে ভব্য-জনোচিত বাও করে চলে এলেন।
হঠাৎ ড্যানি ঘোষের ওসব কথা বলার কারণ কী? কর্নেল গঙ্গার ধারে সেই যে বটতলায় গিয়ে দাঁড়ালেন। নিঝুম নিরিবিলি প্রকৃতিতে পাখিদের দিনশেষের হল্লা অর্কেস্ট্রার মতো। আলোর রঙ বদলে গোলাপি হয়েছে। বাইনোকুলারে চোখ রেখে বাড়িটা খুঁটিয়ে দেখতে থাকলেন। …
নিচের একটা ঘরের জানালার পর্দা সরিয়ে দিয়ে ড্যানি ঘোষের মুখ উঁকি দিল। রুষ্ট দৃষ্টিতে তিনি সম্ভবত কর্নেলকে খুঁজছেন। প্রত্যেকটি রেখা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে বাইনোকুলারে।
তারপর এমার মুখ দেখা দেল। তাকে কিছু বোঝাতে চাইছেন। ড্যানি ঘোষ ফুঁসছেন রাগে।
কিন্তু তারপর বাইনোকুলার ঘোরাতেই দক্ষিণ-পূর্বে পাঁচিলের কোনায় ঝোঁপের কাছে কালুকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলেন। কাকে ওদিকে হাতের ইশারা করছে।
কর্নেল আগের রাস্তা ধরে এগিয়ে গেলেন। কিন্তু সেদিকে আর কাউকে দেখতে পেলেন না। কাল্লু তেমনি দাঁড়িয়ে আছে। তারপর সে বাঁদিকে ঘুরে কর্নেলকে দেখতে পেল। অমনি পাঁচিলের একটা ভাঙা অংশ ডিঙিয়ে বাইরে এল। কর্নেল থমকে দাঁড়ালেন।
জনহীন, ঝোপঝাড় গাছপালা আর ধ্বংসস্তূপের ভেতর দিয়ে জল-কাদা খানাখন্দে ভরা একটা রাস্তা কর্নেল হন্তদন্ত হয়ে চলতে শুরু করলেন। কাল্লুকে আর দেখা যাচ্ছিল না। কাল্লু কি তাকে কোনও কথা বলতেই অমন করে এগিয়ে আসছিল তাঁর দিকে?
একটা প্রকাণ্ড গাছের তলায় থকথকে কাদা। কাদা এড়িয়ে গাছের গুঁড়ির গা ঘেঁষে কর্নেল ওধারে যেতেই কাল্লুকে দেখতে পেলেন, একেবারে মুখোমুখি। তার হাতে একটা চকচকে ছুরি। মুহূর্তে কাম্পু ছুরির ডগা কর্নেলের গলায় ঠেকিয়ে হিসহিস শব্দে বলল, শালা বুড়ো খোচড়! বল, কেন এসেছিলি? আ বে শালা! তোর বাপরা ঘোষসায়েবের পোষা বেড়াল জানিস? দেব শালাকে গঙ্গায় মড়া ভাসিয়ে। বল্!
কর্নেল একটু হকচকিয়ে গিয়েছিলেন। তাঁর সেই ইনটুইশন কোথায় গেল? এ যে একেবারে অতর্কিত এবং অপ্রত্যাশিত। কাল্লুকে কী ভেবেছিলেন?
হুঁ, জীবনে এরকম দুএকটি ব্যর্থতার দৃষ্টান্ত নেই, এমন নয়। ভাগ্যিস ফলাটা সঙ্গে সঙ্গে গলায় ঢুকিয়ে দেয়নি। গঙ্গায় টেনে নিয়ে ফেলে দিলে ভেসে যেতেন মড়া হয়ে। খুনটা কোথায় হয়েছে পুলিশ টেরই পেত না। ডেভিডের কাছে যাওয়ার কথা কাউকে বলে আসেননি। অরিজিৎ লাহিড়ীর পক্ষে খেই পাওয়া অসম্ভব হতো।
বিচলিত ভাবটা তখনই কাটিয়ে উঠলেন কর্নেল। বললেন (ভয় পাওয়া ভঙ্গিতে), ভাই কাল্লু! আমাকে প্রাণে মেরো না। সব খুলে বলছি। বরং একশোটা টাকাও…।
কাল্লু ঝটপট বলল ছুরির ডগায় একটু চাপ দিয়ে, তবে আগে ঝাড় বে! মানিব্যাগ বের কর! জলদি!
কর্নেল জ্যাকেটের ভেতর পকেটে মানিব্যাগ বের করার ছলে হাত ঢোকালেন এবং বেরিয়ে এল তার রিভলবার। মুহূর্তে তার নল কাক্কুর গলায় ঠেকিয়ে সহাস্যে বললেন, মরলে দুজনেই মরি তবে!
কাল্লু ভ্যাবাচাকা খেয়েছিল। সেই সুযোগে কর্নেল হাঁটু তুলে তার পেটে গুঁতো মারলেন। কাল্লু অঁক্ শব্দে পড়ে গেল। কর্নেল একটা গামবুট তার ছুরিধরা হাতে চাপিয়ে অপরটা তার বুকে রাখলেন। কাল্লু হাঁসফাঁস করে বলল, অ্যাই বাপ! মরে যাব! আর কক্ষণও এমন করব না…মাইরি স্যার! ওই শালা ঘোষসায়েবের কথায়…মা কালীর দিব্যি…শালা ঘোসায়েব…বাবা রে!
কর্নেল ছুরিটা কুড়িয়ে নিয়ে ভাঁজ করে পকেটে ঢোকালেন। তারপর তার গেঞ্জির কলার ধরে ওঠালেন। তাকে টেনে গাছের গুঁড়ির আড়ালে এনে গুঁড়িতে ঠেসে ধরে বললেন, পাথর কোথায় পাওয়া যায়?
ঘোষসায়েব জানে স্যার! মাইরি মা কালীর দিব্যি!
রিভলবারের নল গলায় আরও চেপে কর্নেল বললেন, তখন বললি তুই ঠিকানা জানিস! ব! নইলে তোকে মড়া করে গঙ্গায় ভাসাব!
করুণ হাসল কাল্লু। মাইরি পাথর কিনবেন স্যার? তা হলে শালা ঘোষসাহেব বলল যে আপনি পুলিশের টিকটিকি!
বল! চার গুনতে গুনতে না বললেই মড়া। এক…দুই…তিন…