পট্টনায়ক বললেন, কিন্তু ছোরাটা আমার গাড়িতে রাখল কেন ও?
সুমন্ত আস্তে বলল, আপনার বাড়ি এসে থাকব ভেবেছিলুম। কর্নেলের সঙ্গে তাই আসছিলুমও। ইচ্ছে ছিল, কল্যাণীর সাহায্যে ওটা সুযোগ মতো ভারতবাবুর হোটেলে পাচার করব।
কর্নেল মৃদু হাসলেন, অ্যামবিশাস প্ল্যান! সুমন্ত পানিগ্রাহীর কাছে আজ চুলটুল কেটে খুব আশা নিয়ে গিয়েছিল, প্রথম উদ্দেশ্য : ভারতবাবুর দিকে পানিগ্রাহীকে যুক্তিগ্রাহ্য পদ্ধতিতে লেলিয়ে দেওয়া। দ্বিতীয় উদ্দেশ্য : পানিগ্রাহী যদি পিছিয়ে যান, কিংবা উল্টে ওকেই সন্দেহ করে বসেন তাহলে ব্ল্যাকমেইল।–
সবাই চমকে উঠল–ব্ল্যাকমেইল!
হ্যাঁ, তাই। পানিগ্রাহীর নার্কোটিকস পাচারের প্ল্যান ফাঁস করে দেবার শাসানি মাথায় ছিল সুমন্তর। এবং দরকার হলে খুনের সম্পূর্ণ দায় তার ঘাড়ে চাপানো হতো। সুমন্ত প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী হবে বলে ভয় দেখাতে পারত। সুমন্তর তখন তো তুঙ্গে বৃহস্পতি। নির্বোধ পানিগ্রাহীকে দিয়ে যা খুশি করার মওকা মিলেছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় প্রকৃতির সবকিছুতে, কী বস্তু কী প্রাণীজগতে একটা অদ্ভুত পদ্ধতি কাজ করছে। আমরা নিজের দাঁতেই নিজেদের কবর খুঁড়ি।
মিঃ আলি এবং একটি ছোটোখাটো পুলিসদল রেনকোট পরে ঘরে ঢুকল। আলির হাতে একটা বড় কিটব্যাগ। বললেন, ড্রাগের প্যাকেট, তন্দ্রার ব্যাগ, পার্স। সবকিছু এর মধ্যে রয়েছে। বাংলোর উত্তরে বটতলায় পাথরচাপা ছিল কিটব্যাগটা খুঁজতে অসুবিধে হয়নি। রক্তমাখা গেঞ্জি আর বেলবটম প্যান্টটাও ওখানে লুকানো ছিল।
কর্নেল একটু হেসে বললেন, সুমন্তকে ধন্যবাদ।
সুমন্ত লাফিয়ে উঠল–গেট আউট, গেট আউট, ইউ ওল্ড ফুল! সেপাইরা তক্ষুনি ওকে ধরে ফেলল। কর্নেল আস্তে আস্তে বেরিয়ে এলেন। পিছনে সুমন্তর কান্নার শব্দ শুনতে পেলেন।
বারান্দায় রেনকোট আর টুপিটা পরে বৃষ্টির মধ্যে রাস্তায় নামলেন কর্নেল।
এখন তিনি অন্য মানুষ। বিচে এসে ভয়ঙ্কর গর্জনকারী প্রাকৃতিক শক্তিটিকে বাঁয়ে রেখে জীবনমৃত্যুময় অস্তিত্বের কোলসের তলায় নিঃসঙ্গ বিষণ্ণ এক বৃদ্ধ চলেছেন উদ্দেশ্যহীনভাবে। তিনি ভাবছেন, মানুষ প্রবৃত্তির কাছে এত অসহায়! অথচ সুমন্ত কাঁদছে। সব হত্যাকারীই কাঁদে–কেউ মনের তলায় অবচেতনায়, কেউ প্রকাশ্যে। কিন্তু তাকে কাঁদতে হয়। এটাই তার অস্তিত্বের মানুষী ভাব।…